images

জাতীয়

ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা মেট্রোরেল

ওয়াজেদ হীরা

০১ জুলাই ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম

স্বপ্নের মেট্রোরেল শুধু যোগাযোগ সহজই করেনি, বিনোদনের এক উপলক্ষ হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীবাসীর ঈদ আনন্দ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে দ্রুতগতির মেট্রোরেল। সরেজমিনে ঈদের তৃতীয় দিন শনিবার (১ জুলাই) প্রচুর যাত্রী দেখা গেছে যাদের অধিকাংশই মূলত ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছেন।

রোজার ঈদে মেট্রোরেল চালু থাকলেও এবার কোরবানি ঈদের দিন বন্ধ ছিল। পরদিন শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক বন্ধ। ঈদের আগের দিন বন্ধ হওয়ার পর আজই খুলেছে মেট্রোরেল। ফলে ঈদের ছুটিতে মেট্রোরেলে যারা ভ্রমণ করতে চেয়েছেন তাদের চাপ বেড়েছে খোলার সাথে সাথেই।

ঈদের তৃতীয় দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপনে আগারগাঁও থেকে উত্তরা বা উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল ভ্রমণ করেছেন প্রচুর দর্শনার্থী। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কেটেছেন টিকিট। অনেকে ট্রেনের অভ্যন্তরে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেও স্বল্প সময়ের রেল ভ্রমণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) ইফতিখার হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের দিন এবার বন্ধ ছিল যা আমরা আগেই জানিয়েছি। ঈদের পরের দিন সাপ্তাহিক বন্ধ হিসেবে শুক্রবার পড়ে যায়। ঈদের পর আজ শনিবার চলাচল করছে এবং প্রচুর যাত্রী ভ্রমণ করছেন।

metrorailশনিবার (১ জুলাই) আগারগাঁও স্টেশনে টিকিট কাটার লম্বা লাইন দেখা যায়। কেউ উত্তরার টিকিট কাটছেন, আবার কেউ পল্লবী বা মিরপুর ১০ এর টিকিট কাটছেন।

৭ বছরের নাতনি তৃষ্ণাকে নিয়ে মেট্রোরেলের জন্য তৃতীয় তলায় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো আলী হোসেন একজন অবসর কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার মেয়ে জামাইসহ বাসায় এসেছেন। নাতনী ট্রেনে উঠবে। তাই আমি নিয়ে বের হয়েছি। এক ট্রেনে উত্তরা থেকে আসছি এখানে। সংসদ ঘুরিয়ে আবার ফিরছি। খুবই কম সময় লাগে, তবে যাত্রীর চাপ অনেক। আমাদের সাথে আসা সবাই খুব উপভোগ করেছে। শেষ বয়সে আমাদের দেশে এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা সত্যি প্রশংসনীয়।

আগারগাঁও থেকে যাত্রাপথে মেট্রোরেল যাত্রী শাহাদাত হোসাইন বলেন, আগে আমরা চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা টিএসসি এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলাম। এখন মেট্রোরেল ঘুরার একটা সুন্দর বিনোদনে পরিণত হয়েছে। কম সময়ে ঘুরে আসা যায়, নতুন অভিজ্ঞতা হয়।

আরেক যাত্রী শারমিন সুলতানা পরিবারসহ যাচ্ছেন চিড়িয়াখানায়। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমরা দুজনেই চাকরি করি। ঈদের ছুটিসহ অন্যান্য ছুটিতে পরিবার বাচ্চাদের একটু সময় দিতে পারি। দুই বাচ্চার চিড়িয়াখানা পছন্দ। মেট্রোরেলে মিরপুর ১০ এ নামবো। মেট্রোরেলও ঘুরলাম, পরে ওখান থেকে চিড়িয়াখানায় যাবো।

metrorailঈদের ৩য় দিন সকাল থেকেই অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রেও বেশ ভিড় রয়েছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছেন মানুষ। এর মধ্যে নগরবাসীর নতুন আগ্রহ মেট্রোরেলে। দল বেঁধে ছুটছেন অনেকেই। মেট্রোরেলের ভিতরে বসার স্থান পাচ্ছেন না অনেকে। তাতেও কারও বিরক্তি নেই।

শরিফুল নামের এক যাত্রী বলেন, এবার আমরা বাড়িতে না গিয়ে ঈদের আগে বাবা মাকে ঢাকায় নিয়ে আসি। দুদিন পর গ্রামে চলে যাবে। নতুন অভিজ্ঞতার জন্য মেট্রোরেলে নিয়ে আসছি। উনারা বয়স্ক তাই অনেকে দাড়িয়ে বসতে দেন। আমার মতো অনেকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। ১০-১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে কোনো সমস্যা নেই, এসি আছে। আমি দাঁড়িয়েও বেশ আনন্দ ভ্রমণ করতে পারছি।

মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা যারা এখনও নেননি, তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। যারা এর আগেও চড়েছেন এমন মানুষও মেট্রোরেলে ঘুরাঘুরি করে ঈদের সময় কাটাচ্ছেন। নতুন ভ্রমণকারীরা অনেকের বেশ উচ্ছ্বসিত। অনেকে প্ল্যাটফর্মে, ট্রেনের ভিতরে সেলফিসহ ছবি ভিডিও করতে দেখা যায়।

metrorailবৃষ্টিবিঘ্নিত দিনেও আশপাশের জেলা থেকে অনেকেই মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা নিতে আসছেন। দুপুরের দিকে উত্তরা স্টেশনে শাকিল, তানভীর, আরিফসহ ৭ বন্ধু অপেক্ষা করছিলেন উত্তরা সেন্টার স্টেশনে। তারা গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে এসেছেন। শাকিল ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেল চালু হলেও এখনো চড়া হয়নি। খবর দেখেছি, বিভিন্ন ভিডিও দেখেছি। গত ঈদে প্ল্যান করেও আর আসা হয়নি। এবার প্রথমবার মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে যাচ্ছি। আগারগাঁও নেমে বসুন্ধরা সিনেমা দেখতে যাবো। রাত না হলে আবার মেট্রোরেলের ফিরতাম।

অন্যরা বলেন, মেট্রোরেলে স্টেশনে ঢুকেই ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছিল এটা বিদেশ নাকি। দেশের একটা স্টেশন কোনো ময়লা নাই, ঝকঝকে চকচকে। লাইনে টিকিট কাটা হলো, কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। খুবই ভালো লাগছে বলে জানান তারা।

মেট্রোরেল প্রত্যেকের জীবনে এনেছে নতুন এক মাত্রা। নতুন এক অভিজ্ঞতা। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত একটু পরপরই চলাচল করছে এই ট্রেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ যাত্রীর চাপ দেখা গেছে যা বিকেলের দিকে আরও বেশি থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

এদিকে, না জেনে গতকাল শুক্রবারও প্রচুর যাত্রী মেট্রোরেলে স্টেশনগুলোতে এসে ফেরত যান। ঈদের দিন থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে কখনো একটানা, কখনো থেমে থেমে। নগরবাসী বৃষ্টির মধ্যেও ঘুরছেন মনের খোরাক মেটাতে।

ডব্লিউএইচ/এমএইচটি