লাইফস্টাইল ডেস্ক
০৭ আগস্ট ২০২২, ০২:০৮ পিএম
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কগুলোর মধ্যে হয়তো বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেরা। একবার ভাবুন তো বন্ধু ছাড়াই একটা জীবন। ভাবতেই কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে তাই না? বন্ধুরা আমাদের সুখের সময় যেমন পাশে থাকে ঠিক তেমনভাবেই প্রকৃত বন্ধুত্বের প্রকাশ ঘটে আমাদের জীবনের সবচেয়ে হতাশার দিনে বা কষ্টের সময়গুলোতে।
আমরা মানি বা না মানি এইটাই সত্য যে চলার পথে সব বয়সেই একজন ভালো বন্ধু আমাদের জীবনে খুব প্রয়োজন। মজার বিষয় হলো শুধুমাত্র সামাজিকভাবেই নয় বরং বন্ধুত্ব যে সবার জীবনেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তা বর্তমানে বিজ্ঞানও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে আসি বন্ধুত্ব সম্পর্কে জানা অজানা কিছু তথ্য যা আপনার মুখে আবারও হাসি ফুটিয়ে তুলবে।
১. প্রাণীরাও বন্ধুত্ব করে
অনেকেই জেনে অবাক হবেন যে মানুষ বাদেও বিভিন্ন প্রাণী তাদের নিজস্ব প্রজাতি বা প্রজাতির বাইরেও বন্ধুত্ব করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায় একে অন্যের নিজস্ব প্রজাতির না হয়েও তাদের মাঝে আজীবন বন্ধুত্ব টিকে আছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে শিম্পাঞ্জি, বেবুন, ঘোড়া, হাতি বা ডলফিন তাদের নিজস্ব প্রজাতির সঙ্গে চিরকালের জন্য বন্ধু তৈরি করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তিমি একটু বেশি এগিয়ে। তারা শুধু বন্ধুত্ব করে তাই না বরং বন্ধুত্ব রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে।
২. বন্ধুত্ব তৈরি করার থেকে টিকিয়ে রাখা কঠিন
এক গবেষণায় দেখা গেছে যদি মানুষ সারাজীবনে মোট ৩৯৬ জনের মতো বন্ধু তৈরি করেন তবে টিকে থাকে মাত্র ৩৬ জন এবং ১২টির মধ্যে মাত্র ১টি বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়। আবার দেখা গেছে সেরা বন্ধু তারা নয় যারা প্রায়শই আপনার সঙ্গে দেখা করছেন। বরং তারাই আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু যারা প্রায় দেখা না করেও আপনার কথা সবচেয়ে বেশি চিন্তা করে। এই গবেষণায় আরও দেখা যায় সাধারণত পুরুষরা প্রতি পাঁচ দিনে এবং মহিলারা প্রতি তিন দিনে তাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।
৩. বন্ধুশূন্যতা মাদকাসক্তির চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
কোনো বন্ধু না থাকা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক একটি লক্ষণ। বন্ধুশূন্যতা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মাদকাসক্ত হওয়ার থেকেও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। বিজ্ঞানীদের মতে অবসর সময়ে যারা একা থাকেন তাদের থেকে অধিক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘআয়ুর অধিকারী হন যারা তাদের অবসর সময় বন্ধুদের সাথে হাসি মজা করে কাটিয়েছেন।
৪. বন্ধুত্বে বিশ্বস্ততা কমছে
মানুষ পরিবর্তন হচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই সম্পর্কেও আসছে ছন্দ পতন। আমেরিকান সোসিওলজিক্যাল রিভিউতে প্রকাশিত ২০০৪ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে বিশ্বস্ত বন্ধুর গড় সংখ্যা গত ২০ বছরে এক তৃতীয়াংশ কমেছে। এর পরিবর্তে একই সময়ে আস্থাহীন লোকের অনুপাত দ্বিগুণ হয়েছে। যা সত্যিই বন্ধু নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে আমাদের।
৫. ভালো বন্ধুত্ব সুখী পরিবার তৈরি করতে সক্ষম
