নিশীতা মিতু
২৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
চারপাশে অথৈ জলরাশি, ঘর থেকে শুরু করে পথঘাট সবকিছু পানিতে নিমজ্জিত। অথচ পিপাসায় কাতর অসংখ্য মানুষ। কারণ পানির অভাব না থাকলেও সুপেয় পানির বড্ড অভাব। বর্তমানে বন্যাকবলিত বেশিরভাগ জেলার সাধারণ চিত্র এটি।
আকস্মিক বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় বেশিরভাগ মানুষের। বন্যা চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে প্রকট আকার নেয় পানিবাহিত রোগ। কারণ প্লাবনের পানিতে থাকে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান যা মিশে যায় পুকুর আর নলকূপের পানির সঙ্গে। তাই এসব পানি আর পানযোগ্য থাকে না। উল্টো পান করলে নানা ক্ষতি হয় শরীরের।
এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র সহায় হলো বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু সেটিও পাওয়া দুষ্কর। তাই বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের সাহায্যকারী বন্ধু হতে পারে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। একটি মাত্র ট্যাবলেটের সাহায্যে পানি বিশুদ্ধ করার উপায়টি তাদের জন্য সহজ হয়।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট কী?
এটি এমন একটি ট্যাবলেট যা পানিতে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীবকে মেরে পানিকে পানের উপযোগী করে তুলে। পানি বিশুদ্ধকরণের ট্যাবলেটগুলোতে থাকে ক্লোরিন, ক্লোরিন ডাই-অক্সাইড অথবা আয়োডিন। বন্যা কবলিত এলাকায় বর্তমানে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় অ্যাকুয়াট্যাবস (৩৩ মিলিগ্রাম ট্রোক্লোসিন সোডিয়াম)। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে অতি সহজেই নিরাপদ খাবার পানি প্রস্তুত করা যায়।
আগে পানি বিশুদ্ধ করে বেশি ব্যবহার করা হতো হ্যালোট্যাব নামক ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেটে থাকা হ্যালাজোন কেমিক্যালটি পানির সাথে মিশে হাইপোক্লোরাস এসিড তৈরি করে যা জীবাণু ধ্বংস করে। তবে এর চেয়ে বেশি কার্যকর অ্যাকুয়াট্যাবস। এতে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো পানিতে থাকা ক্ষতিকর অনুজীবদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। ফলে পানি হয়ে ওঠে নিরাপদ ও পানের উপযোগী।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট কী দিয়ে তৈরি?
অ্যাকুয়াট্যাবস নামের ট্যাবলেটের অন্যতম উপাদান সোডিয়াম ডাইক্লোরোইসোসায়ানুরেট নামক রাসায়নিক। (আইএনএন: সোডিয়াম ট্রোক্লোজেন, ট্রোক্লোসেনাম ন্যাট্রিকাম বা NaDCC বা SDIC)। এটি এমন একটি রাসায়নিক যৌগ যা ব্যাপকভাবে পরিষ্কারকারী এজেন্ট এবং জীবাণুনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি বর্ণহীন, জলে দ্রবণীয় কঠিন, ক্লোরিনের সাথে সায়ানুরিক অ্যাসিডের প্রতিক্রিয়ার ফলে উত্পাদিত হয়।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবহার
নাম শুনেই বোঝা যায় এটি পানি বিশুদ্ধ করার কাজে ব্যবহৃত। এর মূল উপাদানটি জীবাণুনাশক, বায়োসাইড এবং শিল্প ডিওডোরেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয় কিছু আধুনিক পানি পরিশোধন ট্যাবলেট/ফিল্টারে এটি পাওয়া যায়। জীবাণুনাশক হিসাবে এটি সুপেয় পানি, সুইমিং পুল, টেবিলওয়্যার এবং বায়ু জীবাণুমুক্ত করতে এবং নিয়মিত জীবাণুনাশক এজেন্ট হিসাবে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যবহৃত হয়।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহারের নিয়ম
ট্যাবলেটের সাহায্যে পানি বিশুদ্ধ করতে প্রথমে ৫ লিটার পানি নিন। সুতি কাপড়ের সাহায্যে এই পানি ছেঁকে নিন। এবার এতে একটি ‘পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট’ ভালোভাবে মেশান। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর এই পানি নিশ্চিন্তে পান করতে পারবেন।
তবে মনে রাখবেন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটটি কখনই সরাসরি খাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতি হতে পারে।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটে ক্লোরিন থাকায় পানিতে কিছুটা গন্ধ থেকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে পানি উন্মুক্ত রেখে নেড়েচেড়ে নিলে গন্ধ অনেকটা কমে যায়।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট কোথায় পাওয়া যায়?
দেশের যেকোনো ফার্মেসিতেই এই ট্যাবলেট পেয়ে যাবেন। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসেবেও উপাহার দিতে পারেন এই ট্যাবলেট।
এনএম