images

লাইফস্টাইল

যেমন দেখলাম কলকাতার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও মেট্রোরেল

লাইফস্টাইল ডেস্ক

০১ আগস্ট ২০২২, ০৯:০৮ এএম

প্রথমবারের মতো কলকাতায় যাই জুলাইয়ের ১৯ তারিখে। শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন থেকে যখন নামি ঘড়ির কাটা রাত ১০টা ছুঁই ছুঁই। ট্যাক্সি ধরে হোটেল আসার পথে ভাবছি রোদ বৃষ্টিতে ভিজে ৮ ঘণ্টায় ইমিগ্রেশন, পেট্রপোলে মানি এক্সচেঞ্জ এবং কলকাতায় পৌঁছাতে আরও ৩ ঘণ্টা— সব মিলিয়ে ১১ ঘণ্টার কষ্টকর ভ্রমণ। তার ওপর এখন যদি রাস্তায় যানজটে পড়তে হয় তো ভোগান্তির শেষ থাকবে না। 

এমন সাতপাঁচ ভাবতে না ভাবতেই হোটেলে পৌঁছে যাই। আমার হোটেলের অবস্থান ছিল পার্কস্ট্রিটের সেভেন পয়েন্টে। ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুম। সকালে ঘুম থেকে ও ঠার আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। পাশে সাইকা হোটেল থেকে নাস্তা করে রওনা হলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখতে। 

kolkataপার্কস্ট্রিট থেকে এসি/নন এসি বাস চলাচল করে। মাত্র ১৫ মিনিটে আমি গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যাই। প্রতিটি সিগন্যালে কয়েক সেকেন্ড গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। আগে থেকে ডাক্তারের সিরিয়াল দেওয়া থাকায় দুপুরে রওনা হলাম রুবি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। এবার বাস পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। রাস্তায় বাসের থেকে ট্যাক্সি আর অটোর সংখ্যা বেশি। এরপরও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হাসপাতালে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। হাসপাতাল থেকে ফিরার পথে এবং পরের দিন রিপোর্ট দেখিয়ে হোটেলে আসার সময় প্রতিটি সিগন্যালে গাড়ি ১ মিনিটেরও কম সময় দাঁড়িয়ে ছিল।

কলকাতায় আসার আগে মেট্রোরেলের কথা শুনেছি। দ্রুত গণ পরিবহন কলকাতার মেট্রোরেলের ইতিহাস বেশ পুরাতন। মেট্রোরেল শহরের যানজট কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলছে। দুর্ঘটনা হ্রাস করে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নামের একটি প্রকল্পের ভূমিকার কথা বেশ কয়েকজন বললেন। শহরের অনেক গাড়িতে এই লেখাটি আমার চোখে পড়েছে।

kolkata১৯৮৪ সালে চালু হয় কলকাতা মেট্রো যা ভারতবর্ষের প্রথম মেট্রোরেল পরিষেবা। মেট্রোরেল লাইনে ভূগর্ভস্থ ও উড়াল উভয় প্রকার স্টেশন রয়েছে। প্যারিস মেট্রোর মতো কলকাতা মেট্রো স্টেশনগুলো  দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আমি শহীদ ক্ষুদিরাম স্টেশন থেকে ২৫ মিনিটে এসপ্ল্যানেড স্টেশনে আসি। এটি ধর্মতলা এলাকায় অবস্থিত। 

স্টেশনগুলো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। মেট্রোতে যাত্রীর চাপ থাকলেও হুড়োহুড়ি নেই। কয়েক মিনিট পরপর উভয় দিক থেকে ট্রেন আসছে। কিছু সময় বিরতি দিয়ে আবার ছেড়ে যাচ্ছে। দৈনিক ৩০০টি ট্রেনের মাধ্যমে ৭,০০,০০০-এর অধিক যাত্রী পরিষেবা ভোগ করছেন। রুবি হাসপাতালের সামনে থেকে মেট্রোরেল লাইন গেলেও এটি এখনো চালু হয়নি। জানতে পারলাম, কলকাতাতে মেট্রোর একাধিক সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং নতুন লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। যার মাধ্যমে যাত্রী পরিষেবা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

kolkataকলকাতার রাস্তাতে বাস পেতে বেশ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাকে। বাসে যাত্রীর ভিড় অনেক থাকে তবে যানজট খুবই কম। এছাড়া মেট্রোতে চেপে অল্প ভাড়ায় অতি দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যায়। রাস্তায় গাড়িগুলো ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা না দিয়ে নির্দিষ্ট লাইনে চলে। কোন স্টপেজে অধিক সময় ধরে গাড়ি থেমে থাকতে দেখিনি। এক লেন সার্ভিস চালু থাকায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাস্তায় একমুখী যান চলাচল করে। কিছু সমস্যা থাকলেও শহরে চলাচল করে স্বস্তি পাওয়া যাবে। 

আইনের প্রয়োগ থাকায় এখানে ট্রাফিক রুল সবাই মেনে চলে। তবে ট্যাক্সি ও অটো ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ নতুনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আছে।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএম