images

লাইফস্টাইল

খাদ্যনালীর ক্যানসার: লক্ষণ, কারণ ও করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

৩১ মে ২০২৩, ০২:০৫ পিএম

বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যানসার আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন খাদ্যনালীর ক্যানসারে। খাদ্যনালীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কিছু উপসর্গ রয়েছে। তবে সেগুলো বেশ সাধারণ হওয়ায় অনেকে তা বুঝতে পারেন না। চলুন জেনে নিই এই সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-

খাদ্যনালীর ক্যানসার কী?

খাদ্যনালী হলো মানুষের মুখ থেকে পাকস্থলীর সঙ্গে সংযোগকৃত একটি ফাঁকা নল। এর প্রধান কাজ মুখগহ্বরে থাকা খাবার পাকস্থলীতে নিয়ে যাওয়া। খাদ্যনালী ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনও অজানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোষের ডিএনএতে পরিবর্তন ঘটলে কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত কোষগুলো একটি টিউমার তৈরি করে। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে শেষ পর্যন্ত অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। যা খাদ্যনালীর অভ্যন্তরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। 

cancer

বাংলাদেশে খাদ্যনালীর ক্যানসারে আক্রান্তের হার কেমন? 

বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ খাদ্যনালীর ক্যানসারে ভোগেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরে ২১ হাজার ৭৪৫ জনের মধ্যে খাদ্যনালীর ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার এবং নারী আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে সাত হাজারের কিছু বেশি। 

পুরুষদের মধ্যে আগে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকলেও বর্তমানে খাদ্যনালীর ক্যানসার শীর্ষে উঠে এসেছে। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের পরেই খাদ্যনালী ক্যানসারের অবস্থান। এছাড়া এই ক্যানসারে মৃত্যুহারও সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১৪ শতাংশের মতো।

ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিসার্চ ফান্ডের ২০১৮ সালের গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্যনালী ক্যানসারে আক্রান্তের হারে বাংলাদেশ এশিয়ায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।

cancer

খাদ্যনালী ক্যানসারের লক্ষণ 

খাদ্যনালীর ক্যানসারের কিছু সম্ভাব্য উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো খুব সাধারণ হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেন না যে ক্যানসারের কারণেই এমনটি হচ্ছে। খাদ্যনালী ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- 

খাবার গিলতে অস্বস্তি, অসুবিধা ও ব্যথা
দীর্ঘস্থায়ী তীব্র কাশি এবং রাতে শ্বাসকষ্ট 
হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস 
ঘন ঘন বদহজম বা অ্যাসিড রিফ্লেক্স
গলা শুকিয়ে যাওয়া 
বুকে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
তীব্র ক্লান্তি
বমি বমি ভাব 
খাওয়ার সময় দম বন্ধ হয়ে আসা
একটানা কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া ইত্যাদি

cancer

কী কারণে খাদ্যনালীর ক্যানসার হতে পারে?

মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার সাথে খাদ্যনালীর ক্যানসারের সংযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, আধাসেদ্ধ খাবার, তেলে ভাজা খাবার, কৃত্রিম রং ও প্রিজারভেটিভযুক্ত ভেজাল খাবার বেশি খেলে এই ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়া সব ঋতুতে সবসময় গরম পানি পানের অভ্যাস ও স্থূলতা এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

খাদ্যনালী ক্যানসারের চিকিৎসা

এই ক্যানসারের চিকিৎসা কোষের ধরণের উপর নির্ভর করে। রোগ বেশি হারে ছড়িয়ে পড়লে অনেকসময় কিছু করার থাকে না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকরা সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসাগুলো সুপারিশ করেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- 

cancer

সার্জারি

খাদ্যনালীর ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে এবং খুব বেশি ছড়িয়ে না পড়ে, তবে সার্জারির মাধ্যমে ক্যানসারের অংশ ফেলে দেওয়া হয়। এরপর বিকল্প খাদ্যনালী জোড়া দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যনালীর বিকল্প হিসেবে পাকস্থলী না হলে পরিপাকতন্ত্রের অঙ্গ ব্যবহার করা হয়। দুটি ধাপে এই সার্জারি করা হয়। প্রথমে পেটে অপারেশন, এরপর বুকে। 

ক্যানসার বেশি ছড়িয়ে পড়লে খাদ্যনালীর আশেপাশের অন্যান্য অঙ্গের কিছু অংশ যেমন পাকস্থলীর ওপরের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হতে পারে। জটিল ও সময়সাপেক্ষ হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটিই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। তবে সার্জারির জন্য ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় থাকা জরুরি। 

কেমোথেরাপি

রোগীর খাদ্যনালীর ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলার জন্য কেমোথেরাপি চিকিৎসা ব্যবহার করা হয়। সার্জারির আগে কেমোথেরাপি নিলে ক্যানসারের পরিসর কমে আসে। অন্যদিকে, সার্জারির পরে এটি নিলে অবশিষ্ট ক্যানসার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কেমোথেরাপি ক্যানসারের পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি রোধ করে। এটি সার্জারির আগে নেওয়া হবে নাকি পরে সেটা চিকিৎসকরাই নির্ধারণ করে থাকেন।

ইমিউনোথেরাপি

ইমিউনোথেরাপি (বায়োলজিক থেরাপি নামেও পরিচিত) হলো একটি নতুন ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও খাদ্যনালীর ক্যানসারের চিকিৎসা হিসেবে রেডিওথেরাপি, ফটোডায়নামিক থেরাপি দেওয়া হয়। 

food

খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর উপায়

১। স্থূলতা বা ওজন বেশি হলে সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
২। গরম পানীয় পান করার আগে একটু ঠান্ডা হতে দিন, যাতে সেটি খাদ্যনালীর ক্ষতি না করে।
৩। মদ্যপান, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, পান, গুল ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলুন।
৪। বাইরের ফাস্টফুড বা অস্বাস্থ্যকর ভেজাল খাবার এড়িয়ে চলুন। বাড়িতে বানানো স্বাস্থ্যকর খাবার বিশেষত শাক সবজি খান।
৫। বৃহদান্ত্রে পলিপ থাকলে সেটির চিকিৎসা করান।
৬। বয়স ৪৫ বছর হওয়ার পর প্রতিবছর চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

সচেতনতাই পারে, এই ক্যানসারের হাত থেকে আপনাকে বাঁচাতে। তাই ওপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

এসবিএ/এনএম