লাইফস্টাইল ডেস্ক
২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে আসছে শীত। আর শীত মানেই গুড়ের তৈরি হরেকরকম পিঠা, ঘোরাঘুরি আর লেপ-কম্বলের আরাম। বর্তমান যুগে যতই কফফোর্টার আর ব্ল্যাংকেটের ছড়াছড়ি দেখা যাক না কেন, লেপের জায়গাটি বহুবছর ধরে একইরকম রয়ে গেছে।
শীত ছুঁই ছুঁই সময় এলেই তাই বাঙালির ঘরে ঘরে লেপ-তোষক বানানোর ধুম পড়ে যায়। এসময় বাড়িতে বাড়িতে শীতের পোশাক আর কম্বল-লেপ রোদে দেওয়ার হিড়িক পড়ে। বাড়ির উঠান আর শহরের ছাদ ছেয়ে যায় লাল আভায়। কেননা লেপ মানেই তুলায় মোড়ানো লাল কাপড় ভেসে ওঠে আমাদের মনের চিত্রপটে।

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেপ বানানোর কাজে কেন লাল কাপড়ই ব্যবহার করা হয়? প্রায় সব লেপের কভারই লাল হয়। কিন্তু কেন? পৃথিবীতে এত রঙ থাকতে লেপ-কার্ডার বা ধুনুরিরা কেন সর্বদা তাদের বিশাল বস্তায় প্রচুর পরিমাণে ইটা লাল কাপড় বোঝাই করে রাখে?
আরও পড়ুন- বিরিয়ানির পাতিল কেন লাল কাপড়ে মোড়া থাকে
লেপের কভারে লাল হওয়ার পেছনে কী নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে? নাকি এর পিছনে আছে অন্য কোনো গল্প?

জানা যায়, একসময় মুর্শিদাবাদের একেবারে নিজস্ব এই শিল্পের নামডাক ছিল সর্বত্র। লম্বা আঁশের কার্পাস তুলার বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে ভরা হতো মোলায়েম সিল্ক এবং মখমলের মাঝখানে। সেই মখমলের রঙ ছিল লাল। সুগন্ধের জন্যে তাতে দেওয়া হত আতর।
বর্তমানে উচ্চমূল্যের কারণে মখমলের কাপড় আর ব্যবহার হয় না। কিন্তু লাল কাপড় ব্যবহারের প্রথা চালু রয়েছে আজও। নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না হলেও আজও লেপ বানালে তা লাল কাপড়েই বানিয়ে থাকেন কারিগররা।

বাংলা, বিহার, ওড়িশা-সহ অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খানের আমল থেকেই প্রথম লেপের উল্লেখ পাওয়া যায় বাংলার ইতিহাসে। রীতি অনুযায়ী লাল মখমলের কাপড় ব্যবহার করে লেপ সেলাই করা হতো।
আরও পড়ুন- সাপের কামড়ে বেজি মরে না কেন?
মুর্শিদাবাদ সসময়ে কারুকার্য এবং নরম লাল মখমলের জন্য বিখ্যাত ছিল। নবাবের লেপ তৈরিতে ব্যবহৃত হতো এই লাল মখমল। জানা যায়, অত্যন্ত উচ্চ মানের তুলা কার্ডিং করার পরে, এটি লাল রঙের পানি ডুবিয়ে শুকানো হতো। এরপর আতর (সুগন্ধি) স্প্রে করা হতো। তারপর লেয়ারিং করা হতো এক একটি লেপ।

মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর তার মেয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন যিনি মুর্শিদকুলী খানের উভয় কন্যা জয়নব উন-নিসা বেগম এবং আজমত উন-নিসা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন, তার আমলে তিনি মখমলের পরিবর্তে সিল্ক কাপড় ব্যবহার শুরু করার নির্দেশ দেন কারিগরদের। কাপড়ের ধরন বদলালেও আবরণের রঙ অপরিবর্তিত থাকে।
অন্যদিকে ঢাকার লেপ ব্যবসায়ীদের মতে, লেপে এই রীতি ও রঙের ব্যবহার নবাবরাও অনুসরণ করতেন। সেই থেকে লাল কাপড়ে লেপ বানানোর রীতি চলে আসছে।

লেপের রঙ লাল হওয়ার আরও কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, লেপ কখনো ধোওয়া যায় না। আর লাল কাপড় ব্যবহারের ফলে ময়লা কম চোখে পড়ে।
তবে লেপের রঙের আসল কারণ নিয়ে এখনও মতান্তর রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস বা ঐতিহ্যের রীতি মেনে নয়, ব্যবসার খাতিরেই এমনটা করা হয়। ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয় লেপ। যেন দূর থেকেই তা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। যদিও এই তত্ত্ব নিয়েও কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।