images

লাইফস্টাইল

যৌন হয়রানি যেন নারীর নিত্যসঙ্গী!

লাইফস্টাইল ডেস্ক

০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম

বাংলাদেশের নারী আজ সংসারের দেয়াল পেরিয়ে সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তারা শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাংকার, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা প্রায় সবখানেই সমান তালে কাজ করছেন। কিন্তু এক কঠিন বাস্তবতা রয়ে গেছে— ঘরের বাইরের পৃথিবীতে নারীরা কতটা নিরাপদ?

এই প্রশ্ন যত পুরনো, তার উত্তর আজও অনিশ্চিত। চলন্ত শহরের অন্যতম ভয়— গণপরিবহনে প্রতিদিন হাজারো নারী যাতায়াত করেন, কিন্তু অনেকের যাত্রা শেষ হয় মানসিক আঘাত নিয়ে। জন্ম নেয় এক বিভীষিকা। 

২০১৮ সালের ব্র্যাকের এক জরিপে উঠে এসেছে— ঢাকার প্রায় ৯৪ শতাংশ নারী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অবাঞ্ছিত শারীরিক স্পর্শ, পাশের যাত্রীর অনাকাঙ্ক্ষিত সংস্পর্শ, অশালীন মন্তব্য— সবকিছুই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে রাস্তায়। 

HR_DR_11_27

সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, কিছু নারী সাহস করে প্রতিবাদ করলেও আশপাশের মানুষ সাধারণত চুপ থাকে, আবার কোথাও কোথাও উল্টো নারীকেই দোষারোপ করা হয়। এই নীরবতা অপরাধীদের আরও সাহসী করে তোলে।

অফিসেও নিরাপত্তাহীনতা: 

কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান যত শক্তিশালী হোক, তাদের সম্মান এখনও অনিশ্চিত। বস বা সহকর্মী সবাই সুযোগ নিতে চায়। বাংলাদেশ শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬৭ শতাংশ নারী কর্মী জীবনকালে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই নীরব থেকেছেন চাকরি হারানোর ভয়ে, সমাজের চোখে অপমানের আশঙ্কায় কিংবা ‘এটা তেমন কিছু নয়’ এই ভুল ধারণায়। দৃষ্টির আঘাতও সহিংসতা।

Sexual-Harassment-and-The-Workplace

রাস্তা, বাজার, পার্ক এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীর উপস্থিতিকে ঘিরে থাকে অশালীন দৃষ্টির আঘাত। হাতে ধরা যথাযথ প্রমাণ না থাকলেও, এই দৃষ্টিগুলো নারীর মনে ভয়ের বীজ বপন করে। চোখের দৃষ্টিতেই যেন ধর্ষিত হয় নারী। 

নারীর হাসি, পোশাক বা উপস্থিতি নিয়ে কটু মন্তব্যের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে এখনও প্রবল। এগুলো নারী অবমাননার সূক্ষ্ম রূপ, যা সময়ের সাথে বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। আইন আছে, প্রয়োগ নেই। 

বাংলাদেশে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০৯ সালের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিচারের বিলম্ব, সামাজিক চাপ এবং সাক্ষীর অভাবে অধিকাংশ অভিযোগ নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে।

ফলে অপরাধীরা বেকায়দায় পড়ে না, বরং ভুক্তভোগীই হয় অপরাধী। সামাজিকতার ভয়ে নারীর নীরবতাই আমাদের সামষ্টিক পরাজয়।

sad-6810774_1280-1-1024x661

সমাধানের পথ কী? 

পরিবারের দায়িত্ব: ছেলেদের ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে— নারী কোনো বস্তু নয়, মানুষ। সম্মান শেখা মানে মানুষ হওয়া।

গণপরিবহনে প্রযুক্তি ব্যবহার: সিসিটিভি, জিপিএস ট্র্যাকিং এবং নারীবান্ধব যানবাহন বৃদ্ধি জরুরি।

অফিসে কমিটি সক্রিয় করা: যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে সক্রিয় করতে হবে।

Sexual-Harassment-at-Work-–-When-To-Talk-to-HR-and-When-To-Call-a-Lawyer

দ্রুত বিচার প্রতিষ্ঠা: যেকোনো হয়রানি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া আবশ্যক।

মিডিয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিজ্ঞাপন, নাটক ও পাঠ্যবইয়ে নারীর মর্যাদা মানবিকভাবে উপস্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।

শেষকথা, রাতের শহরে একাকী হাঁটার সময় একজন নারী যখন ভয় পায়, মা মেয়েকে বলে—'চাদরটা ঠিক করে নিস, বাইরে যাচ্ছিস'— সেই societal অবস্থা বুঝিয়ে দেয় আমরা এখনো নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি।

আমরা শুধু ভয় সহ্য করা শিখেছি। নারীর নিরাপত্তা কোনো নারী-পুরুষের দ্বন্দ্ব নয়, এটা মানবতার প্রশ্ন, সমাজের বিবেকের পরীক্ষা। যেদিন নারীরা রাস্তায় নির্ভয়ে হাঁটবেন, সেদিনই আমরা সত্যিকারের সভ্য হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারব।

লেখক: উদ্যোক্তা, শিল্পপুরাণ

এনএম