ঢাকা মেইল ডেস্ক
১৫ জুন ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
ভালোবাসার ক্ষেত্রে মা-বাবার ভিন্নতা কখনোই হয়তোবা করা ঠিক না। তারপরও বাবা মায়ের দায়িত্ব কিংবা সন্তানের প্রতি স্নেহ মায়া-মমতা অতুলনীয়। প্রতিটি মা-বাবাই চায় সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে। কোটিপতি বাবা হোক অথবা দিনমজুর বাবা হোক, সব মা-বাবাই চায় তার সন্তানের খুশিকে পূরণ করে দিতে।
দিনটি আজকে বিশ্ব বাবা দিবস। যদি আমি মনে করি বাবা-মাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে ৩৬৫ দিনই আমাদের মনে রাখা উচিত। তারপরও বিশেষ একটি দিন বাবাকে আলাদা করে মনে করিয়ে দেয়া, যে বাবা আমিও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
জন্মসূত্রেই আমার বেড়ে ওঠা প্রত্যন্ত গ্রামে। যে গ্রামে আমি বড় হয়েছি শৈশব-কৈশোর কেটে গেছে সে গ্রামটিতে বিদ্যুৎ ছিল না, হারিকেন ও কুপির আলোতে আমার শিক্ষাজীবন শুরু। গ্রাম থেকে আমার স্কুলের দূরত্ব ছিল প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার। অধিকাংশ তিনি বাবার বাইসাইকেলের পেছনে চড়ে স্কুলে যেতাম, আবার অনেক সময় ভ্যান গাড়ি অথবা রিকশা কিংবা পায়ে হেঁটে স্কুল ছুটি হলে বাড়িতে ফিরতাম। বাবার সে বাইসাইকেলটির কথা এখনো ভীষণ মনে পড়ে।
বাবার সাথে স্মৃতি গুলো একটু ভিন্ন রকম আমার ক্ষেত্রে, গ্রামের পাশে ছিল ছোট্ট শাখা নদী। ছুটির দিনে জাল দিয়ে বাবার সাথে মাছ ধরতে যেতাম সেই নদীতে, মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে চলতো নদীর পানিতে লাফঝাঁপ সাঁতার কেটে এপার থাকে ওপারে যাওয়া। বাবার যৌবনকালের সে দৃপ্ত পায়ের হঁটে চলা এখনও আমার খুব বেশি মনে পড়ে।
প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ি হওয়ায় কৃষিকাজের সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। বাবার সাথে কৃষি জমিতে সেচ দিতে, বীজ রোপন করতে কিংবা পাকা ফসল ঘরে তোলার জন্য পিছু পিছু যেতাম। কৃষকের সাথে বাবার সাথে কৃষি কাজের সে সময় গুলি ভীষণ নির্মল আনন্দ দিত। যা বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়েদের জন্য বলা যায় অনেকটাই গল্পের মতো।
মজার বিষয়, যেটি মনে পড়লে হাসি পায়, সেটি হচ্ছে বাবার পকেট থেকে ২ টাকা বা ১ টাকা গোপনে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার মধ্যে যে একটা অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পেতাম; টিফিন পিরিয়ডে সেই টাকা দিয়ে নারকেলী আইসক্রিম কিনে খাব কিংবা বাদাম খাব , সেটা ছিল অন্যরকম একটা সুখের সময়।
স্বল্প বেতনে চাকরিজীবী বাবা চাইলেই সব স্বপ্ন বা ইচ্ছে পূরণ করতে পারতেন না। যদিও ঐ বয়সে ঐ সময়গুলোতে এখনকার মত স্মার্ট ফোন ছিলনা, মানুষের সাথে মানুষের তুলনা করার প্রতিযোগিতা ছিল না, যেটা ছিল সেটি হচ্ছে সম্পর্কের সরলতা বিশ্বাস প্রতিবেশী প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল হ্দয় আর বাবাদের অকৃত্রিম স্নেহ মায়া মমতার স্পর্শ।
বাবার যে কথাগুলো ছেলেবেলার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে এবং আমি এখনো মেনে চলার ট্রাই করি, তা হচ্ছে কারো ক্ষতি না করা, জীবনকে স্বল্প আয়ের মাঝে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা, কিংবা কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও নিজেকে শান্ত রাখা ধৈর্যশীল থাকা, স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা; এই শিক্ষাগুলা আমার বাবার কাছ থেকেই পাওয়া।
তার জীবনের বড় যে দিকটি উল্লেখযোগ্য তার সম্পর্কে বা তাকে নিয়ে গ্রামে কিংবা তার চাকরি ক্ষেত্রে কোন মানুষের কাছে থেকে কখনো কোন অভিযোগ শুনিনি। তিনি এতটাই নির্মল, এবং এতটাই সরল একটা জীবন কাটিয়েছেন ও কাটাচ্ছেন। যদিও বিভিন্ন অসুস্থতা এখন তিনি আগের মত আর হাঁটাচলা করতে পারেন না। প্রায়শই অসুস্থ থাকেন।
মহান আল্লাহ'র কাছে শুকরিয়া বাবা-মাকে নিয়ে মহান আল্লাহ আমাকে এখনো এক ছাদের নিচে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আসলে প্রতিটা সন্তানের পেছনে বাবার যে অক্লান্ত পরিশ্রম, পরিবারের সবার সকল প্রয়োজন মেটানোর যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা তার প্রতিদান কখনোই দেয়া সম্ভব না। তাই আমরা যত বড় শিক্ষিতই হই না কেন, চাকরিজীবী হই না কেন, সেটা কখনো যেন ভুলে না যাই। আমরা যদি সেটা মনে রাখতে পারি তাহলে আমার মনে হয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও সুস্থ ধারার পরিবার পাবে, আর সমাজ কাঠামো সুন্দর থাকবে। ভাল থাক পৃথিবীর সব বাবা রা। বাবা দিবসে জানাই তাদের প্রতি ভালোবাসা আর পরম শ্রদ্ধা।
লেখক: কবি ও উদ্ভাবক, অতিরিক্ত উপ পরিচালক (এল আর) ডিএই