লাইফস্টাইল ডেস্ক
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
তাপমাত্রার পারদ বেশ নিচে। ঠান্ডায় কাঁপছে দেশবাসী। তাপমাত্রা কমলেই কিছু মানুষের হাত-পা হয়ে যায়। যতই গরম পোশাক গায়ে জড়ানো হোক কিংবা হাত মোজা, পা মোজা পরা হোক তা কিছুতেই গরম হয় না। বিষয়টিকে বেশিরভাগ মানুষ পাত্তা দেন না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা।
চিকিৎসকদের মতে, এই সমস্যাকে একদমই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং মোজা পরার পরও হাত-পা ঠান্ডা থাকে অনেকসময় গুরুতর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে বার বার এমন হলে বা মোজা পরেও পা ঠান্ডা থাকলে, সতর্ক হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। কোলেস্টেরল সেই সব নীরব ঘাতকের মধ্যে একটি যা নিঃশব্দে প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে। কোলেস্টেরল বাড়লে, একই সঙ্গে বাড়তে থাকে হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিও। হাই কোলেস্টেরলের কারণে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। সেই কারণে পা ঠান্ডা হয়ে থাকে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ বা PAD নামে পরিচিত।
PAD-এর কারণে পায়ের ধমনীতে প্লাক বা চর্বি জমা হয়। ফলে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হয়। আর রক্ত প্রবাহ না হলেই পা ঠান্ডা হয়ে যায়। রক্ত সঞ্চালন ঠিক করে না হলে, পায়ের সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক করে হয় না। পায়ের টিস্যু প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না। ফলে হাঁটার সময় পায়ে ব্যথা হয়, পা অবশ হয়ে আসে বা দুর্বল লাগে।

পায়ে নিয়মিত ঝিঁঝিঁ ধরলে বা অবশ হয়ে গেলে, অবহেলা করবেন না। নাহয় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি গ্যাংগ্রিনের ঝুঁকিও তৈরি হয়। ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল সবই PAD-এর প্রধান ঝুঁকির কারণ।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ কোটির বেশি মানুষ এই রোগের শিকার। যদিও তাদের বেশির ভাগের বয়স ৪০-এর বেশি। এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যায় ঝুঁকিও। নিয়মিত অতিরিক্ত ধূমপান বা তামাক সেবন করলে, ডায়াবেটিসে থাকলে এই রোগ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, ওবেসিটি থাকলে বা স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও বেশি। দীর্ঘ দিনের মানসিক চাপ বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসেরও প্রভাব থাকে এক্ষেত্রে।
PAD হলে অবহেলা না করে, আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মেনে চলা উচিত। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, সবার আগে তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করুন। নিয়মিত হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম করুন। এতে দেহের রক্তসঞ্চালন উন্নত হয়। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। কম তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খান। কাঁচা চিনি, কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। পায়ে ক্ষত বা রঙের পরিবর্তন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিয়মিত খান।
সময়মতো যত্ন নিলে PAD-এর জটিলতা অনেকটাই এড়ানো যায়। তাই ভয় না পেয়ে সচেতন হোন।
এনএম