মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২৭ জুন ২০২৩, ১২:১৭ পিএম
নাটোর থেকে ৩৭টি গরু নিয়ে রাজধানীর বছিলা হাটে এসেছেন ব্যাপারী আবু আহমেদ। প্রতিটি গরু সাইজে বেশ বড়। এক একটির দাম হাঁকানো হচ্ছে সাত থেকে আট লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতা আট লাখের গরুগুলো মাত্র দুই লাখ টাকা বলে চলে যাচ্ছে। গত দুই দিনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। এতে বেশ হতাশ আবু আহমেদ। বড় সাইজের গরু এনে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
আবু আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, এবার বড় গরু কেউ কিনছে না। সবাই ছোট গরু খুঁজছে। শেষ পর্যন্ত গরুগুলো বিক্রি করতে পারব কি না জানি না।
টাঙ্গাইলের সাইদুল ইসলাম বছিলা হাটে তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন। প্রতিটি গরু বড়। দাম চাচ্ছেন চার লাখ ২০ হাজার। তার দাবি, এই গরুর নিট ওজন ১৪ মণ। সব ফেলেও গোশত হবে ১০ মণ। এছাড়া অন্যান্য তো আছেই। তার হিসাবে বাজারদর ৩২ হাজার টাকা মণ ধরে তিনি এই দাম হাঁকাচ্ছেন। কিন্তু গত দুই দিনে তার গরুর দাম উঠছে মাত্র আড়াই লাখ টাকা। তার সাথে ক্রেতার দামের তফাৎ এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। সাইদুল বলছিলেন, এবার হাটে বড় গরুর চাহিদা কম। সবাই শুধু মাঝারি গরু চায়।
এই চিত্র শুধু বছিলা হাটেই নয়, পুরো ঢাকার ২১ হাটেই। ব্যাপারীরা এবার বড় গরু এনে চিন্তায় পড়েছেন। শেষ হাট পর্যন্ত এই বড় গরুগুলোর কতটি তারা বিক্রি করতে পারবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা পোহাচ্ছেন। কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ বড় হচ্ছে। হাটে আসার ট্রাক ভাড়া, থাকা, খাওয়া, বছরব্যাপী গরু পালন, সেগুলোর ব্যয় তারা কীভাবে তুলবেন সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করছে তাদের।
সাইদুল বলছিলেন, ভাই তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে গ্রামে ফিরব কী করে। আমি তো ন্যায্য দামটা চাচ্ছি, তবু ক্রেতারা গরু কিনতে চাচ্ছেন না।
করোনা মহামারির ধাক্কা এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই কমে এসেছে। আগে যারা বড় সাইজের গরু কোরবানি দিতেন তাদের অনেকে এখন সেটা দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বাজেট কমাতে হচ্ছে তাদের।
একটি প্রাইভেট ব্যাংকের বড় পদে চাকরি করেন মোকাদ্দেস আলী। প্রতি বছর বড় গরু কোরবানি করলেও এবার তিনি মাঝারি গরু খুঁজছেন। ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, এবার ছোট গরু কোরবানি দেব বলে ভাবছি। প্রতি বছর তো বড় গরু কোরবানি করা হয়। কিন্তু এবার বাজারদরের কারণে আর কুলাতে পারছি না। হাটে এসে দেখছি গরুর দামও বেশ চড়া।
বছিল হাট ঘুরে দেখা যায়, বছিলা আবাসিক এলাকার প্রতিটি অলিগলিতে গরু নিয়ে বসেছেন ব্যাপারীরা। বেশির ভাগ গরুই মাঝারি। যারা গরু কিনে বাড়িতে যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগ গরুই মাঝারি ও ছোট। প্রতিটি দাম লাখ টাকার ওপরে।
ক্রেতারা বলছেন, এবার হাটে গরুর দাম বেশি। লাখ টাকা ছাড়া ছোট গরুও মিলছে না। ফলে বাজেটে মিলছে না।
এই হাটে গতকাল সোমবার (২৬ জুন) দিনব্যাপী মাঝারি গরুই বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন কুষ্টিয়া থেকে আসা রিপন সরকার।
তার মতে, এবার বড় গরু বেশি বিক্রি হবে না। কারণ অন্যবার শুরু থেকে বড় গরু বিক্রি হয়। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। বড় গরু বিক্রি নেই।
বছিলা হাটে অবস্থান করে দেখা গেল, হাসিল আদায়কারীরা মাঝারি গরুর বেশি হাসিল কাটছেন। হাসিল ঘরের সামনে ছোট ও মাঝারি গরু ক্রেতারা বেশি আনছেন। হাটের স্বেচ্ছাসেবক টিটু জানালেন, তারা গত দুই দিন বড় গরুর হাসিল আদায় করেছেন বলে মনে নেই। তারা অনেকটা হতাশ। তার মতে, বড় গরু হলে হাসিলটা বেশি আসে। কিন্তু এবার তা হবে না হয়ত।
কিশোরগঞ্জ থেকে ‘লাল বাহাদুর’ নামে আটটি গরু নিয়ে এসেছিলেন ওবায়দুর। তিনি মাত্র তিনটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তাও দুটি বড় গরু ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। যেগুলোর দাম তিনি হাঁকিয়েছিলেন ১৮ লাখ। এত কম দাম কেন হাঁকালেন তার জবাবে তিনি বললেন, আসলে বেশি চেয়ে তো লাভ নেই। বাজার খারাপ। যত দ্রুত ছাড়া যায় তত ভালো।
ওবায়দুল ঢাকা মেইলকে বলেন, গতবার প্রথম দিনে ১০টা বড় গরু বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু এবার অবস্থা খুব খারাপ। কী যে হয়!
প্রতি বছর ঢাকার হাটগুলোতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গরু নিয়ে আসেন আহসান হাবিব। তার সাথে যখন কথা হচ্ছিল ফাঁকে ফাঁকে ক্রেতা ডাকছিলেন। কিন্তু তার বড় গরু দেখে অনেকে এসেও দাম শুনেই চলে যাচ্ছিলেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। কাকভেজা হয়েও ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে রয়েছেন। যদিও সকাল থেকে তেমন বেচাবিক্রি নেই। বিকেল নাগাদ বিক্রি জমে উঠবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
এমআইকে/জেবি