লাইফস্টাইল ডেস্ক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম
আগে কারো বাসায় গেলে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হতো, ‘কেমন আছেন?’ আর এখন জিজ্ঞেস করে ‘ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডটা কী?’— ঠাট্টা করে এমন কথা বললেও বাস্তবতা একই তথ্য দেয়। ওয়াইফাই রাউটার ছাড়া বর্তমানে এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পেতে প্রায়ই আমরা ২৪ ঘণ্টাই রাউটার চালিয়ে রাখি।
অনেকের আশঙ্কা, রাউটার থেকে অনবরত যে রেডিয়েশন বা তরঙ্গ বের হয় তা মানবদেহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায় এই রেডিয়েশন। আসলেই কি তাই? রাউটার রেডিয়েশন কি সত্যিই ক্যানসারের কারণ হতে পারে?

ওয়াইফাই রাউটারগুলো মূলত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) তরঙ্গ ব্যবহার করে কাজ করে, যা এক ধরনের নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন (Non-ionizing Radiation)।
এই রেডিয়েশনের শক্তি অত্যন্ত কম। এটি এমন ধরনের রেডিয়েশন যা ডিএনএ-এর রাসায়নিক বন্ধন ভাঙতে পারে না এবং কোষের ক্ষতি করতে পারে না। মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা এফএম রেডিও যেমন তরঙ্গ ব্যবহার করে, এটিও একই ধরনের তরঙ্গ ব্যবহার করে।

উচ্চ-শক্তির আয়োনাইজিং রেডিয়েশন (যেমন এক্স-রে বা গামা রশ্মি) শরীরের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ওয়াইফাই-এর রেডিয়েশন সেই শ্রেণীর নয়। তাই বলা যায়, ওয়াইফাই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) ওয়াইফাই রেডিয়েশন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছে। তারা আইএআরসি রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্রগুলোকে গ্রুপ ২বি (Group 2B)-এর অধীনে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। অর্থাৎ এটি সম্ভাব্যভাবে মানুষের জন্য কার্সিনোজেনিক হতে পারে। তবে, এই একই শ্রেণীতে আচার (Pickled Vegetables) এবং অ্যালোভেরা (Aloe Vera) নির্যাসকেও রাখা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর বর্তমান বৈজ্ঞানিক ঐকমত্য হলো, সাধারণ আবাসিক পরিবেশে এবং নির্দিষ্ট পাওয়ার লেভেলে ওয়াইফাই রাউটার থেকে নির্গত রেডিয়েশনের মাত্রা এত কম থাকে যে তা সুপ্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেডিয়েশনের তীব্রতা দ্রুত দূরত্ব অনুযায়ী কমে যায়।
অনেকেই মাথাব্যথা, ক্লান্তি বা ঘুমের সমস্যার জন্য ওয়াইফাইকে দায়ী করেন। বিষয়টিকে কখনো কখনো ইলেক্ট্রোসেনসিটিভিটি (Electrosensitivity) বলা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ওয়াইফাই সিগন্যালের সঙ্গে এই লক্ষণগুলোর কোনো নিশ্চিত সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকক্ষেত্রে মানসিক চাপ বা অন্যান্য পরিবেশগত কারণে এমনটা হতে পারে।

যদিও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম, তবুও এক্সপোজার বা সংস্পর্শের মাত্রা কমাতে কিছু সহজ অভ্যাস কাজে লাগাতে পারেন-
দূরত্ব বজায় রাখুন: রাউটারটিকে শোবার ঘর থেকে দূরে রাখুন এবং কাজের সময় শরীর থেকে কিছুটা দূরত্বে রাখুন।
রাতে বন্ধ রাখুন: যদি রাতের বেলা ইন্টারনেটের প্রয়োজন না হয়, তবে রাউটারটি বন্ধ করে রাখতে পারেন। এটি কেবল রেডিয়েশন কমাবে না, বরং ভালো ঘুমের জন্যও সাহায্য করবে।

তারযুক্ত সংযোগ (Wired Connection): সম্ভব হলে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের জন্য ইথারনেট (Ethernet) তার ব্যবহার করুন।
ওয়াইফাই রাউটার থেকে যে রেডিয়েশন নির্গত হয়, তা অত্যন্ত কম-শক্তির। বর্তমান বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে এটি প্রমাণিত যে, ২৪ ঘণ্টা রাউটার চালিয়ে রাখলে তা সরাসরি ক্যানসার বা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়। তবে সতর্কতার জন্য রাতে বন্ধ রাখতে পারেন বা দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন।
এনএম