নিশীতা মিতু
০৬ জুন ২০২২, ০৩:০৮ পিএম
পানি প্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে আমাজনের পরেই পদ্মার স্থান। প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। স্বপ্নের এই সেতুকে নিয়ে মানুষের মনে জেগেছে নানা প্রশ্ন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কী সহ্য করতে পারবে এই সেতু? যদি কখনো বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় তবে কী হবে?
এসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আরও আগেই দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন ভূমিকম্পসহ বহুমাত্রিক দুর্যোগ-ধাক্কা সামলে নেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পদ্মা সেতু।
এই সেতুর সক্ষমতা বোঝাতে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি কখনো রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। আর ঠিক তখনই যদি পিলারের নিচে থেকে ৬৫ মিটার মাটি সরে যায়। একই সময়ে যদি পুরো সেতু রেল এবং যানবাহনে লোড থাকে। ওই সময়েই যদি ৫ হাজার মেট্রিক টন ওজনের আরও একটি জাহাজ এসে সেতুর পিলারে ধাক্কা মারে তাহলেও পদ্মা সেতুর কিছুই হবে না।’
ঝড়ে ক্ষতি হবে না ল্যাম্পপোস্টের
তীব্র ঝড়ে প্রায়ই ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যায়। তবে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটার আশঙ্কা নেই। এতে চীনের তৈরি ল্যাম্পপোস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি পোস্টের ওজন ২৭৫ কেজি ও দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ২ মিটার। দৃঢ়ভাবে সেতুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এগুলো। তাই প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হলেও এসব ল্যাম্পপোস্টের কোনো ক্ষতি হবে না।
বজ্রপাতে থাকবে সুরক্ষিত
বজ্রপাতে যেন পদ্মা সেতুর কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য এই সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে কপার ক্যাবলের আর্থিং। এই ক্যাবলটির একটি প্রান্ত স্ক্রুর সাহায্যে রোডওয়ে স্লাবের নিচে লাগানো হয়েছে। আর অন্য প্রান্তটি লাগানো হয়েছে স্প্যানে।
অর্থাৎ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি বজ্রপাত হয়, তবে তাতে উৎপন্ন হওয়া বিদ্যুৎ প্রথমে রোড স্লাবের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যাবলের মাধ্যমে স্প্যানে আসবে। এরপর পিলারের সাহায্যে এই বিদ্যুৎ স্প্যান থেকে একদম মাটির গভীরে চলে যাবে।
পদ্মা সেতুর ১৭-১৮টি স্লাব পরপর এই কপার ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সংযোগ করার জন্য রোডওয়ে স্লাবে ঢালাই করা হয়েছিল তার ভেতর একটি আর্থিং স্টিক দেওয়া হয়েছিল। এই স্টিকের মধ্যে কপার ক্যাবল সেট করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি প্যারাপেট ওয়ালের এক্সপানশন জয়েন্টের গ্যাপে স্থাপন করা হয়েছে একটি করে আর্থিং স্টিক। যা এক প্যারাপেট থেকে অন্য প্যারাপেটে যোগ করা হচ্ছে। ফলে পুরো প্যারাপেটজুড়ে আর্থিংয়ের সংযোগ থাকবে। সেতুর যে স্থানেই বজ্রপাত হোক না কেন তাতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এই স্টিক আর ক্যাবলের মাধ্যমে মাটির নিচে চলে যাবে। সুরক্ষিত থাকবে সেতু।
ভূমিকম্পে থাকবে অটল
পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বোচ্চ সক্ষমতার বিয়ারিং। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এটি অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। সেতুটিকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং। যার সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এত বেশি সক্ষমতা সম্পন্ন বিয়ারিং এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও পদ্মা সেতু টিকে থাকতে পারবে।
এসব নিরাপত্তা ফিচারের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সুরক্ষিত থাকবে বাঙালির স্বপ্নের সেতু।
এনএম/এজেড