লাইফস্টাইল ডেস্ক
০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম
নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান ডিম। বাজারে সাধারণত দুই রঙের ডিম পাওয়া যায়। সাদা খোলসের আর লাল বা বাদামি খোলসের। অনেকেই জানতে চান, এর মধ্যে কোন ডিম ভালো? কোনটির পুষ্টিগুণ বেশি?
কারো কারো মতে, লাল ডিমের দাম যেহেতু বেশি তারমানে এর পুষ্টি বেশি। অনেকে আবার বলেন উল্টো কথা। বিশেষজ্ঞরা কী বলেন এসম্পর্কে? এই প্রতিবেদনে জানুন বিস্তারিত-

ডিম সাদা বা লাল হওয়ার কারণ কী?
মুরগির জাত ও জিনের উপর ডিমের রং নির্ভর করে। সাধারণত, সাদা পালকের মুরগির ডিম সাদা হয় আর গাঢ় রঙের পালকের মুরগির ডিম লাল হয়। বিশেষত সাদা লেগহর্ন জাতের মুরগি বিভিন্ন রঙের হলেও তারা সবাই সাদা ডিম পাড়ে। আবার অন্যদিকে প্লেমাউথ রকস বা রোড আইল্যান্ড মুরগিগুলো লাল ডিম পেড়ে থাকে। কিছু কিছু জাতের মুরগি সাদা হলেও লাল ডিম পাড়ে। মূলত মুরগির জরায়ুর মধ্যে থাকা শেল গ্ল্যান্ডের কারণে ডিমের রঙ লাল বা বাদামি হয়ে থাকে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা অনুযায়ী, সাধারণত একটি মুরগির ভেতরে ডিম তৈরি হতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রথমে মুরগির গর্ভে ডিমের কুসুম তৈরি হয়। তারপর তিন ঘণ্টা ধরে তৈরি হয় কুসুমের চারদিকে সাদা অংশ বা অ্যালবুমিন। এরপর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তৈরি হয় খোসার নিচের ঝিল্লি।

এরপর ডিমটি লেজের কাছাকাছি শেল গ্ল্যান্ডে চলে যায়। এখানেই তৈরি হয় উপরের শক্ত খোসা। এই খোসা তৈরিতে প্রায় ২০ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। সব ডিমের খোলস শুরুতে সাদাই থাকে। ডিম তৈরির একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগ হয় রং। মুরগির দেহে থাকা এক রঞ্জক পদার্থ থেকে এই রং তৈরি হয়। তবে যেসব ডিম সাদা হয় সেগুলোয় রং যোগ হয় না।
কিছু কিছু গবেষণায় আবার দেখা গেছে, মুরগির বয়স যতো বাড়তে থাকে, বা তারা যদি অনেক চাপে থাকে তখন তাদের ডিমের রং হালকা হতে শুরু করে।

লাল ডিমের দাম বেশি কেন?
সাধারণত ডুয়েল ব্রিড অর্থাৎ যেসব মুরগি ডিম ও মাংস দুটি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পালন করা হয় সেগুলো লাল রঙের ডিম পাড়ে। এসব মুরগি আকারে বড় হওয়ায় বেশি পরিমাণ খাবার দিতে হয়। আর তাই ডিমের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে।
অন্যদিকে সাদা পালকের মুরগির প্রজনন খরচ কিছুটা কম হয়। তারা বাদামি রঙের মুরগির চেয়ে খাবারও কম খায়। তাই সাদা ডিমের দাম কিছুটা কম হয় আর লাল ডিমের দাম কিছুটা বেশি হয়।

কোন রঙের ডিমে পুষ্টি বেশি?
পুষ্টিবিদ সৈয়দ তাসনিম হাসিন চৌধুরী এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ শাকিলা ফারুকের মতে, ডিমের রঙের সাথে এর পুষ্টিগুণের কোনো তারতম্য হয় না। তবে নিউ ইয়র্কের এক দল গবেষকের মতে লাল ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সামান্য বেশি রয়েছে। কিন্তু সেই পার্থক্য এতটাই সামান্য যে তাতে খুব একটা ফারাক হয় না।
সবমিলিয়ে বলা যায়, দুই রঙের ডিমের খাদ্যগুণ প্রায় সমান। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, একটি ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে ৭২ ক্যালোরি ও ৪.৭৫ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। সাদা ও লাল ডিমে এই পুষ্টিগুণের পরিমাণ প্রায় সমান।

তবে বাজারে ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ ডিম, অর্গানিক ডিম, জৈব এবং নন-জিএমও ফিড দেওয়া মুরগির ডিম, খোলামেলা জায়গায় পালন করা দেশি মুরগির ডিম ইত্যাদির বেশ কদর রয়েছে। এক্ষেত্রে মুরগির ডিমের রং নয় বরং মুরগি কী ধরনের খাবার খায় এবং কী ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠে সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন যেসব মুরগিকে বেশি বেশি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত কিংবা ভিটামিন এ বা ই-যুক্ত ফিড খাওয়ানো হয় সেসব মুরগির ডিমে এসব পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। এই বিশেষ ফিডের জন্য দামটাও বেশি পড়ে।
পুষ্টিবিদ তাসনিম হাসিন চৌধুরীর মতে, যেসব মুরগি প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার খুঁজে খুঁজে খায় সেসব মুরগির ডিমে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ উপাদান এবং ফ্যাট বেশি থাকে। আর খামারের মুরগির ডিমে এই ভিটামিন ও খনিজ কিছুটা কম থাকলেও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।

পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ শাকিলা ফারুকের মতে, গৃহস্থালির মুরগি রোদে বেশি থাকায় এগুলোর ডিমে ভিটামিন-এ ও ডি বেশি থাকে। আবার খামারে ভালো ফিড খাওয়ানো মুরগির ডিমের পুষ্টি অনেক সময় এসব গৃহস্থালি মুরগির ডিমের চাইতেও বেশি হয়। কারণ তাদের নিয়মিত ভালো মানের ফিড দেয়া হয়।
ডিমের কুসুমের সঙ্গে পুষ্টির সংযোগ
ডিমের পুষ্টিগুণের সঙ্গে এর খোলসের রঙের সংযোগ না থাকলেও ডিমের কুসুমের রঙের প্রভাব আছে। পুষ্টিবিদদের মতে, যে ডিমের কুসুমের রং যতো গাঢ় সেই ডিমে ভিটামিন এ, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদানের মাত্রা ততো বেশি। ওই ডিমের স্বাদও বেশি।

আবার ডিমের কুসুমের রংও নির্ভর করে মুরগি কী খাচ্ছে তার ওপর। ক্যারোটিনয়েড নামের এক রকম রাসায়নিকের প্রভাবে ডিমের কুসুমের রং গাঢ় হয়। অনেক খামারে ডিমের কুসুমের রং গাঢ় করতে মুরগিকে ক্যারোটিনয়েড জাতীয় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। আবার কোথাও মুরগিকে লাল ক্যাপসিকাম খাওয়ানো হয়।
যেহেতু ডিমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ মুরগির খাদ্যের ওপর নির্ভর করে তাই বলা যায়, একই ধরনের খাবার দিলে স্বাদ ও পুষ্টিতে লাল আর সাদা ডিমে তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এনএম