খলিলুর রহমান
২৭ জুন ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম
একদিন বাদেই দেশজুড়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে ঘিরে তাই ধুমসে বেচাকেনা চলছে রাজধানীর পশুর হাটগুলোয়। তবে হাটকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকা চক্রের সদস্যরা। ইতোমধ্যেই ৫ কোটি জাল নোটও বাজারে ছেড়েছে এই চক্র। এছাড়া আরও তিন কোটি জাল নোট বাজারে ছাড়ার চেষ্টাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন এই চক্রের ৯ সদস্য।
এদিকে, ৫ কোটি জাল নোট ইতোমধ্যেই বাজারে চলে যাওয়ার খবরে রাজধানীর পশুর হাটগুলোয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে একপ্রকার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লেনদেন করার ক্ষেত্রে সবাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। সেই সঙ্গে জাল টাকা চক্রের সদস্যদের ধরতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
তবে ঈদুল আজহার আগে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের লেনদেনের কথা বিবেচনায় পশুর হাটগুলোতে ইতোমধ্যেই জাল নোট শনাক্ত করার বুথ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে তফসিলি ব্যাংকগুলো নির্দেশ মেনে প্রতিটি হাটেই জাল টাকা শনাক্তের বুথ রেখেছেন। এরপরও জাল নোট আতঙ্কে রয়েছেন অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা।মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাজধানীর আফতাবনগর হাটের বটতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে হাটে জাল টাকা শনাক্তের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সন্দেহ হলে এই বুথে এসে জাল টাকা শনাক্ত করতে মাইকিংও করা হচ্ছে। পাশাপাশি গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির মতো প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকতেও নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর এই হাটের ‘এল’ ব্লক ঘুরে দেখা গেছে, হাটে গরু নিয়ে আসা এক ব্যবসায়ী আজ তার একটি গরু বিক্রি করেছেন। ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েকজন মিলে তা গুনছেন যাতে জাল টাকায় প্রতারিত না হন।
একই দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ সংলগ্ন পশুর হাটেও। গরু বিক্রির পর ক্রেতা-বিক্রেতা লেনদেন করার সময় বারবার টাকা নেড়েচেড়ে দেখে নিচ্ছেন। আর সন্দেহ হলেই হাটের পাশে থাকা জাল টাকা শনাক্তের বুথে থাকা লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।জামালপুর থেকে হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী নজিব মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, গত রোববার সকালে ১৮টি গরু নিয়ে আফতাবনগরে এসেছি। এখন পর্যন্ত (সোমবার রাত ১টা) তিনটি গরু বিক্রি করেছি। এরমধ্যে একটি গরু ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, একটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং আরেকটি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। প্রতিটি গরুই আলাদা আলাদা ক্রেতার কাছে বিক্রি করেছি। তবে লেনদেন করার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছি।
নজিব মিয়া জানান, গরু বিক্রির পর আমরা দুই থেকে তিনজন বিক্রেতা টাকাগুলো ভালো করে চেক করি। এছাড়াও বেশি সন্দেহ হলে পুলিশের সহযোগিতা নেই। তবে এবার এখন পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতা নিতে হয়নি বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক সিরাজগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী মো. আবির হোসেনও। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে ঢাকায় গরু নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে দেখেছি ৫ কোটি জাল টাকা বাজারে এসেছে। এতে একটু আতঙ্কে আছি। এ জন্য গরু বিক্রির পর লেনদেনর সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছি।
এদিকে, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ সংলগ্ন পশুর হাটে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা জহির ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকেল পর্যন্ত এই বাজারে জাল টাকার লেনদেনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে জাল টাকা চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।শুধু রাজধানীর এই পশুর হাটই নয়, মেরাদিয়া, আফতাবনগর, হাজীবাগের পশুর হাটগুলো ঘুরেও দেখা গেছে- হাটে জাল টাকার চক্রের সদস্যদের খপ্পর থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁটানোর নানা ব্যানার-পোস্টারে লেখা রয়েছে- ‘অর্থ পরিবহনে পুলিশের মানি এস্কর্ট টিমের সহায়তা নিন।’
একই চিত্র দেখা গেছে খিলগাঁও থানা এলাকাতেও। থানার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-পোস্টার।
এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার এসআই মোজাম্মেল ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন পর্যন্ত (মঙ্গলবার বিকেল) জাল টাকার চক্র, অজ্ঞান পার্টি কিংবা মলম পার্টির খপ্পরে কারও পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে আমরা ওইসব চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এছাড়াও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক থাকার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি।বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ঢাকা মেইলকে বলেন, গত দুই মাসে বাজারে পাঁচ কোটি জাল টাকা গেছে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে আরও তিন কোটি জাল টাকা বাজারে ছাড়ার আগেই চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবি প্রধান জানান, জাল টাকার প্রতারণা থেকে বাঁচতে রাজধানীর প্রতিটি পশুর হাটে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সেই সঙ্গে জাল টাকার চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে তৎপরতাও চলমান। এছাড়াও ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও আমরা কাজ করছি।
একই কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও পশুর হাটের আশপাশে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এছাড়াও আমরা ২১টি গরুর হাটের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, জাল টাকা শনাক্তের মেশিন রাখার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি হাসিল নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্যও আমাদের পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সঙ্গে গরু ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ব্যাংকের অস্থায়ী বুথেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।এছাড়াও পশুর হাটগুলোয় জাল টাকার প্রতারণা রোধসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি তৎপর রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরাও।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা বেশকিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছি। কোরবানি পশুর হাটে যে কেনাবেচা, সেটার প্রতি বিশেষ নজরদারি রয়েছে। কারণ ইজারা পরিবর্তী চাঁদাবাজি ও জাল টাকা জড়িয়ে দেওয়ার মতো একটি বিষয় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়েও গরুকে মোটাতাজাকরণ করা হয়। এসব বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে।
কেআর/আইএইচ