images

লাইফস্টাইল

জন্ম নিয়েই শিশু কাঁদে কেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৩ পিএম

জন্ম নিয়েই শিশু কেঁদে ওঠে। আর ছোট্ট শিশুর কান্নার আওয়াজ পেলেই চিকিৎসক আর পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেন নবজাতক কাঁদে? এটি কি সাধারণ বিষয় নাকি এর পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?

জন্ম নিয়েই কিন্তু শিশু হাসে না। কেবল কাঁদে। অনেকসময়ই মা-বাবা ভয় পান, শিশু এত কাঁদছে কেন? মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে প্রথম বাইরের আলো-বাতাসের সংস্পর্শে আসামাত্র শিশুর শরীর ও মস্তিষ্কে নানা বদল ঘটতে থাকে। আর এসব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হয় কেবল একটি অভিব্যক্তিতেই— সেটি হলো কান্না। 

2100715_wide

বরং শিশু যদি জন্মের পর না কাঁদে তাহলেই মুশকিল। এক্ষেত্রে নানারকম জটিল ও স্নায়বিক রোগের আশঙ্কা করেন চিকিৎসকরা। 

জন্মের পর ‘কান্না’ ভালো কেন? 

জন্মের পর প্রথম কান্নার অর্থ হলো শিশুর শ্বাস নেওয়া। শুনতে অবাক লাগলেও এ কথা সত্য। আসলে মাতৃগর্ভে শিশুর ফুসফুস যখন তৈরি হতে শুরু করে, তখন তার মধ্যে ‘অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড’ জমা হয়। এই তরলের কাজ হলো পেশি, ফুসফুস-সহ শিশুর নানা অঙ্গের বিকাশ ঘটানো, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা।

শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস চলেই এই তরলের মাধ্যমেই। শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে এটি। পাশাপাশি বাইরের আঘাত থেকেও বাঁচায়। 

GettyImages-149616776-cd1ee620972443858048e34cc1d03a1d

জন্মের পরে ফুসফুস পুনর্গঠনের পর্যায়ে এই তরলটি ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়। শিশু যখন কাঁদে, তখন এই তরল ফুসফুস থেকে বের হয় এবং প্রথম বার বাইরের অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস শিশুর ফুসফুসে প্রবেশ করে। এছাড়া বাইরের বাতাস ঢুকে ফুসফুস প্রসারিত হয়, বায়ুথলিগুলো খুলতে থাকে, ফলে সামান্য অস্বস্তিও হয় শরীরে। এই কারণেও শিশু কাঁদতে থাকে।

দ্বিতীয় কারণ হলো, শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন ও হৃৎস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রিত হয় কান্নার মাধ্যমে। শিশু যখন জন্মের পর কেঁদে ওঠে, তখন তা সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।

তৃতীয় কারণ হলো, কান্না শিশুর পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে, যা তাকে প্রথমবার মাতৃদুগ্ধ পানের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

newborn-baby-first-cry-healthcare-hope-12345

মগজে কান্না-হাসির জটিল খেলা

শিশু জন্মেই কেন কাঁদে, তার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মস্তিষ্কের গঠন। কান্না, হাসির মতো আবেগ মস্তিষ্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু নবজাতকের মস্তিষ্কের সার্বিক বিকাশ ধীরে ধীরে হয়, তাই আবেগগুলোর প্রকাশও একে একে হতে থাকে। সহজ করে বললে, কান্না নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের নীচের অংশ বা ব্রেনস্টেম এবং অ্যামিগডালা। জন্মের পরে এই দুটো অংশ বিকশিত থাকে, ফলে কান্নার অভিব্যক্তিরই প্রকাশ পায় প্রথমে।

হাসি কিংবা অন্যান্য সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলো তৈরি হয় মস্তিষ্কের ওপরের অংশ সেরিব্রাল কর্টেক্সে। ওই অংশটির সম্পূর্ণ বিকাশ ধীরে ধীরে হয়। শিশু যত বাইরের পরিবেশকে চিনতে থাকে, চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে, মুখচেনা শুরু হয়, ততই ওই অংশের গঠন সম্পূর্ণ হতে থাকে। সাধারণত দেখা যায়, জন্মের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অর্থাৎ, দেড় থেকে দু’মাস পর শিশু হাসতে শুরু করে।

whats-in-a-smile

শিশুর হাসিরও আবার ধরন আছে। এই যেমন, জন্মের পরে ঘুমের মধ্যে শিশুকে হাসতে দেখা যায়। একে ‘রিফ্লেক্স স্মাইল’ বলে। পেশির সংকোচন ও প্রসারণের কারণে এটি হয়। আরেক ধরনের হাসি হলো ‘সোশ্যাল স্মাইল’। শিশু যখন মানুষজনকে চিনতে পারে এবং কোনো কথা বা আওয়াজ শুনে হেসে ওঠে তখন তাকে সোশ্যাল স্মাইল বলে। এই হাসির প্রকাশ ঘটে অনেক পরে। হাসির সময়ে মুখের পেশি কীভাবে নড়বে, হাসির আওয়াজ কেমন হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স অঞ্চল। সেই অংশটির বিকাশ অনেক পরে হয়।

জন্মের পর যদি শিশু না কাঁদে 

শিশু যদি জন্মের পর পরই না কেঁদে ওঠে, তাহলে চিন্তার কারণ আছে। চিকিৎসকদের মতে, এটি ‘পেরিনাটাল অ্যাসফিক্সিয়া’-র লক্ষণ হতে পারে। এতে শিশুর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছায় না। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, খিঁচুনি হয় এবং জীবন বিপন্ন হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা করানো না হলে, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয়ে ‘হাইপক্সিক-ইস্কেমিক এনসেফেলোপ্যাথি’ হতে পারে শিশুর। যে কারণে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। 

shutterstock_771459493-scaled

এছাড়া সেরিব্রাল পলসি, মৃগী, বধিরতা, অন্ধত্ব, কথা বলার সমস্যা, জটিল স্নায়বিক রোগও দেখা দিতে পারে।

এনএম