বিবাহিতদের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকলে একটি পরিবার দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা সহজ হয়। জন গটম্যানের মতে, সফল বিবাহ গভীর বন্ধুত্বের ওপর নির্ভর করে। বন্ধুত্বের সম্পর্কে থেকে যদি কেউ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে একে অপরের জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস অটুট থাকে। পছন্দ ও অপছন্দ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আগে থেকেই থাকায় বিবাহ পরবর্তী সময় ভালো কাটে। গবেষণায় দেখা গেছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে যারা স্বামী-স্ত্রী হয়েছেন তারা তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে উন্নতির জন্য অধিক সময় ও শ্রম দিতে প্রস্তুত থাকে। যা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
৬. দীর্ঘায়ু পেতে বন্ধুত্ব
যখন কেউ বড় ধরনের অসুস্থতার মুখোমুখি হন, তখন ভালো সামাজিক নেটওয়ার্কে থাকা ব্যক্তিরা অন্যদের থেকে অসুস্থতা কম অনুভব করে। এটি তাদের সহজে সুস্থ হওয়ার জন্য থেরাপির মতন কাজ করে। ফ্লিন্ডার ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এজিং-এর দশ বছরের গবেষণা অনুসারে, দীর্ঘায়িত জীবনের জন্য ভালো বন্ধুদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়দের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণায় লক্ষ্য করা যায় ৭০ বছরের বেশি বয়সের মানুষ যাদের বন্ধু রয়েছে তারা সমবয়সীদের তুলনায় ২২% বেশি দিন বাঁচেন।
৭. নিজের স্বভাবের মানুষরাই একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়
ইয়েল ইউনিভার্সিটি এবং সান ডিয়েগোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণা অনুসারে দেখা গেছে ভালো বন্ধুরা প্রায়ই জিনগতভাবে একই রকম হয় এবং একই জিনের বৈচিত্র্যের ১% ভাগ শেয়ার করতে পারে। যা তাদের জেনেটিকালি আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে। তাই বলাই যায় আমাদের সেরা বন্ধুরা অনেকটা আমাদের মতো, এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক।
৮. বন্ধুরাও আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে
ধরুন আপনি প্রচুর ডায়েট করার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই সঠিক ফলাফল পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার বন্ধুদের সার্কেল পরিবর্তন করুন। কারণ আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে প্রভাবিত করে। বিশ্বাস করুন বা না করুন, যদি আপনার ক্লোজ বন্ধু একটি স্বাস্থ্যকর খাবার খায় তাহলে আপনিও তাই করবেন কিন্তু সে যদি জাঙ্ক ফুড বেশি খায়, তাহলে আপনার ওজন অবশ্যই এটি দ্বারা প্রভাবিত হবে।
৯. শিশুরাও বন্ধুত্ব বোঝে
একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হলো এমন একটি আবেগ যা শিশুরা হাঁটা বা কথা বলা শুরু করার আগেই অনুভব করা শুরু করে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে অল্পবয়সী শিশুরা হাঁটা বা কথা বলার আগে সামাজিক সম্পর্ক, বিশেষ করে বন্ধুত্ব বুঝতে পারে যা তাদের মানসিক বিকাশের একটা বড় লক্ষণ।
১০. বন্ধুত্ব শক্তিশালী করতে বন্ধুর পছন্দ-অপছন্দ জানা গুরুত্বপূর্ণ
আপনি যদি চান আপনার সঙ্গে অপর মানুষটির বন্ধুত্ব স্থায়ী হোক তাহলে অবশ্যই তার পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। বন্ধু যেটা অপছন্দ করে বা বিরক্তবোধ করে তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা উত্তম। কোন পরিস্থিতিতে আপনার বন্ধুটি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা যদি আপনি জানার জন্য গুরুত্ব না দেন তাহলে কখনোই আপনাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
বন্ধুত্ব নিয়ে এই কথাগুলো কি জানা ছিল আপনার?
লেখক পরিচয়: ফিচার লেখক
এনএম