আসাদুজ্জামান লিমন
০৩ মে ২০২৪, ০৭:২১ এএম
এমন বৃষ্টিহীন বৈশাখ গত কয়েক বছরে কমই দেখেছে দেশ। সঙ্গে তীব্র তাপদাহ। জনজীবন যেনো অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অনেকেই বলাবলি করছিলেন ‘এমন গরম বাপের জনমেও দেখি নাই।’ বৃষ্টির জন্য সারা দেশে চলে আকুতি মিনতি। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনাও হয়েছে ঢের। এমনকি ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে কুসংস্কারকেও উসকে দিচ্ছেলেন কেউ কেউ। সেসব খবর গণমাধ্যমের কল্যাণে জেনেছে দেশবাসী। কিন্তু তারপরও কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। নামছিল না কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের পূবার্ভাসকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল করছিলেন সাধারণ জনগণ। তবে বৃষ্টি যে শিগগিরই নামবে তার আভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। তারা বলেছিল এপ্রিল মাসটা কষ্টে-সৃষ্টে পার করুন। মে মাসের শুরুতেই নামবে ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি। তাদের কথা বিফলে যায়নি। পহেলা মে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৃষ্টির খবর আসতে শুরু করে। সেসব এলাকার মানুষদের ভাগ্যবান মনে করছিলেন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারা।
অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাত থেকে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে বাংলাদেশ যেহেতু ঢাকা কেন্দ্রীক তাই নগরের বাসিন্দাদের বৃষ্টির প্রতি কামনাই ছিল বেশি। যা প্রকাশ পায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার কিছু কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির খবর প্রকাশ্যে আসে। প্রমাণ স্বরূপ ছবি ও ভিডিও নেট মাধ্যমে প্রকাশও করেন অনেকেই। এতে করে গরমে ভূগতে থাকা নগরের বৃষ্টিহীন বাসিন্দাদের মনে হতাশাও জাগে। তাদের এলাকায় কেন বৃষ্টি হচ্ছে না তা নিয়ে আক্ষেপও প্রকাশ করেন। এরপর ধীরে ধীরে অন্যসব এলাকায়ও বৃষ্টি আপন খেয়ালে ঝরতে থাকে। সঙ্গে ছিল মেঘের গর্জনও।
অনেক দিনের প্রতিক্ষিত বৃষ্টি এলো ঠিকই কিন্তু প্রথম পালায় ভেজাল ছিটে ফোটা। তাই নগরবাসীর এই সামান্য বৃষ্টিতে মন ভিজল না। অনেকেই কিছুটা মনে ভার নিয়ে ঘুমাতে গেলেন। যদিও এই সামান্য বৃষ্টিতে গরমের লেশ মাত্র যায়নি। একটা গুমোট আবহাওয়া মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন এই বৃষ্টি বুঝি ‘ট্রায়াল’। এমনকি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অনুভূতি প্রকাশ করতেও ছাড়েনি। বৃষ্টি নিয়ে এমন টিপ্পনি কাটতে দেখা যায়।
রাত তখন দ্বিপ্রহর। ঘুমের কোলে নগরের পরিশ্রান্ত মানুষগুলো। হঠাৎ মেঘের গর্জনে ঘুম ভাঙে। দমকা হাওয়ায় ওলট পালট হয়ে কুন্ডুলি পাকায় তাদের জানালার পর্দা। ঠান্ডা হিমেল পরশে অনেকেই চমকে ওঠেন। ঝম ঝমিয়ে নামে বৃষ্টি। এই বৃষ্টি সন্ধ্যার ট্রায়াল রান নয়। পুরো ফর্মে কালবৈশাখীর দাপট ছিল। যাকে প্রশান্তির কিংবা স্বস্তির বৃষ্টিই বলা চলে।
মধ্যরাতের বৃষ্টির স্থায়ীত্ব ছিল আধা ঘণ্টারও বেশি। যা ভেজায় নগরের পথ-ঘাট প্রান্তর। বৃষ্টির পরশে প্রশান্তির ঘুমে তলিয়ে যান অনেকেই। সকালে যখন ঘুম ভাঙে তখন বৃষ্টি ভেজা এক স্নিন্ধ সকালের দেখা মেলে। হালকা ঠান্ডার পরশও ছিল আজকের সকালে।
বৈশাখের অন্যদিনগুলোর সকালটা যখন ছিল গুমোট আর ভ্যাপসা গরমের মাখামাখি তখন আজকের সকালটা যেনো প্রশান্তির আর স্নিন্ধতার।
এজেড/এমএইচএম