images

লাইফস্টাইল

বাড়ছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২০ পিএম

ম্যালেরিয়া একটি মশাবাহিত রোগ। সময়ের সঙ্গে রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে বলে এটি নিয়ে সচেতনতাও কমেছে মানুষের মধ্যে। তবে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে আবার। কারণ, হঠাৎ করে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি বেড়েছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের হার। 

মূলত প্লাজমোডিয়াম গোত্রের এক ধরনের অণুজীব, যা প্রটোজোয়ান (এককোষী প্রাণী) প্যারাসাইটস (পরজীবী প্রাণী) তার কারণেই ম্যালেরিয়া হয়। বাংলাদেশের ১৩-১৪টি জেলায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে এর প্রকোপ বেশি। তবে বর্তমানে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়ও ম্যালেরিয়া রোগীর দেখা মিলছে। 

সুপার ম্যালেরিয়া: 

কয়েক বছর আগে সুপার ম্যালেরিয়া নামে এক ধরনের ম্যালেরিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৮ সালে কম্বোডিয়ায় প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে। এরপর এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলে। এটি ব্যাপকভাবে ম্যালেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী বা ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট।

malaria1

ম্যালেরিয়ার কারণ: 

সংক্রমিত অ্যানোফিলিসজাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে। পরবর্তীতে ম্যালেরিয়ার জীবাণু লালার মাধ্যমে প্রোটেস্টের সংবহনতন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং যকৃতে পৌঁছে। সেখানে তারা পরিপক্ব হয় এবং বংশ বৃদ্ধি করে। 

এই মশা যখন অন্য কাউকে কামড়ায়, তখন তার রক্তেও ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায় এবং সেও আক্রান্ত হয়। অ্যানোফিলিস ছাড়াও ভাইভক্স, ওভালে বা ম্যালেরির জীবাণু বহনকারী মশার দংশনেও ম্যালেরিয়া হতে পারে। এই জীবাণু বহন করা মশা মূলত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে কামড়ায়।
 
ম্যালেরিয়ার লক্ষণ:

ম্যালেরিয়া হলে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায়। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে। তবে অনেকসময় নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে জ্বর আসা-যাওয়া করতে পারে (যেমন একদিন পর পর জ্বর এসে তা তিন-চার ঘণ্টা দীর্ঘ হতে পারে)। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যায়। 

malaria2

এছাড়াও ম্যালেরিয়া রোগের কিছু উপসর্গ রয়েছে। যেমন- 

  • মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব
  • মাথা ব্যথা 
  • অনিদ্রা
  • খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি
  • হজমে গণ্ডগোল
  • অত্যধিক ঘাম হওয়া
  • খিঁচুনি
  • পিপাসা লাগা
  • ক্লান্তি বা অবসাদ লাগা 
  • মাংসপেশি, তলপেটে ব্যথা অনুভব
  • অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা
  • রক্তে শর্করার কম উপস্থিতি
  • ডায়রিয়া ইত্যাদি 

malaria3

ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা: 

কারো ম্যালেরিয়া হয়েছে কি তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। সাধারণত ব্লাড ফিল্মস ব্যবহার করে দূরবীক্ষণযন্ত্রের মাধ্যমে রক্তের এই পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এখন দ্রুত সময়ে এক বিন্দু রক্ত নিয়ে ম্যালেরিয়ার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। 

কারো ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে যেকোনো সময়ই রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে হতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী এক সপ্তাহে সুস্থ হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।

কারো ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে প্রথমবার পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়ার কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে পর পর তিন দিন পরীক্ষাটি করা উচিত। ম্যালেরিয়া শনাক্ত হলে দেরি না করে বা উদ্বিগ্ন না হয়ে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। 

malaria4

এই রোগ নিরাময়ে পাইপেরাকুইনের সমন্বয়ে তৈরি ‘আর্টেমিসিনিন’ নামের ওষুধটি বেশ কার্যকর। দেশের প্রায় সব হাসপাতাল, যেমন থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা জেলা হাসপাতালগুলোতে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা পাওয়া যায়।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে করণীয়: 

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকারযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য। সেজন্য জানতে হবে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের উপায়। 

দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করুন। 

malaria5

দরজা-জানালায় মশক নিরোধক জাল, প্রতিরোধক ক্রিম, স্প্রে ব্যবহার করুন। 

ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। 

জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে বেশি। এসব স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দিন। 

ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সঙ্গে রাখুন। 

এনএম