images

লাইফস্টাইল

মানুষের গায়ের রঙ সাদা হয় কেন?

নিশীতা মিতু

১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

মানুষের দৈহিক গঠনে রয়েছে অনেক পার্থক্য। কেউ লম্বা হয় কেউবা খাটো। কেউ চিকন হয়, আবার কেউ স্থূলকায়। ব্যক্তি ভেদে উচ্চতা আর গড়ন যেমন এক হয় না, তেমনি সবার গায়ের রঙও এক হয় না। কেউ ফর্সা, কেউ শ্যামবর্ণ আবার কেউ কালো হয়ে থাকে। 

সাধারণত মা-বাবার গায়ের রঙের সঙ্গে সন্তানের গায়ের রঙের মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এমনটাই যে সবসময় হবে এমনটা নয়। সম্প্রতি যশোরে সন্তানের গায়ের রঙ অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এক ব্যক্তি। এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মানুষের গায়ের রঙ কেন সাদা বা কালো হয়? মা-বাবার গায়ের রঙের ওপর সন্তানের গায়ের রঙ কতটা নির্ভর করে? চলুন এই প্রতিবেদনে জেনে নিই উত্তর- 

মানুষের গায়ের রঙ সাদা বা কালো হয় কেন? 

খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই শ্যামবর্ণ। আবার পশ্চিমা অনেক দেশের মানুষের গায়ের রং অনেক বেশি ফর্সা। আফ্রিকার মানুষরা আবার হয় কৃষ্ণবর্ণের। গায়ের রঙের এই তারতম্যের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ে ‘মেলানিন’।  

baby1

মানুষের শরীরে মেলানিন নামে এক ধরনের পিগমেন্ট থাকে। এই মেলানিন পিগমেন্টের ধরন ও পরিমাণের ওপরেই নির্ভর করে একজন মানুষের গায়ের রঙ কেমন হবে। 

মেলানিন দুই প্রকারের হয়। ইউমেলানিন ও ফিউমেলানিন। ইউমেলানিন বাদামি বা কালো রঙের পিগমেন্ট, আর ফিউমেলানিন লাল বা হলুদ রঙের পিগমেন্ট। এ মেলানিনগুলো মেলানোসাইটস নামের একটি কোষে তৈরি হয়। আমাদের ত্বকের বাইরের অংশে অর্থাৎ এপিডার্মিস স্তরে এই কোষ থাকে। 

একজন ব্যক্তির শরীরে ইউমেলানিনের পরিমাণ যত বেশি হয়, গায়ের রং তত গাঢ় হয়। আবার ফিউমেলানিনের পরিমাণ যত বেশি হয় গায়ের রঙ তত ফর্সা হয়। এছাড়া শরীরে পিগমেন্টের পরিমাণ যত কম থাকে, ত্বকের রং ততই হালকা বা ফর্সা হয়। আবার পিগমেন্ট বেশি থাকলে ত্বকের রং গাঢ় হয়।

অর্থাৎ একটি শিশুর শরীরে যদি ফিউমেলানিন অনেক বেশি পরিমাণে থাকে তাহলে শিশুটি ধবধবে সাদা হবে। আবার যদি তার দেহে ইউমেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে সে কালো হবে।

baby2

গায়ের রঙের জন্য দায়ী যখন জিন

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে, কেন মেলানিন পিগমেন্টের পরিমাণ বা ধরন একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়? এর পেছনে আবার রয়েছে জিনগত পার্থক্যের কারিশমা। 

ত্বকের রঙ মূলত বাবা-মায়ের জিন থেকে আসে। যাদের পরিবারে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী বেশি, তাদের শরীর মেলানিন কম তৈরি করে। সেই পরিবারের শিশুরাও ফর্সা হবে। 

