images

লাইফস্টাইল

‘সন্তানের চোখে দেখতে পাই আমার ছোটবেলার পূজার সেই খুশি’

লাইফস্টাইল ডেস্ক

০৫ অক্টোবর ২০২২, ১০:২৩ এএম

শিউলি ফুলের ঘ্রাণ আমার বরাবর প্রিয়। কেমন যেন স্মৃতিকাতর করে দেয় এই ঘ্রাণটা। আমাদের বাড়ির পেছনে মস্ত বড় শিউলি গাছ। কোনো এক ঝড়ে গাছটি ধকল সামলাতে না পেরে কোমর বাঁকিয়ে ফেলেছিল কিন্তু তাতেও তার সন্তানধারণ ক্ষমতা বিন্দুমাত্র লোপ পায়নি। প্রতি বছর শরৎ এলেই শিউলিতলার দিকে তাকালে মনে হয় কেউ যেন এক থালা সাদা সাদা গরম ভাতের মধ্যে রান্না না করা মসুরডাল হাত ফস্কে ফেলে দিয়েছে। ছোটবেলায় যখন গাছভরা শিউলি ফুটতে দেখতাম তখনই বুঝে নিতাম পূজা আসছে। শিউলির সঙ্গে পূজার গন্ধ তখন যেন মাখামাখি করেই থাকত।  

ছোটবেলার পূজার সঙ্গে ঘাসের ওপর পড়ে থাকা শিশিরেরও একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। কখনো মনে পড়ে না কোনো পূজায় আমার বিন্দুমাত্র গরম লেগেছে। পঞ্জিকা দেখে না বুঝলেও শীত-শীত একটা আবহ, ঘাসের ওপর পড়ে থাকা শিশিরবিন্দু আমার শিশু মনে ধাক্কা দিয়ে বলে যেত ‘মা আসছেন...’। 

jhumki

মোটামুটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান আমি। অভাব কী জিনিস ছোটবেলায় কোনোদিন তা বুঝিনি। আদরে-আহ্লাদে মানুষ হওয়ায় পূজার কেনাকাটার মধ্যেও ছিল সেই ছাপ। প্রায় ছয়-সাত জন সমবয়সী বন্ধু ছিল আমার। পূজা আসার আগেই সবাই জামা-জুতো কিনে ফেলত। বাবা-মায়ের কাছে সবসময় আমার আবদার ছিল আমার জামা হতে হবে সবার চেয়ে আলাদা। অন্য কারো সঙ্গেই যেন আমার জামা মিলে না যায়।

তাই আমার জন্য কেনাকাটা হতো ষষ্ঠীর দিন। কারণ পূজা শুরুর পর জামা কেনা হলে তা অন্যের সঙ্গে মিলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একদম আনকমন ডিজাইনের জামা পরে পূজার কয়েকটা দিন রাজকন্যার মতো মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতাম আমি। 

jhumki

অষ্টমীর সকালে মায়ের সঙ্গে অঞ্জলি দিতে যেতাম। নবমীর দিন বাড়িতে রান্না করা হতো পোলাও-মাংস। দশমীতে ঠাকুর বিসর্জনের পর আমরা ছোটরা সবাই গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতাম। বিনিময়ে আশীর্বাদের সঙ্গে হাত পেতে পেতে নিতাম নারকেলের নাড়ু। বছর-বছর পূজার এমন আনন্দময় দিনগুলো জমিয়ে জমিয়ে এক সময় খেয়াল করলাম কখন যেন বড় হয়ে গেছি আমি। 

এই বড়বেলার পূজা একদম আলাদা। নতুন জামার গন্ধ এখন আর আমায় পাগল করে না, নাগরিক বাস্তবতা আমার স্মৃতি থেকেও কেড়ে নিতে চায় শিউলির গন্ধ, ঘাসের ওপর শিশির পড়লে কেমন দেখায় তাও আমি বহুদিন হলো ভুলতে বসেছি। শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা আমায় জানিয়ে দেয় পূজার আগমনবার্তা।

jhumki

পূজার সঙ্গে শীতকালের যে একটা সম্পর্ক ছিল তা হারিয়ে গেছে অনেক বছর আগেই, তীব্র গরমে ঘেমে-নেয়ে মায়ের মুখ দেখতে যাই, ঢাকের আওয়াজ, মাইকে চণ্ডীপাঠ শহুরে জীবনের পূজায় এখন আর তেমন পাই না।  

আমার সন্তান গদ্যকে আমি আমার ছোটবেলার পূজার আনন্দ ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত বছর বারান্দায় তাই লাগিয়েছি একটা শিউলি গাছ। আমাদের বাড়ির মতো এই গাছে এত শিউলি না ধরলেও একটা-দুটো শিউলি টুপটাপ ঝরে পড়ে রাতে।

jhumki

সকালে গদ্য ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে বলে, ‘মা, দেখো, শিউলি ফুটেছে, এখন শরতকাল, মা আসছেন...’। সন্তানের চোখে তখন আমি দেখতে পাই নিজেকে, দেখতে পাই আমার ছোটবেলার পূজার সেই খুশি।

লেখক: গল্পকার ও উদ্যোক্তা

এনএম