images

জাতীয়

এক হাটেই ৩০ হাজার গরু বিক্রির টার্গেট

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

২৫ জুন ২০২৩, ০১:৪৩ পিএম

কোরবানির পশুর সংখ্যার দিক থেকে না হলেও আয়তনে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসে আফতাবনগরে। চলতি বছর এই হাট বসা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের হস্তক্ষেপে সমস্যা সমাধান হয়। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে ইজারাদার নির্বাচনসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। ইতিমধ্যে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে খামারি ও পাইকাররা তাদের পশু নিয়ে এসেছেন হাটটিতে। ইজারাদারের আশা, চলতি বছর ৩০ হাজারের বেশি গরু ও ছাগল বিক্রি হবে আফতাবনগর হাটে।Qurbaniঈদের আর মাত্র তিনদিন বাকি। পুরোপুরি না হলেও অনেকটা জমে উঠেছে আফতাবনগর হাটের বেচাকেনা। তবে বিক্রেতাদের আশা রোববার বিকেল থেকে পাল্টে যাবে হাটের চেহারা।

আফতাবনগর হাট রাজধানীর অন্য হাটগুলো থেকে কিছুটা ভিন্ন। গরু বা ছাগলের সারি ও মানুষের ভিড়ে অন্য হাটগুলোতে চলাচলের অবস্থা থাকে না। গরু পরিবহন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত যান সবই রাখতে হয় হাটের বাইরে। মোটরসাইকেল কিংবা সাইকেল নিয়েও হাটে ঢোকার উপায় থাকে না। এর ঠিক বিপরীত চিত্র আফতাবনগরে। দুই লেনের রাস্তার দুইপাশে চার সারিতে রাখা হয়েছে নানা আকার ও রঙের গরু-ছাগল। ফলে শুধু স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে হেটে গরু দেখা নয়, ক্রেতারা সরাসরি প্রাইভেটকার নিয়ে আসতে পারেন হাটের মধ্যে। গাড়ি থেকে নেমেই পছন্দের পশুর দরদাম করতে পারেন।Qurbaniচুয়াডাঙ্গা থেকে আসা খামারি তৈয়ব আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রায় প্রতি বছরই রাজধানীর এই হাটে গরু নিয়ে আসেন তিনি। ঘরোয়া পরিবেশে নিজের একটি ছোট খামার রয়েছে। এ বছর মাঝারি আকারের ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে একটি গরু বিক্রি হয়েছে। আশা করছেন চাঁদ রাতের মধ্যে সবকটি গরু বিক্রি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন।Qurbaniএ বছর গরুর দাম বেশি— ক্রেতাদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম তো বেশি হবেই। সবকিছুর দামই তো বেশি। ১ কেজি ভুষির দাম ৬০-৭০ টাকা, এক মণ বিচুলির দাম ৩শ টাকা। যে ভুষি ১১০০-১২০০ টাকাই কিনতাম তা এখন ২২০০ টাকারও বেশি দিয়ে কিনতে হয়। ফলে দাম তো বাড়বেই। গত বছর যে গরু ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এ বছর তা ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম।

নাটোর থেকে আসা ইউনুস মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ১০টা গরু নিয়ে এসেছি। দুইদিন হলো হাটে এসেছি, কোনোটাই বিক্রি হয়নি। আজ (রোববার) বিকেল থেকে হয়তো জমবে।Qurbaniগরুর দামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাম হাটের উপর নির্ভর করে। একেক হাটে একেক দাম। তবে দামটা কিছুটা বেশি যাবে বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ সবকিছুর মতো গরুর খাবারের দামও অনেক বেড়েছে।

কথা হলো রামপুরার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। হাট পরিস্থিতি ও গরুর দামের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজকেই কিনব এমন প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি। তবে যদি পছন্দ হয়ে যায়, দরদামে মিলে তাহলে নিয়ে নেব। আজ মূলত দামটা বুঝতে এসেছি। যা দেখলাম, লাখের নিচে মধ্যম সাইজের কোনো গরু নাই। আমাদের মতো একক কোরবানি দেওয়া বা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কোরবানিটা এবার অনেক কঠিন হয়ে গেছে।

হাটে গরুর সংখ্যা ও বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি বছর এ হাটে অন্তত ৩০ হাজার গরু বিক্রির টার্গেট থাকে। এই হাটে প্রায় ৫০-৫৫ হাজার গরু উঠে। এ বছরও সংখ্যাটি এমন বলে আশা করা হচ্ছে। অনেক গরুই চলে আসছে। দুই-একদিনের মধ্যে আরও গরু আসবে।Qurbaniআফতাবনগর হাটের হাসিলের দায়িত্বে থাকা আশিকুর রহমান সৈকত ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন পর্যন্ত কত গরু হাটে উঠেছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কেননা এখনও গরু আসছে। তবে এ বছর মোট ৫৭টি এগ্রো ফার্ম অগ্রিম জায়গা বুকিং নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩০টি চলে এসেছে। বাকি ২৭টি আজকে রাতের মধ্যেই চলে আসবে।

বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমে উঠতে শুরু করেছে। দুপুর ২টা (২৪ জুন) পর্যন্ত ৭২টা গরু বিক্রয় হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এ সময়ের মধ্যে ৪০০-৫০০ গরু বিক্রি হয়। রোববার বিকেল থেকে অনেক ক্রেতা আসবে বলে আশা করছি।

এদিকে হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাটের প্রবেশ পথ ও বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। এছাড়া জাল টাকা শনাক্ত ও আর্থিক লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল লেনদেন বুথ। এখানে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ই জাল টাকা শনাক্ত, টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারবেন।

এমএইচ/জেএম