images

লাইফস্টাইল

সংসার ভাঙার দায় কার?

আসাদুজ্জামান লিমন

০৮ মার্চ ২০২২, ১১:৪১ এএম

নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন ফাইজা। পড়াশোনা শেষ করে স্বামীর আগ্রহে বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি নেন। স্বামীও কর্মজীবী। স্বামীর কর্মের খাতিরে ঢাকা ছেড়ে পাড়ি জমান বরগুনায়। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। ছিল না অভাব-অনটন। ফাইজার স্বামী হেলাল সংসারের খরচ বাঁচিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে খরচ দিতেন। পাশাপাশি ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছিলেন। 

এরই মধ্যে হঠাৎ ফাইজার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। করোনায় অকালে প্রাণ যায় স্বামীর। মাথায় যেন ছাদ ভেঙে পড়ে তার! জীবনে দেখা দেয় নতুন অশান্তি। এতদিন শ্বশুর-শাশুড়ির চোখের মনি ছিলেন ফাইজা। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে আর যেন সহ্য করতে পারছিলেন না তারা। হেলালের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় তাদের সংসারের মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বাধে বিপত্তি। ছেলে আলাদা থাকতেন। তাই তাদের ছিল আলাদা সংসার।

nari

ছেলের মৃত্যুর পর তার স্মৃতি ধরে রাখতে ছেলের জিনিসপত্র চান বাবা-মা। এদিকে ফাইজাও চান স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে। তারও যে বছর-দেড়েকের ছোট্ট একটা মেয়ে আছে। এই নিয়ে শেষ পর্যন্ত শালিসি বসে। ঠিক হয় উভয় পক্ষই হেলালের রেখে যাওয়া আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ভাগ পাবে।

হেলাল ও ফাইজার মতো খোদেজার গল্প নয়। কিন্তু খোদেজার সঙ্গে ফাইজার মিল রয়েছে। সেটা হচ্ছে জীবন সংগ্রামের। ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় খোদেজার। তখন তিনি নবম শ্রেণিতে পড়তেন। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার মনে খেদ ছিল তার। চাইছিলেন পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। গ্রাম থেকে স্বামীর হাত ধরে ঢাকা আসেন।

তার স্বামী ইসরাফিল পেশায় ব্যবসায়ী। প্রথম প্রথম ভালোই তাদের সংসার। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই খোদেজা খেয়াল করে দেখলেন তার স্বামী ঠিক মতো বাসায় ফেরে না। দুই রাত, তিন রাত পার হয়ে গেলেও বাসায় ফেরার নাম নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে সংসার পেতেছে। বহু কষ্টে সেই নারীর হাত থেকে ছুটিয়ে আনেন স্বামীকে। এজন্য কয়েক লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে খোদেজার পরিবারকে। 

nari স্বামীকে একান্তে পেলেও খোদেজার দুঃখ কাটে না। সংসারের প্রতি তার মন নেই। এদিকে তিনটা সন্তান তাদের কোল জুড়ে এসেছে। বেড়েছে খরচ। কিন্তু সংসার খরচ দেওয়ার বেলায় ইসরাফিলের ঘোর আপত্তি। তার আয় ভালোই। কিন্তু সেখান থেকে সংসার চালানোর জন্য খোদেজাকে তেমন একটা টাকা দিতে চান না। সংসারের বোঝায় পিষ্ঠ হয়ে খোদেজা বিকল্প পথ দেখেন।

এক ভাইয়ের পরামর্শে একটা এনজিও কাজ নেন। এ নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কলহ বাধে। কেননা, কাজের জন্য খোদেজা দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকতে হয়। স্বামীর প্রশ্ন বউ যদি বাইরে বাইরে থাকে তবে সংসার, সন্তান সামলাবে কে? অন্যদিকে স্ত্রীর প্রশ্ন স্বামী যখন ঠিকমতো টাকাই দেয় না তখন ঘরের বাইরে না বের হয়ে উপায় কী? এ দিয়ে তাদের সংসারে চলছে টানাপোড়েন।

ফাইজা ও খোদেজার গল্পের সঙ্গে মিল নেই কেয়ার। তবে একটা জায়গায় রয়েছে মিল। সেটা হচ্ছে সমাজের অন্তর্নিহিত কোন্দল। যার জন্য তাকে গুণতে হচ্ছে মাশুল। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে পরিবার থেকে বিয়ের তোড়জোর শুরু হয়। এদিকে স্কুল জীবন থেকেই মন দেওয়া-নেওয়া চলছিল তাহেরের সঙ্গে। পরিবার থেকে ঠিক করা পাত্রকে বিয়ে করতে নারাজ। বিয়ের আগের দিন রাতে তাহেরের হাত ধরে

nari

পালিয়ে যান কেয়া। ঢাকায় এসে ওঠেন তাহেরের চাচা-চাচির বাসায়। এদিকে কেয়ার বাবা-মা মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে থানায় মামলা করে বসেন। পুলিশ কেয়া ও তাহেরকে খুঁজে বের করে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। জেল খাটেন তাহের। ভেঙে যায় তাদের সংসার।

এভাবেই প্রতিনিয়ত নারী ও পুরুষের জীবনে ঘটনে অহরহ ঘটনা। যেসব গল্প হয়তো গণমাধ্যমে উঠে আসছে না। অজানাই থেকে যাচ্ছে। সংসার, পরিবার, কিংবা সমাজের চাপে ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক সংসার। কিংবা আলগা হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। 

এজেড/জেবি