লাইফস্টাইল ডেস্ক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
ঋতু পরিবর্তনের সময় এলেই শুরু হয় দুশ্চিন্তা। যাদের টনসিলের ব্যথা রয়েছে তা এসময় কাহিল হয়ে পড়েন। কেবল বড়রা নয়, শিশুরাও টনসিলের সমস্যায় ভোগে। অনেক শিশু আছে যাদের মুখের দুর্গন্ধ কিছুতেই দূর করা যায় না। আবার অনেকসময় শিশুর কথা ক্রমশ অস্পষ্ট হতে দেখা যায়। এসবের কারণও হতে পারে টনসিল।
সাধারণত টনসিলের ব্যথা দুই ধরনের হয়ে থাকে। তীব্র বা অ্যাকিউট টনসিলাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস। এই শীতে টনসিলের ব্যথা সামলাবেন কীভাবে? জানুন তার উপায়-

গলায় ব্যথা বা গলা ফুলে গেলে অনেক সময়েই বলা হয়, টনসিলের কারণে এমনটা হচ্ছে। টনসিল কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারই একটি অংশ। নাক ও মুখ দিয়ে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে এটি। টনসিলে প্রচুর পরিমাণ শ্বেত রক্তকণিকা থাকে যা রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মুখগহ্বরের ভেতরের টনসিলের অংশকে চার ভাগে ভাগ করা যায়— লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এর মধ্যে কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে ‘টনসিলাইটিস’ বলা হয়।

নানা কারণে এই প্রদাহ হয়। এর নেপথ্যে থাকে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। সাধারণত ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে টনসিলের ব্যথার কারণ হলো ভাইরাস। ভাইরাল টনসিলাইটিসেই বেশি ভোগেন মানুষজন। ব্যাকটেরিয়াল টনসিলাইটিস হয় স্ট্রেপকোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার কারণে। এক্ষেত্রে যে ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাকে ‘স্ট্রেপ থ্রোট’ বলে। এই ধরনের টনসিলাইটিসের ব্যথা আরও তীব্র হয়। এই ব্যথার কারণে গলা ব্যথা, গলা বসে যাওয়া, কণ্ঠস্বরের বদল হতে পারে।
ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল টনসিলাইটিস ছোঁয়াচে। চুম্বন, একই থালা থেকে খাবার বা একই পাত্র থেকে তরল খাবার খেলে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। টনসিলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি, থুতু, লালা থেকেও জীবাণু ছড়াতে পারে। আক্রান্তের হাঁচি বা কাশি থেকে জীবাণু বায়ুবাহিত হয়ে কাছে থাকা সুস্থ ব্যক্তির শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। তাই টনসিলাইটিস হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

৫ থেকে ১৫ বছর অবধি টনসিলের ব্যথা বেশি ভোগায়। অনেক সময়ে চিকিৎসকরা বলেন, টনসিলের পাশাপাশি অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিও কেটে বাদ দিতে। অ্যাকিউট টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকসময় অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন ধরে টনসিলাইটিস থেকে গেলে তার থেকে ফাইব্রোসিস হয়ে যেতে পারে। আবার এর কারণে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। টনসিলার সেলুলাইটিসও বিপজ্জনক। তাই সময় থাকতে চিকিৎসা করানো জরুরি।

টনসিল হলে ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম একদমই খাওয়া চলবে না।
মুখের ভেতর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছোটদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বার ব্রাশ করা জরুরি।
ঈষদুষ্ণ পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে উপকার মেলে।

গলায় তীব্র ব্যথা ও জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ হলে চিকিৎসকেরা অনেকক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেন। তবে নিজে থেকে কোনো ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
রোজ রাতে শোয়ার আগে এক কাপ গরম দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়ে পান করুন। হলুদ প্রদাহনাশক। গলা ব্যথা দূর করতে এর জুড়ি মেলা ভার। হলুদ মেশানো গরম দুধ খেলে সর্দি-কাশি দূর হয়, টনসিলের ব্যথা কমে।

আধা চামচ গ্রিন টি এবং এক চামচ মধু মিনিট দশেক ফুটিয়ে নিন। দিনে বার তিনেক এই চা খান। গ্রিন টি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। এটি জীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ টনসিলে সংক্রমণ ঠেকাতে পারে।
এনএম