তবে জিন কেবল মা-বাবার শরীর থেকেই সন্তানের দেহে আসে এমনটা নয়। পূর্বপুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানী, পরদাদা-পরদাদী, পরনানা-পরনানী কিংবা তাদেরও পূর্বপুরুষ থেকে বাহিত হতে পারে। 

অর্থাৎ একটি শিশুর বাবা-মা দুজনেই কালো কিন্তু শিশুটির পরদাদার পরদাদা হয়তো ফর্সা ছিলেন। সুপ্ত জিনের মাধ্যমে যা বংশ পরিক্রমায় তার বাবার জিনে এসেছে। এক্ষেত্রে শিশুটি ফর্সা হতেই পারে! 

baby3

ভৌগলিক অবস্থানও দায়ী 

গায়ের রঙের ভিন্নতার পেছনে ভৌগলিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য একেক দেশের মানুষের গায়ের রং একেক রকম হয়। সূর্যের আলোর কারণে এমনটা হয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি যেখানে যত বেশি পড়ে, সেখানকার মানুষের ত্বকের রং কালো হয়। অতিবেগুনি রশ্মি যেখানে যত কম, সেখানকার মানুষ তত বেশি ফর্সা। 

বিষুবরেখার কাছাকাছি এলাকাগুলোতে অতিবেগুনি রশ্মি বেশি পড়ে। এজন্য সেখানকার মানুষের গায়ের রং গাঢ় হয়। বিষুবরেখা থেকে অঞ্চলগুলো যত দূরে সরে, সেসব অঞ্চলের ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব তত কমে। সেসঙ্গে সেসব এলাকার লোকজনের গায়ের রংও ততই হালকা হয়। এজন্যই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের গায়ের রং শ্যামবর্ণ হয়। 

মা-বাবা কালো হলেও কি সন্তান ফর্সা হতে পারে? 

এর উত্তর হলো হ্যাঁ। মা–বাবা দুজনের গায়ের রঙ কালো/শ্যামলা হলেও সন্তান সাদা বা ফর্সা হতে পারে। এটা পুরোপুরি সম্ভব। কারণ ত্বকের রঙ নির্ভর করে জিন (genetics) এর ওপর। আর ত্বকের রঙ নির্ধারণে বহু ধরনের জিন কাজ করে।

baby4

১. রিসেসিভ (গোপন) জিন

মা–বাবা দুজনের মধ্যেই “সাদা রঙের জিন”গোপনে থাকতে পারে। তাদের নিজেদের গায়ের রঙ শ্যামলা/গাঢ় হলেও এই গোপন জিন সন্তানের জিনে বাহিত হলে সন্তান সাদা হতে পারে।

২. পরিবারে পূর্বপুরুষের প্রভাব

দাদা–দাদি, নানা–নানী বা আরও আগের প্রজন্মে কারও গায়ের রঙ উজ্জ্বল থাকলে সেই জিন পরে নাতি–নাতনির প্রজন্মে প্রকাশ পেতে পারে। 

৩. বহু-জিন বৈশিষ্ট্য (Polygenic trait)

ত্বকের রঙ এক বা দুইটি নয়, ১০টিরও বেশি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এগুলোর বিভিন্ন কম্বিনেশনে কখনো বাবা–মায়ের রঙের থেকেও ফর্সা শিশু জন্মায়।

baby5

৪. জিন মিউটেশন (দুর্লভ ক্ষেত্রে)

খুবই কম ক্ষেত্রে জিনের স্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে শিশুর ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হতে পারে (এটি বিরল)।

একই কারণে মা-বাবা ফর্সা হলেও সন্তান কালো হতে পারে। এমনটা কম ঘটলেও মোটেও অস্বাভাবিক নয়। 

গায়ের রঙের তারতম্য মেলানিনের উপস্থিতির হারের কারণে হয়। এর জন্য মা-বাবাকে দায়ী করা বা দোষী সাব্যস্ত করা বোকামি, অজ্ঞতা ও মূর্খতা। 

এনএম