লাইফস্টাইল ডেস্ক
১৩ মে ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম
কিডনি শরীরের একটি অপরিহার্য অংশ। দেহে জমা সব আবর্জনা ফিল্টারের দায়িত্ব এর। তবে অনেকেই কিডনিজনিত সমস্যায় ভোগেন। সমস্যা জটিল হলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। কারো দুটো কিডনিই বিকল হলে অন্য কোনো সুস্থ মানুষের দেহ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। কিন্তু মনে অজানা ভয় কাজ করে দুজনেরই। ভাবেন, একটি কিডনি নিয়ে কি সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব?
উত্তর হলো, সম্ভব। একটি কিডনি নিয়ে বাঁচা সম্ভব। অনেকে আছেন যাদের জন্মগতভাবেই একটি কিডনি। তারাও সুন্দরভাবে জীবন পার করতে পারেন। কারো কারো অসুস্থতার জন্য একটি কিডনি বাদ দিতে হয়। আবার কেউ কেউ আপনজনের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করেন। একটি কিডনি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় সব কাজ সম্পন্ন করতে পারে। ফলে শরীর থাকে সুস্থ।

কিডনির ওপর কারো বাঁচা-মরা সরাসরি নির্ভর করে না। একটি সুস্থ কিডনি নিয়ে একজন মানুষ অনায়াসে অনেক বছর বেঁচে থাকতে পারেন। তবে কারো দেহে যদি একটি কিডনিই থাকে এবং সেটি ঠিকমতো কাজ না করে সেক্ষেত্রে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ডায়ালাইসিস না করালে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এছারা কিছুক্ষেত্রে একটি কিডনি থাকলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
একটি সুস্থ-স্বাভাবিক কিডনিতে লক্ষ লক্ষ ফিল্টারিং ইউনিট থাকে। এটি নেফ্রন নামে পরিচিত। যখন একটি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়, তখন অন্য কিডনিটির কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়াটিকে কম্পেনসেটরি হাইপারট্রফি বলা হয়। একটি কিডনিই তখন শরীরের সব বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফ্লুইড এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স করে। সেসঙ্গে ব্লাড প্রেশারও নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই সবটাই করে বাড়তি কোনো সাহায্য ছাড়াই।

এক্ষেত্রে কিডনি দাতা কিংবা কিডনি ডোনারের উদাহরণ ধরে নেওয়া যাক। প্রতিবছর হাজার হাজার সুস্থ মানুষ কিডনি দান করে থাকেন। তারা সুস্থভাবেই জীবনযাপন করেন। থাকেন সক্রিয় ও কর্মক্ষম। জানলে অবাক হবেন, সমীক্ষা অনুযায়ী নিয়মিত মনিটরিং এবং সুস্থ জীবনযাত্রা বজায় রাখলে দুটি কিডনি থাকা মানুষের তুলনায় একটি কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের আয়ু বেশি হয়।
তবে একটি কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকার অর্থ হলো, কিডনির স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হতে হবে। এজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। সেগুলি কী কী? চলুন জানা যাক-

হাইড্রেটেড থাকতে হবে। তাই বলে অতিরিক্ত তরল পান করা যাবে না। দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করাই যথেষ্ট। আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কতটুকু পানি পান করা উচিত তা চিকিৎসক থেকে জেনে নিন।
ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগার এবং কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ এগুলো সরাসরি কিডনির স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

অপ্রয়োজনীয় পেনকিলার, বিশেষ করে আইবুপ্রোফেন এবং ডাইক্লোফেনাকের মতো NSAID সেবন থেকে বিরত থাকুন।
অনিয়ন্ত্রিত হার্বাল টোটকা ব্যবহার করবেন না। শুধু তা-ই নয়, ওভার-দ্য-কাউন্টার সাপ্লিমেন্ট থেকেও দূরে থাকতে হবে।
নিয়মিত কিডনি ফাংশন টেস্ট করান। বিশেষত কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা থাকলে তো অবশ্যই।

একটি কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য আলাদা কোনো বিশেষ ডায়েটের প্রয়োজন হয় না। সুস্থ থাকতে যেকোনো মানুষেরই নিয়মিত শারীরিক চর্চা করা উচিত। একটিমাত্র কিডনি নিয়ে জন্মানো শিশু কোনো জটিলতা ছাড়াই বেড়ে ওঠে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। এমনকী অ্যাথলিট, সেনাকর্মী এবং যেকোনো কাজ করা মানুষ কিন্তু একটি কিডনি নিয়েই দিব্যি স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবেন।
অর্থাৎ সুন্দরভাবে জীবন পার করতে একটি সুস্থ কিডনিই যথেষ্ট। সচেতনতা এবং যত্ন নিয়ে চললে অবাধে কাজ করে যাওয়া সম্ভব।
এনএম