images

লাইফস্টাইল

শীতে শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে কোন খাবার জরুরি? জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ এএম

শীতের অস্তিত্ব আমরা সবার আগে অনুভব করি ত্বকে। ত্বকে একটা শুষ্ক টানটান অনুভূতি হলেই আমরা বুঝে যাই শীত বুঝি এই এলো বলে। শুধু ত্বকেই নয় শীতকালে শরীর অতিরিক্ত শুষ্ক অনুভব করা বা পানিশূন্যতায় ভোগা একটা চিরচারিত ব্যাপার কিন্তু ব্যাপারটাকে হালকা ভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। খাদ্যাভ্যাসের যথাযথ সচেতনতাই পারে তীব্র শীতেও আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে।

শীতকালে পানিশূন্যতা হয় কেন? 

গ্রীষ্ম প্রধান দেশে শীত আসলেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি কারণ আরামদায়ক দিন এবং কম ঘাম হওয়া। কিন্তু এরমাঝেই লুকিয়ে আছে একটি নীরব স্বাস্থ্যঝুঁকি। সেটা হলো পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। শীতে পানির তৃষ্ণা কম হয় বলে পানি খাওয়ার পরিমাণ ও কমে যায় পাশাপাশি ঘাম কম হয় বলে আমরা বুঝতে পারি না যে ঘাম ছাড়াও আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, শুষ্ক বাতাসে ত্বক ও শ্বাসনালির মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। 

পাশাপাশি জ্বর, সর্দি-কাশি বা ভাইরাল সংক্রমণে পানির অতিরিক্ত চাহিদাও তৈরি হয়। ফলে আমাদের অজান্তেই শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়।  

veg

শীতে পানিশূন্যতা কমাতে কী খাবেন? 

যেহেতু শীতে আমাদের পিপাসা কম তৈরি হয় তাই শুধু পানি পান করে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব না হলেও খাবারের মধ্যে শরীরকে হাইড্রেট রাখা সম্ভব। শীতকালে অন্যান্য ঋতুর তুলনায় সবুজ শাকসবজির সমারোহ বেশি দেখা যায়, 

এসময় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন লাউ, ঝিঙা, পুঁইশাক, পালংশাক। এই জাতীয় শাকসবজিগুলোতে ৮৫-৯৫% পর্যন্ত পানি থাকে যা শরীরে হাইড্রেশনের পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেল সংগ্রহ করে এবং খাবার হজমেও সাহায্য করে। একইসঙ্গে এই ধরনের শাকসবজিগুলো যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ বা ডায়েটে আছেন তাদের জন্যও খুবই ভালো। এছাড়াও ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীরাও এই খাবারগুলোর সুফল ভোগ করতে পারবেন। 

তবে কিডনিতে পাথর বা কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পালংশাক ও পুঁইশাক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবেন নয়তো নিজস্ব ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খুবই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাবেন। কারণ এতে অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকে যা শরীরের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে। 

fruits

শাকসবজির পাশাপাশি শীতকালে অনেক মৌসুমি ফল পাওয়া যায় যার ভেতর আমরা কমলা, আপেল, মাল্টা, পেয়ারা এগুলোকে বেছে নিতে পারি। এইসব ফল আমাদের দেহে পানির চাহিদা পূরণের সাথে ভিটামিন ও বিশেষ করে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রদান করে থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। কিন্তু এই ফলগুলোও কিডনি এবং ডায়াবেটিস রোগীদের সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি এবং পটাশিয়াম থাকে সেক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থতায় ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মেপে গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে। 

এসব খাবারের পাশাপাশি অনেকেই শীতকালে উষ্ণতার জন্য অতিরিক্ত চা, কফি পান করে থাকেন যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে পানিশূন্যতা বাড়িয়ে দেয়। অ্যাসিডিটি তৈরি করে এবং নিদ্রাহীনতা বাড়ায়। 

তাই সাময়িক উষ্ণতা পেলেও তা পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হয়। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং গর্ভবতী নারীদের যথাসম্ভব ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা উচিত। 

soup

শরীরে উষ্ণতার জন্য তরল খাবার হিসেবে বিভিন্ন সবজি বা ডালের স্যুপ, গরম দুধ, মুরগি বা মাছের ঝোল খাবারের তালিকায় রাখাটা ভালো। তবে এই খাবারগুলো কিডনি, হৃদরোগ এবং উচ্চরক্তচাপের রোগীদের পরিমিত আকারে এবং নিয়ম মেনে তৈরি করে খেতে হবে। অতিরিক্ত লবণযুক্ত স্যুপ, প্যাকেট জাত স্যুপ ও অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত দুধ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

শীতকালে খাবারের তালিকায় এসব শাকসবজি ফলমূল রাখার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পরপর তৃষ্ণা না পেলেও পানি পান করুন। গরম তরল খাবারকে অগ্রাধিকার দিন। প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত হলুদ, লাল বা কমলা আকার ধারণ করলে সচেতন হোন কারণ তা বেশিরভাগক্ষেত্রেই পানিশূন্যতার লক্ষণ। 

অতিরিক্ত অস্বাভাবিকতায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শীতকাল মানেই পানি কম খেলেও চলবে এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য পানি অপরিহার্য। ঋতু যাই হোক না কেন। খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত গোসলও শীতকালে শরীরকে হাইড্রেট রাখতে অপরিহার্য। তাই শীতেও সঠিক যত্ন, সচেতন খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত তরল গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।

লেখক: পুষ্টিবিদ ও জনস্বাস্থ্য গবেষক, বিএসসি ইন নিউট্রিশন (ঢাবি), এমপিএইচ (এনএসইউ), শিক্ষা ও গবেষণা স্নাতোকত্তোর (লাইফ সাইন্স) ইউনিভার্সিটি প্যারিস সি'তে, ফ্রান্স

এনএম