মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২৫ জুন ২০২৩, ১০:৪৬ এএম
প্রাইভেটকার নিয়ে বছিলা হাটে এসেছেন আশরাফ আহমেদ। গাড়ি থেকে নেমেই একটি গরু দেখে বেপারীর সাথে কথা বলতে শুরু করেন। বেপারী জহির জানান, এই গরুর দাম ৫ লাখ টাকা। গরু ভালো করে দেখে আশরাফ ২ লাখ টাকা দাম বললেন। বলেই বেশ ক্ষেপে গেলেন তিনি। সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলে উঠলেন, এই গরুর দাম কি এত হয়! বড় জোর ৩ লাখ হবে।
ধানমন্ডি থেকে বছিলা হাটে এসেছেন ব্যাংকার সোয়েব আকতার। দুপুরের পর পুরো হাট ঘুরেছেন। কিন্তু পছন্দের গরু পাননি। কেন গরু পছন্দ হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বাজেট কম। সে হিসেবে গরু পাচ্ছেন না।সোয়েব আকতারের মতো পুরো পরিবার নিয়ে কলাবাগান থেকে গরু কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ। তিনিও জানালেন, পুরো বাজার ঘুরে দেখেছেন, কিন্তু বাজেটের মধ্যে গরু পাচ্ছেন না। অগত্যা দুই ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গরু ছাড়াই ফিরতে হচ্ছে।
জামাল আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, গতবার যে গরুটা কিনেছি দেড় লাখ টাকায় এবার সেটা ২ লাখের ওপরে চাচ্ছে। ভাবলাম হাট এখনো ভালো মতো জমেনি, হয়তো দাম কমে পাওয়া যাবে। কিন্তু দেখছি বাজার চড়া।
আর মাত্র তিনদিন পরই ঈদুল আজহা। বছিলা হাটও জমে উঠেছে। কিন্তু এই হাটে আসা অনেকেই বাজেটের সাথে গরুর দাম মেলাতে না পারায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাটে আসা ক্রেতাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম চড়া। যে গরু গতবার কিনেছেন দেড় লাখ টাকায়, এবার সেটি দুই লাখ হাঁকানো হচ্ছে। এত দাম শুনে অনেকে বিব্রত।বছিলা হাটের স্বেচ্ছাসেবক জামাল উদ্দিন টিটু ঢাকা মেইলকে জানান, শুক্রবার যে ২০টি গরু বিক্রি হয়েছে তার বেশিরভাগই দেড় লাখ টাকার ওপরে। সব মিলে এবার গরুর দাম চড়া। তিনি জানান, গরু আনতে বেপারীদের অনেক খরচ। ফলে এবার গরুর দাম তারা বেশি চাচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৭০টি ছোট গরু নিয়ে এসেছেন ইকবাল হাসান। সঙ্গে দুই সহকর্মী রাসেল ও বুলবুল। তারা জানান, প্রতিটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ৮০-৯০ হাজার। দামে মিললে দিয়ে দেবেন। তাদের ভাষ্য, গত বছর যে গরু তারা ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন, সেটি এবার লাখ টাকায় বিক্রি না করতে পারলে লোকসান হবে। কারণ হিসেবে জানালেন, খড়, ভুষি, খৈল ও চিটা গুড়ের দাম বেড়েছে। এসব হিসেব করে গরুর দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া থেকে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন রাহাত জান। তিনি জানান, তার প্রতিটি গরুর দাম দেড় লাখ টাকার ওপরে। কিন্তু ক্রেতারা হাঁকাচ্ছেন মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার। ৪০-৫০ টাকার ফারাক।বেপারীদের ভাষ্য, এবার সব জিনিসের সাথে ট্রাকভাড়াও বেশি। ফলে হাট পর্যন্ত গরু আনতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। সবকিছু ধরেই তারা দাম বলছেন।
এ হাটে ব্রামহা জাতের আমেরিকান গরুও মিলছে। তবে দাম অনেক।
কুষ্টিয়ার মিরপুর থানা থেকে এসেছেন শাহীন আহমেদ। তার প্রতিটি গরুর দাম ১ লাখ ৪০ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজারের মধ্যে। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন মাত্র ১ লাখ ৫ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার। তিনি বলেন, ক্রেতারা গতবার এই দরে গরু কিনেছেন। তারা সেই টার্গেটে আছেন এবারও। কিন্তু এবার দাম চড়া। বিভিন্ন কারণে বাস্তবতাও ভিন্ন।তার মতে, ক্রেতাদের বাজেটের গরু এখন না মিললেও হাটের শেষদিকে মিলবে। তবে তা সাইজে ছোট হবে।
হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট গরুর সংখ্যা একেবারেই কম। বেশিরভাগই বড় ও মাঝারি। মাঝারি গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে লাখ টাকার ওপরে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা আমজাদ হোসেন নামে এক গরুর বেপারী দাম বেশি চাওয়ার ব্যাখ্যায় বলেন, আমি এই যে গরুটা (মাঝারি একটি গরু দেখিয়ে) কিনেছি ৭০ হাজার টাকায়। ৯ মাস পুষলাম। আমার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হাটে আসছি। ট্রাক ভাড়া আছে। হাট খরচ আছে। সব মিলে একটি গরুর পেছনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ। এখন যদি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় না বিক্রি করি তাহলে কিভাবে চলব?
বেপারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্রেতা কম দামের গরু খুঁজছেন এবার।
এমআইকে/জেএম