images

লাইফস্টাইল

নারীরা এত অস্থির কেন? কারণ জানলে অবাক হবেন!

নিশীতা মিতু

০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

‘নারীর মন বোঝা দায়’—জীবনে বহুবার এ কথা হয় বলেছেন না হয় শুনেছেন। নারীকে নিয়ে গবেষণা, আলোচনা, সাহিত্য চর্চা কিংবা কৌতুকের কোনো কমতি নেই। তবু তাকে চিনতে ব্যর্থ পুরুষ। তাইতো অভিমানী, ছলনাময়ী, মমতাময়ীর মতো শব্দগুলো নারীদের জন্যই বরাদ্ধ। নারীকে বুঝতে গেলে হোঁচট খায় পুরুষ। এই সে হাসে, এই অভিমানে গাল ফুলায়। এই ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে আবার পরক্ষণেই ঘৃণায় ভাসায়। 

স্বাভাবিকভাবেই তাই বলা হয়, নারী জাতি বড্ড অস্থির। এদের মন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। এই কথা কিন্তু খুব একটা ভুল নয়। নারীরা আসলেই অস্থির আর এই অস্থিরতার কলকাঠি নাড়ে তার শরীরের হরমোন সিস্টেম। তাই নারীকে ছলনাময়ী না বলে হরমোনকে দোষ আপনি দিতেই পারেন। কীভাবে এটি নারীর মন নিয়ন্ত্রণ করে? চলুন ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক- 

women-2

একজন নারীর মেজাজ, ঘুম, পিরিয়ড, স্ট্রেস, হজম, যৌনজীবন, আত্মবিশ্বাস, এমনকি তার কথাবার্তার কোমলতা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। এসবের মূল ভিত্তি হলো তার ইমোশনাল সেফটি। যা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ- অর্থাৎ প্রেমিক, স্বামী বা অন্য কোনো প্রিয় মানুষের আচরণে। 

নারীদের শরীর প্রকৃতিগতভাবে খুব সংবেদনশীল। তাদের হরমোনগুলো প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হতে থাকে। পুরুষদের হরমোন স্থির হয়। কিন্তু নারীদের ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, অক্সিটোসিন, কর্টিসল হরমোন সারাক্ষণ ওঠানামা করে। স্বাভাবিকভাবেই তাই নারীদের মনের অবস্থাও বার বার পরিবর্তন হতে থাকে। আর তাই নারীরা অস্থির প্রকৃতির হন। 

Woman_mood_changes

কাছের মানুষগুলোর প্রতিটি কথা, আচরণ, রূঢ়তা কিংবা মমতা একজন নারীর হরমোনে অবিশ্বাস্য প্রভাব ফেলে। এই যেমন, যখন একজন পুরুষ একজন নারীকে গভীরভাবে সম্মান দেয়, কথা বলার সময় নমনীয় আচরণ করে, তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দেয়— তখন নারীর দেহের অক্সিটোসিন হরমোন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি কেবল পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করে না, মন আর শরীরকেও ভেতর থেকে শান্ত করে। 

এই শান্ত অবস্থা একজন নারীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ অবস্থা ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, থাইরয়েড, ইনসুলিন সবকিছুকে সুন্দরভাবে ব্যালান্স করে রাখে। ফলে পিরিয়ড রেগুলার হয়, মুড ঠিক থাকে, দুশ্চিন্তা কমে, ঘুম ভালো হয়, মাথা ব্যথা কমে, হজম শক্তিশালী হয়। একবাক্যে বলা যায়, নারীর সুস্থতার পেছনে অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা রাখে প্রিয় মানুষের ভালো আচরণ। 

what-causes-mood-swings-in-women_m

উল্টোদিকে একজন নারী যখন অপরপক্ষ থেকে কঠিন কথা শোনে, বারবার অবহেলা পায়, ভালোবাসার অভাব অনুভব করেন তখন তার শরীর এসব পরিস্থিতিকে ‘থ্রেট’ হিসেবে নেয়। এতে দেহে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ে। আর স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত এই কর্টিসল বাড়লে শরীরে অদ্ভুত সব পরিবর্তন হয়। মন-মেজাজ বিগড়ে যায়, পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে, বুকে ভারী লাগে, ঘুম কমে যায়, শরীরে পানি জমে, ওজন বেড়ে যায় বা কমে যায়।

এখানেই শেষ নয়। এই হরমোন বৃদ্ধির কারণে অনেকের বিরক্তির পরিমাণ বেড়ে যায়, অনেকে চুপচাপ হয়ে যান। কেউ খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েন আবার কেউ অতিরিক্ত চঞ্চল হয়ে যান। 

women-1

অর্থাৎ অপর পাশে থাকা মানুষ, বিশেষ করে প্রিয় কেউ একজন নারীর সঙ্গে কেমন আচরণ করছে তার ওপর নির্ভর করে তার মন কেমন থাকবে আর শরীরই বা কেমন থাকবে।

‘আরে মেয়েটা রেগে গেল কেন?’, ‘এত সেনসিটিভ কেন?’, ‘এই সামান্য কথায় কেঁদে ফেলল কেন?’, ‘মেয়েটা এত ইমোশনাল কেন?’—এমন প্রশ্ন যদি আপনার মনে উঁকি দেয় তাহলে জেনে নিন একজন নারীর আবেগের জগত তার শরীরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সে যেমন ভাবে, তার শরীরও ঠিক সেভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।

Natural-Remedies-for-Hormonal-Mood-Swings-and-Anxiety-Avena-Health-1024x661

আপনি যদি বারবার একজন নারীকে দেরি করে উত্তর দেন, তাকে উপেক্ষা করেন, রূঢ় কথা বলেন— তার শরীর সঙ্গে সঙ্গে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়াবে, ইস্ট্রোজেন কমাবে, প্রোজেস্টেরনের মাত্রায় হেরফের দেখা দেবে। ফলে গা গোলানো, ব্যথা, চুল পড়া, মুড সুইং, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত সেনসিটিভিটি— এসব দেখা দেবে। 

আর আপনি যদি একজন নারীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ করেন, ভালোবেসে কথা বলেন তখন তার শরীর মুহূর্তেই রিল্যাক্স মোডে চলে যাবে। এতে হৃদস্পন্দন ধীর হয়, শ্বাস গভীর হয়, নার্ভ সিস্টেম শান্ত হয়, হরমোনগুলো আবার নিজ ছন্দে ফিরে আসে।

Woman-experiencing-dizziness-seeking-an-evaluation-by-an-ENT-specialist-1024x469

ভালোবাসা একজন নারীর সুস্থ থাকার মূল ওষুধ। সম্মান তার হরমোনের স্থিরতা। ভদ্র আচরণ তার মানসিক শান্তির কারণ। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের সমাজে বেশিরভাগ পুরুষই এসব বিষয়ে গভীরভাবে জানেন না। তাই নারীর ব্যথা, মানসিক চাপ কিংবা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তাদের কাছে ঠাট্টার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। 

এনএম