নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ জুন ২০২৩, ০২:০১ পিএম
চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) সম্পূর্ণ অর্থ সরকারকে ফেরত দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকারের নিকট হতে সেতু নির্মাণ ব্যয়ের অর্থ বিবিএ ঋণ হিসেবে নিয়েছে। এ ঋণের টাকা ধাপে ধাপে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিবে বিবিএ। এরই মাঝে সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে চারটি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। প্রথম দুটি কিস্তি বাবদ প্রায় ৩ শত ১৬ কোটি ৯১ লাখ এবং ৩য় ও ৪র্থ কিস্তি বাবদ প্রায় ৩ শত ১৬ কোটি ৩ লাখ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৬ শত ৩২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ বছরের মধ্যেই বিবিএ সম্পূর্ণ অর্থ সরকারকে ফেরত দেয়ার কথা রয়েছে।
রোববার (২৫ জুন) সেতু ভবনের সম্মেলন কক্ষে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, যারা পদ্মা সেতু নিয়ে নানান অপপ্রচার করেছে, গুজব ছড়িয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে তাদের সকল অপপ্রচার, গুজব আর ষড়যন্ত্রের বিপরীতে প্রমত্তা পদ্মার বুকচিঁড়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু। এ সেতুই তাদের ষড়যন্ত্রের যুতসই জবাব। নিন্দুকের মুখেও এখন আমরা প্রশংসা শুনতে পাই। দেশরত্ন শেখ হাসিনার অসীম সাহসই আমাদের অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। পদ্মা সেতু আমাদের এ ব্রিজ অব প্রাইড। এই জাতীয় সম্পদের ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের হতে হবে যত্নবান।
তিনি আরও বলেন, এক বছর আগে ঠিক এইদিনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার, সময়ের সাহসী নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজ শেষে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর পরদিন অর্থাৎ ২৬ জুন সকাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু করে আমাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্মোচিত হয় নবদিগন্ত। শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের মুকুট যোগ হয় আরেকটি হিরণ্ময় পালক। উদ্বোধনের পর থেকে আমাদের আর থেমে থাকতে হয়নি। নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছে সেতুটি। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, একটি সেতু কীভাবে বদলে দিতে পারে অর্থনৈতিক চালচিত্র। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সড়ক-সংযোগ। এ সেতুর মাধ্যমে মংলা, পায়রা পোর্ট, বেনাপোল স্থলবন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এখন সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী। নদীর ওপারের একসময়ের অবহেলিত জনপদ আজ দ্যুতিময়। গড়ে উঠছে ছোট-বড় শিল্প কারখানা। খুলে গেছে স্বপ্নের দ্বার এবং সম্প্রসারিত হয়েছে সম্ভাবনার দিগন্ত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আমাজানের পর পদ্মাকে বিবেচনা করা হয় মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল রিভার হিসেবে। নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপেই ছিল নানান চ্যালেঞ্জ। নদীর আচরণ দেখে শেষদিকে এসে আমাদের ডিজাইনে সামান্য পরিবর্তন আনতে হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ডাবল ডেকার পদ্মা সেতু শুধু নিছক একটি পারাপারের সেতুই নয়। এর সাথে যেমনি রয়েছে রেললাইন, তেমনি এপার থেকে ওপারে চলে গেছে গ্যাস এবং অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা ও রামপাল হতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আলাদা ৪০০ কেডিএ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন।
শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন জনগণের জন্য জনগণ এর সুফল ভোগ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে টোল প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও সেতু পারাপারে টোল প্রদান করেছেন। তিনি উদ্বোধনের দিনেই ৫৯ হাজার ৬ শত টাকা টোল প্রদান করেছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থা তাদের যানবাহনের বিপরীতে ৯১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা টোল প্রদান করেছে।
উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ধারণা জানিয়ে কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন আজ ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে। উন্নয়ন জনগণের জন্য, উন্নয়ন সমৃদ্ধির জন্য, উন্নয়ন আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের জন্য। তারই ধারাবাহিক প্রয়াসে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ, দেশের অর্থনীতি। এরই মাঝে মধুমতি নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে কালনা সেতু। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি আমদানি-রফতানি, পণ্য পরিবহন, কৃষিপণ্য ও কাঁচামাল বিপণন, শিল্পায়ন এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে। বেড়েছে পুঁজির প্রবাহ, বেড়েছে কর্মসংস্থান। শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
ডিএইচডি/এমএইচটি