লাইফস্টাইল ডেস্ক
০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পিএম
সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে সবই। আবহাওয়া থেকে শুরু করে মানুষের ভাবনা— সবকিছুতেই আসছে পরিবর্তন। এমনকি শিশুদের মনোজগতও সময়ের আগে বদলে যাচ্ছে। একসময় টিনএজার বা কিশোর বয়সীদের মধ্যে যেসব স্বভাব দেখা যেত, এখন তার চেয়ে কমবয়সীদের মধ্যেও একই স্বভাব দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আট থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বাড়ছে স্ট্রেস, হতাশা ও উদ্বেগ। শিশুর আচরণে যার প্রভাব পড়ছে। কৈশোরের আগেই শিশুদের রাগ, অভিমান, ইচ্ছা কিংবা আবদারের স্বভাবে অবাক হচ্ছেন অভিভাবকরা। হচ্ছেন বিরক্তও। মাঝেমধ্যে তাই তাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে বাবা-মায়েরা সন্তানদের বকাবকি করে অনেক বেশি কিছু বলে ফেলেন।

বেশিরভাগ মা-বাবা রাগের মাথায় সন্তানকে যেসব কথা বলে থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- ‘তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’। এই কথাটিই সন্তানের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কথা শিশুর মনে আঘাত হানে। এতে তারা ডিপ্রেশনে ভোগে।
শিশুরা ছোট হলেও তাদের মান-অভিমান বোধ আছে। বিশেষত সবচেয়ে কাছের মানুষ যারা, যেমন- বাবা, মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী, ভাই, বোনের মুখে এমন কথা শুনলে তাদের মনের খুবই কষ্ট হয়। মনোবিদরা মনে করেন, শৈশবের কোনো একটি ঘটনার অভিঘাত পরবর্তী জীবনের কার্যকলাপকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। ফলে শৈশবে অর্থাৎ জীবনের প্রথম পর্যায় থেকেই তার মানসিক গঠন ও আচার আচরণকে একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করতে শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
একটি শিশুর আচার আচরণ দেখে, তার মনোগঠনের প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক। শিশু মনস্তত্ত্বের প্রথম ধাপ হলো তার আচার আচরণের মধ্যে দিয়ে শিশুটির মনোজগৎকে চেনার চেষ্টা করা।
মনে রাখবেন, শৈশবেরও একটি নির্দিষ্ট চাহিদা রয়েছে। তা অস্বীকার করে বড়রা যদি নিজেদের মন গড়া কোনো সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চান তাহলে শিশুর মনোজগতের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যা শিশুর ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে।

আগে শিশুরা অনেক বেশি খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন স্কুল আর একস্ট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে এতটাই সময় দিতে হচ্ছে যে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধুলার সময় মিলছে না তাদের। ফলে শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে একাকীত্ব। এখন শিশুরা অনেক বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত।
সারাদিন ল্যাপটপ, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকার কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের অনেক ব্যাপার তাদের নখদর্পণে। আর তাই কম বয়স থেকেই তারা এমন অনেক বিষয় জেনে যাচ্ছে যা শিশুদের জানার কথাই নয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী, পাঁচ থেকে বারো বছরের শিশুদের মানসিক সমস্যা আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বয়সী শিশুদের মধ্যে নানা কারণে ওসিডি, ডিপ্রেশন, প্যানিক অ্যাটাক, বাইপোলার ডিজঅর্ডারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্কুলে কোনো কারণে হেনস্থার শিকার হওয়া, বাড়িতে সুস্থ পরিবেশ না থাকা, মা-বাবার মধ্যে সমস্যা, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, যৌন নির্যাতনের শিকার এসব কারণে মূলত এমন সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে।
সময় থাকতে সন্তানের মনের প্রতি আরও যত্নশীল হোন। তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। এতে শিশুর সঠিক বিকাশ ঘটবে।
এনএম