নিশীতা মিতু
১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পিএম
বলা হয়, জীবন তখন থেকে শুরু হয় যখন বাস্তবতা পুরোপুরি সামনে এসে দাঁড়ায়। কেউ অনেকটা বয়স আরাম-আয়েশে কাটিয়ে দেন। আবার কেউবা কমবয়সেই হারান অভিভাবক। নিজেই তখন নিজের দায়িত্ব নেওয়ার পথে নামেন। এমনই একজন শাহরিন রহমান।
পেশায় অনলাইন উদ্যোক্তা এই তরুণীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। জীবনের নানা কথা আর ব্যবসার টুকটাক খবর জানান তিনি। শাহরিনের জন্ম ১৯৯৮ সালে। ছেলেবেলা কেটেছে রাজধানীর পল্লবীতে। ছেলেবেলার অসংখ্য স্মৃতি আছে তার। তবে সব সুখ দুঃখের স্মৃতির মাঝে মনের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে বাবা হারানোর স্মৃতি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবা হারান শাহরিন। এরপর নানুবাড়িতে বেড়ে ওঠা। তাই বলা যায় শাহরিনের কৈশোর অতটাও আনন্দের বা সুখকর নয়। যে বয়সে অনেকেই নিশ্চিন্তে পড়াশোনা, খাওয়া, ঘুম নিয়ে জীবন কাটায়, সে বয়সে তাকে ভাবতে হয় কী করে কিছু অর্থ আয় করা যাবে। অন্তত নিজের হাতখরচের টাকা যেন জোগাড় হয়।
শাহরিনের কাছে শিক্ষাজীবন নিয়ে জানতে চাই। তিনি বলেন, ‘ঢাকার কল্যাণপুর গার্লস স্কুল এবং কলেজ থেকে এসএসসি, তারপর ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছি। এরপর করোনা, মায়ের দুটো অপারেশন সেসঙ্গে আর্থিক সঙ্কটের কারণে আন্ডারগ্রাজুয়েট করা হয়ে উঠেনি। তবে ইচ্ছা আছে অতিসত্বর পড়াশোনা শুরু করার। মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজম নিয়ে পড়ব ভাবছি।’
২০২০ সাল থেকে অনলাইন ব্যবসায় জড়িত শাহরিন। তখন হাতে বানানো গয়না নিয়ে কাজ করতেন। কিন্তু দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা ও রুচি বদলে যাওয়ায় এবং ব্যক্তিজীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তা বেশিদূর আগানো হয়নি। এরপর গত বছর নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন শাহরিন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কিনলে ডাক দিয়েন’।
নামটা বেশ মজার লাগে। সচরাচর এমন নাম দেখা যায় না। কৌতূহল চেপে না রেখে তাই জিজ্ঞেস করেই বসি, এমন নাম কেন? উত্তরে শাহরিন বলেন, ‘ভিন্নধর্মী নাম মানুষকে আকৃষ্ট করে। গদবাধা সাধারণ নাম না দিয়ে তাই একটু বৈচিত্র্যময় নাম রাখতে চেয়েছিলাম। পণ্য কিনতে গেলে ক্রেতাকে তো অবশ্যই আমাকে ইনবক্সে ডাক দিতে হবে। সেটা ভেবেই “কিনলে ডাক দিয়েন” নাম রাখা’।
চায়না থেকে আনা বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও ইউনিক অর্নামেন্টস পাওয়া যায় শাহরিনের প্রতিষ্ঠানে। এসবের মধ্যে নানা ডিজাইনের কানের দুল, গলার মালা, আংটি ইত্যাদি। আরও পাওয়া যায় সানগ্লাস, ব্লেসলেটের মতো অনুষঙ্গ।
নিজের ব্যবসা নিয়ে শাহরিন বলেন, ‘আমি কেবল নিজের ব্যবসায়ের লাভের দিক ভাবি না। সেসঙ্গে এটাও ভাবি যে ক্রেতাসন্তুষ্টিতে যেন কোনো ত্রুটি না থাকে।’
২ হাজার টাকা মূলধনে ব্যবসা শুরু করেন শাহরিন। বর্তমানে তিনি মাসে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করেন। এই তরুণী নিজের আয় নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি মনে করেন, একজন শিক্ষার্থীর হাতখরচ হিসেবে এই অর্থ যথেষ্ট।
ব্যবসায় ক্ষেত্রে বিক্রেতার সাথে ক্রেতার সমন্বয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন শাহরিন। তিনি বলেন, ‘দুইপক্ষের সমঝোতা আর আচার-ব্যবহার এর সমন্বয় দ্বারাই একটি পণ্য সফলভাবে হাতবদল হয় এবং ক্রেতার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয় একজন বিক্রেতার সঙ্গে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই শাহরিনের কাছে। তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিলে চলবে না। আমি স্বপ্ন দেখি আমার ব্যবসাকে একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব। বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনাও আছে ব্যবসার পরিসর বড় করার সংক্রান্ত।’