লাইফস্টাইল ডেস্ক
১৯ জুন ২০২৫, ১১:২৩ এএম
পারফিউমের ইতিহাস যত পুরনো, ইরানের সুগন্ধির ঐতিহ্য ততই গৌরবময়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইরানি পারফিউম বিশ্বজুড়ে স্বাদ ও সুবাস প্রিয়দের মন জয় করে আসছে। প্রাচীন সভ্যতার এক কেন্দ্রে থাকা ইরান শুধু গোলাপের রাজ্য নয়, বরং সুগন্ধির এক অনন্য উৎসস্থল। তাহলে প্রশ্ন হলো ইরানি পারফিউম কেন এত বিখ্যাত?
এই প্রতিবেদনে জানানো হলো এর পেছনের ঐতিহ্য, উপাদান ও বৈশিষ্ট্য।
ইরান সুগন্ধির জন্মভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়। পারস্য সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এখানে বিভিন্ন সুগন্ধি তৈরির কৌশল চর্চিত হতো। প্রাচীন পারসিক রাজারা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন ধর্মীয় আচার, রাজকীয় অনুষ্ঠানে এবং দৈনন্দিন জীবনে। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে ইরানেই প্রথমবার ফুলের নির্যাস থেকে তেল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কৌশল আবিষ্কৃত হয়।

ইরানি গোলাপ (Damask rose) বিশ্বের অন্যতম সেরা ও সুবাসিত ফুল হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে কাশান শহরের গোলাপফুল থেকে তৈরি রোজ ওয়াটার এবং রোজ অয়েল বা আতর এগুলো ইরানি পারফিউমের মূল ভিত্তি। এই গোলাপের সুবাস ঘন, স্নিগ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী যা একে অন্যান্য দেশের গোলাপ থেকে আলাদা করেছে।
ইরানি পারফিউমে রাসায়নিক উপাদান অপেক্ষা প্রাকৃতিক নির্যাসের প্রাধান্য দেওয়া হয়। গোলাপ, জাফরান, লেমনগ্রাস, ল্যাভেন্ডার, সিডারউড, ওউদ এবং মশলা জাতীয় সুগন্ধি উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে গন্ধ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ইরানি পারফিউমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর দীর্ঘস্থায়ী সুবাস। খুব অল্প পরিমাণ ব্যবহারেই এটি দীর্ঘ সময় গন্ধ ছড়াতে পারে। অনেক সময় একটি পারফিউম ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় গন্ধ ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন: ইরানি জাফরান কেন এত বিখ্যাত?
ইরানে পারফিউম তৈরির কাজ অনেক ক্ষেত্রেই হাতে তৈরি পদ্ধতিতে হয়। স্থানীয় শিল্পীরা প্রাচীন কৌশল অনুযায়ী সুগন্ধি তৈরি করেন, যা প্রতিটি বোতলকে দেয় একধরনের বৈশিষ্ট্য ও আসল ঘ্রাণ। এই শিল্পকর্ম ইরানিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের অংশ।

ইসলামিক সংস্কৃতিতে আতর ব্যবহার করা সুন্নত হিসেবে বিবেচিত হয়। ইরান, একটি ইসলামি সংস্কৃতিসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আতরকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলেছে। পুরুষ ও নারীর সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি ধর্মীয় রীতি-নীতিতেও ইরানি আতর গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের বহু নামিদামি পারফিউম ব্র্যান্ড ইরান থেকে গোলাপ তেল ও অন্যান্য সুগন্ধি উপাদান আমদানি করে। ফ্রান্স, আরব আমিরাত, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ইরানি আতরের চাহিদা অনেক বেশি। এই গুণগতমানই ইরানকে করেছে বিশ্বসুপরিচিত।
আরও পড়ুন: ইরানি গোলাপের খ্যাতির রহস্য: সুগন্ধি, সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন
ইরানি পারফিউম কেবল একটি সুগন্ধি নয়, এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সম্মিলিত সৌন্দর্যের প্রতিফলন। এর প্রাকৃতিক উপাদান, ইতিহাস, দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং হাতে তৈরি বৈশিষ্ট্যই এটিকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে।
এজেড