images

লাইফস্টাইল

শীতে ত্বক টানটান লাগে কেন? শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১০ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

শীতের হাওয়া গায়ে লাগতেই ত্বকে কেমন যেন একটা টানটান ভাব দেখা দেয়। ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক-রুক্ষ। অনেকের ক্ষেত্রে ত্বকের শুষ্কতার কারণে চুলকানিও দেখা দেয়। কিন্তু কেন এমন হয়? এর থেকে পরিত্রাণের উপায়ই বা কী? উত্তর জানুন এই প্রতিবেদনে- 

শীতকাল মূলত শুষ্ক ঋতু। এই ঋতুতে ঠান্ডা বাতাসের প্রভাবে প্রকৃতি আর্দ্রতা হারায়। সেসঙ্গে আমাদের ত্বকও পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না। ফলে ত্বক হয়ে উঠে শুষ্ক। আর ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলেই তা টানটান লাগে। 

AdobeStock_183467915-1024x659

বয়স্কদের, বিশেষত যাদের বয়স চল্লিশ বছরের বেশি তাদের জিনগত কারণে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল, ঘর্মগ্রন্থির পরিমাণ ও কর্মক্ষমতা কমে যায়। ফলে ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়। অনেক সময় বিভিন্ন পেশাজীবীদের কর্মস্থলের পরিবেশ যেমন- ধুলাবালি, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ইত্যাদি ত্বকের শুষ্কতা কারণ হতে পারে। 

শুষ্ক ত্বকের উপসর্গ কী? 

ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলো হলো- 

index-02-dec

  • ত্বক টানটান হয়ে যাওয়া অনুভব করা (বিশেষ করে গোসল বা গোসলের পরে) 
  • স্পর্শ করলে ত্বক রুক্ষ মনে হওয়া 
  • ক্রমাগত চুলকানি
  • ফ্লেকিং, ডেভেলপিং স্কেল, বা ত্বকে ছোট ফাটল
  • ত্বকের রঙ পরিবর্তন (ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া) 
  • ত্বকে ফাটল (ক্ষেত্রবিশেষে ফাটল থেকে রক্তপাত) 

শীতে ত্বক টানটান লাগে কেন? 

ত্বকের শুষ্কতার সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় জেরোসিস বলা হয়। সাধারণত পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে এমনটা ঘটে। শীতকালে যা আরও প্রকট হয়। এর কিছু কারণ চলুন জেনে নেওয়া যাক- 

OYH_dry-skin-header

জলবায়ু

অত্যন্ত ঠান্ডা অঞ্চলে থাকলে ত্বকের শুষ্কতা অনুভব করার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে কম তাপমাত্রা থাকলেও তা ত্বককে সরাসরি প্রভাবিত করে। বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। অনেকের ত্বকে ফুসকুড়িও হয়। 

তাপ এক্সপোজার

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অনেকেই শীত থেকে বাঁচতে খোলা জায়গায় আগুন জ্বালান। কেউ কেউ ঘরের ভেতরের পরিবেশ উষ্ণ রাখতে চুলা, সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম, কয়লা ইত্যাদির সাহায্য নেন। এসব উৎস থেকে নির্গত শুষ্ক তাপ পরিবেশের আর্দ্রতা হ্রাস করে। ফলে ত্বক টানটান হয়ে যায়। 

Untitled-design-16_1702916669

গরম পানি দিয়ে গোসল করা

প্রতিদিন গোসল বা গোসলের জন্য গরম পানি ব্যবহার করলে তার কারণেও ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। ক্লোরিনযুক্ত পানিতে (সুইমিংপুল) নিয়মিত সাঁতার কাটলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। 

সাবান ও ডিটারজেন্ট পণ্য

অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত পণ্য দিয়ে ত্বক ঘষলে বা এক্সফোলিয়েট করলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। দীর্ঘসময় এমন পণ্য ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

uhRGxs69-Ad-25-1200x675

শুষ্ক ত্বকের ঝুঁকি কাদের বেশি? 

  • ৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি
  • পাহাড়ি বা মরু অঞ্চলের মতো চরম জলবায়ুতে বসবাস করে এমন ব্যক্তি
  • কঠোর রাসায়নিকের সংস্পর্শে কাজ করে এমন ব্যক্তি 
  • ঘন ঘন মুখ ধোয় এমন ব্যক্তি 
  • সুইমিং পুলে ক্লোরিনযুক্ত পানিতে নিয়মিত সাঁতার কাটে এমন ব্যক্তি 
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সোরিয়াসিস ভোগা ব্যক্তি 

winter-skincare

ত্বকের শুষ্কতা দূর করার উপায় 

ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের হ্রাস রোধ করতে ত্বককে পর্যাপ্তভাবে ময়েশ্চারাইজ রাখতে ভুলবেন না। এজন্য যে কাজগুলো করতে পারেন- 

  • নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান (বিশেষত গোসলের পর ভেজা ত্বকে) 
  • গরম পানিতে গোসল এড়িয়ে চলুন
  • ক্ষারযুক্ত সাবান এবং এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
  • ত্বক ঢেকে রাখুন (বিশেষ করে বাইরে যাওয়ার সময়) 

peau-seche-en-hiver-2022-big

  • হাতগুলো রাবারের গ্লাভস দিয়ে ঢেকে রাখুন (যদি বারবার পানিতে হাত ভেজাতে হয়) 
  • রাতে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে মাখুন 
  • নিমপাতা বা ফিটকিরি মিশ্রিত পানিতে গোসল করুন 
  • হাত-পায়ের তালুতে ইউরিয়াযুক্ত বা পেট্রোলিয়ামযুক্ত ময়েশ্চারাইজার মাখুন

trockene-Haut-winter

এরপরও যদি ত্বকের শুষ্কতা না কমে, ত্বকে ফুসকুড়ি বা লালচেভাব দেখা দেয় তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে যে সমাধানগুলো দিতে পারেন- 

  • ল্যাকটিক অ্যাসিড ধারণকারী ওষুধ
  • ত্বক নরম করার জন্য ওটিসি ক্রিম এবং মলম

সাধারণত ঘরোয়া উপায়েই শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করা যায়। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন। ত্বকের আর্দ্রতা যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করুন। 

এনএম