images

লাইফস্টাইল

তপ্ত শহরে চোখের শান্তি সোনালি ‘কনকচূড়া’

নিশীতা মিতু

১০ মে ২০২৩, ০৬:৩৫ পিএম

‘শহরের উষ্ণতম দিনে/ পিচগলা রোদ্দুরে/ বৃষ্টির বিশ্বাস/ তোমায় দিলাম আজ’— গানের সঙ্গে প্রাণের টান থাকলে মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের এই গান শুনে থাকবেন হয়তো। তপ্ত আবহাওয়ায় যখন গরম পুরো শহর, তখন প্রিয়জনকে বৃষ্টির আশ্বাস দেওয়া মন্দ নয়। যাইহোক, পিচগলা রোদ্দুরে এই শহরের বুকে এই সময় হাঁটতে গেলে চোখ আটকাবে পথের কিনারে থাকা এক ফুলে।

দেখতে কিছুটা কৃষ্ণচূড়া গাছের মতোই। তবে ফুলের রঙে আর গড়নে আছে ভিন্নতা। উঁচু গাছগুলো ভালো করে দেখলে হঠাৎ মনে হবে যেন সবুজ গালিচার বুকে সহস্র মোমবাতি জ্বালিয়েছে কেউ। তার আলো চোখে শান্তি দিচ্ছে। বলছিলাম কনকচূড়া ফুলের কথা।

kanakchura

কনকচূড়া ফুলের রঙ উজ্জ্বল কমলা আর সোনালির মিশেল। দূর থেকে এই ফুল দেখলে হলুদ মনে হয়। পাতা গাঢ় সবুজ। ফলের রঙ তামাটে। সবমিলিয়ে ফুল ফুটলে এই গাছের সারিকে প্রাকৃতিক ক্যানভাস মনে হয়। যে ক্যানভাসে সবুজ, হলুদ আর তামাটে রঙের আধিক্য বেশি।

গাঢ় সবুজ নিবিড় সন্নিবেশিত পাতার ওপর যখন হলুদ রঙের প্রলেপের মতো ফুলগুলোর প্রচুর প্রস্ফুটন ঘটে তখন মনে হয় রোদ ঝলমলে গ্রীষ্মের দিনে রুক্ষ-তপ্ত শহরের বুকে কেউ শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে।

kanakchura

ঝরে পড়লেও এই ফুলের সৌন্দর্য কমে না একটুও। বরং গাছের নিচের পথটিও হয়ে যায় কুসুমাস্তীর্ণ। অগণিত যানবাহনের চাকায় আর পথিকের পায়ে খুব দ্রুতই পিষ্ট হয়ে যায় ঝরা ফুলগুলো। তবুও কালো পিচঢালা পথে বিন্দু বিন্দু হলুদের ছোঁয়া সৃষ্টি করে চমৎকার এক দৃশ্যকল্প।

কনকচূড়ার সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি এর নাম নিয়ে। অনেকেই এই ফুলটিকে রাধাচূড়া নামে চেনেন। কিন্তু রাধাচূড়া গুল্ম শ্রেণির দুর্বল কাণ্ডের উদ্ভিদ। রাধাচূড়া ফুলের রকমফেরও রয়েছে। প্রস্ফুটনকাল দীর্ঘ হয়। অন্যদিকে কনকচূড়া ফুলের একটিই রং। ফোটেও নির্দিষ্ট সময়ে যার স্থায়িত্ব বেশিদিন হয় না।

kanakchura

কনকচূড়া নামটি সাহিত্যিক হলেও গাছটির আদি নিবাস আমাদের দেশে নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের নিজস্ব গাছ নয় এটি। শ্রীলঙ্কা, আন্দামান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া—এসব এলাকার প্রজাতি। যার বৈজ্ঞানিক নাম peltophorum pterocarpum। কনকচূড়া নামটি বরেণ্য নিসর্গী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার দেওয়া। নার্সারিতে গাছটি হলুদ কৃষ্ণচূড়া নামে পরিচিত।

ফুলটির জন্য কিন্তু কনকচূড়া নামটি যথার্থই বলা যায়। কনক শব্দের অর্থ স্বর্ণ বা সোনা। চূড়া অর্থ শীর্ষদেশ বা শিখর। আর এই গাছের শীর্ষে ফোটা ফুলগুলো উজ্জ্বল সোনালি রঙেরই হয়ে থাকে। কনকচূড়া গাছ ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। চারপাশে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়ে তা বেড়ে ওঠে। পাতা যৌগিক হয়। পাতার আকৃতি কৃষ্ণচূড়া গাছের মতোই হয়ে থাকে।

kanakchura

শীতের শেষভাগে এই গাছে পাতা ঝরে যায়। গ্রীষ্মে নতুন কচি পাতা আর ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গাছ। ফুলে পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। পাপড়িগুলো কুঞ্চিত অর্থাৎ কিছুটা কুঁচকানো। ফুল ফোটে শাখার ডগার লম্বা মঞ্জরিতে। প্রচুর পরিমাণে ফুল হয়। তাই দূর থেকে দেখলে সবুজের ওপর স্বর্ণালির প্রলেপের মতো দ্যুতিময় দেখায় কনকচূড়া গাছকে। ফুল সুরভিময়।

রাজধানীর হাতিরঝিল ঘেঁষে পথ চলতে গেলেই দেখা পাবেন কনকচূড়ার। জাতীয় সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের পথের ধারেও রয়েছে সরব উপস্থিতি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গরমে যখন ক্লান্ত হয়ে থাকবেন, তখন যানজটের এই শহরে হয়তো চোখের প্রশান্তি পাবেন কনকচূড়া দেখে। মুগ্ধ হবেন তার রূপে।  

এনএম