images

লাইফস্টাইল

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের নানা জটিলতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক

০২ মার্চ ২০২৪, ০২:০৫ পিএম

কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখার সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। এর সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। এসময় শারীরিক তো বটেই, মনেরও নানা পরিবর্তন হয়ে থাকে। এসব জটিল প্রক্রিয়া সামলানো অভিভাবক তো বটেই, সন্তানের নিজের পক্ষেও অনেকসময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর সুরক্ষায় করণীয় কী, জানুন বিশেষজ্ঞের মত- 

পিউবার্টি ও অ্যাডোলেসেন্স

এই দুটি পরিভাষা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। শৈশব আর যৌবনের মাঝের অবস্থাকে অ্যাডোলেসেন্স বলে। পিউবার্টি তারই অংশ। অধিকাংশ ছেলের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি আসে ১২ বছর থেকে। এই সময়ে তাদের যৌনগ্রন্থি সক্রিয় হয়ে ওঠে। একাজে সাহায্য করে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। এই গ্রন্থি থেকে যে গোনাড-সক্রিয়কারী গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, সেগুলো ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। ফলে তাদের দেহে নানা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। 

পাশাপাশি ডোপামিন, গ্লুটামেট, সেরেটোনিনের মতো নিউরোহরমোন নানা মানসিক পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে। প্রসঙ্গত, ডোপামিন, সেরেটোনিন-কে হ্যাপি হরমোন-ও বলা হয়। কারণ এসব হরমোন মানুষের মেজাজ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।

boy2

শারীরিক পরিবর্তন 

হরমোনের ঠিকমতো নিঃসরণ না হলে, বয়ঃসন্ধিতে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এর কিছুটা মেকানিক্যাল এবং কিছুটা ফিজিয়োলজিক্যাল। 

জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডল এর মতে, এসময় লং বোনের গ্রোথ সবচেয়ে বেশি হয়। ফলে ছেলেদের হাত-পা ধড়ের তুলনায় লম্বা হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, গ্রোথ পেইন-ও হয় এই সময়ে। সারা শরীরে ব্যথা হয়, কিন্তু চিকিৎসাযোগ্য কোনও কারণ পাওয়া যায় না। 

বয়ঃসন্ধিকালে অনেকের ওজনও বেড়ে যায়। এসময় তারা বেশি মাত্রায় বাইরের খাবার খেতে শুরু করে। তাদের শরীরও সেটা দাবি করে এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে এমনটা ঘটে। ফলে বিভিন্ন অংশের কোলাজেন টিসুর ওপরে টান পড়ে। তার থেকেই এই ব্যথাটা হয়। 

কোনো কোনো ছেলের এই সময়ে গাইনোকোম্যাস্টিয়া হতে পারে। অর্থাৎ, মেয়েদের মতো তাদের ব্রেস্ট এনলার্জমেন্ট হতে পারে। তবে এটি নিয়ে বেশি চিন্তা করার কারণ নেই বলে পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. মণ্ডল। বয়ঃসন্ধিকালে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি সাময়িক একটি শারীরিক পরিবর্তন যা দুই বছর দেখা যায়। এরপর সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

boy3

বয়ঃসন্ধিকালে ভোকাল কর্ডের পরিসর বেড়ে যায়। যার ফলে গলার স্বরে পরিবর্তন ঘটে। গায়ে পুরুষালি গন্ধ প্রকট হয়, মুখে ব্রণ হয়। সেবাসিয়াস গ্রন্থির সেবাম নামক এক প্রকার নিঃসরণের কারণে এগুলো হয়ে থাকে। 

গোনাল গ্রন্থির বৃদ্ধির পরে ছেলেদের যৌনাঙ্গ বাড়তে শুরু করে। অনেক ছেলের যৌনাঙ্গের প্রিপিউস প্রথম দিকে ঠিকমতো খোলে না। এক্ষেত্রেও প্রথম দিকেই চিন্তার কিছু নেই বলে জানান ডা. মণ্ডল। তবে হরমোন নিঃসরণের অপ্রতুলতার কারণে এমন হলে বা যৌনাঙ্গ আকারে অতিরিক্ত ছোট থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে টেস্টোস্টেরনের স্তর পরিমাপ করতে হবে।  

যদি দেখা যায় গোনাডের আকার ঠিক রয়েছে এবং সিমেন নিঃসরণের প্রকাশ ঘটে, তখন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। যৌনাঙ্গের আকার বৃদ্ধি করতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। স্বাভাবিক যৌবনের গতি ঠিক আছে বোঝা যায় যদি রাত্রিকালীন পেনাইল ইরেকশন (বিশেষ করে ভোরের দিকে), ওয়েট ড্রিম (অনেকে নাইট ফল বলেন) ও পুরুষসুলভ মানসিক পরিবর্তনগুলি ঘটে। এসব অভ্যাসে প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগতে পারে, কিন্তু এগুলো সবই স্বাভাবিক। বরং এগুলো না হলে চিন্তার বিষয় হবে। 

boy4

মানসিক পরিবর্তন

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, বয়ঃসন্ধির সময়ে ছেলেদের ঠিকমতো গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সমাজ ও পরিবেশের বড় ভূমিকা থাকে। এখনকার দিনে মনের দিক থেকে ছেলেরা কিছুটা বড় হলেও পরিবার-পরিজন সেটা ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারেন না এবং সামলাতে পারেন না। 

শুধু তা-ই নয়, বয়ঃসন্ধির বিষয়টি নিয়ে ছেলেরা নিজেরাও বিহ্বল হয়ে পড়ে। তাই তাদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শরীর বা সত্তা হওয়া সত্ত্বেও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বেশির ভাগ ভূমিকাই সে পালন করতে পারে না।

গবেষণায় দেখা গেছে ১৪-১৬ বছরের ছেলেদের মধ্যে ‘কগনিভিটভ এবিলিটি’ অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা জীবনের লক্ষ্য স্থির করা, প্রায়রিটি ঠিক করা... প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই হয়ে যায়। কিন্তু বড়দের যে অভিজ্ঞতা থাকে, তাদের তখনও তা আসে না। 

boy5

আমাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের যে অংশ, যেটি আমাদের যুক্তি দিয়ে কোনো বিষয়কে বিচার করতে সাহায্য করে, ২২-২৩ বছরের আগে পুরোপুরি পরিণত হয় না। ফলে বয়ঃসন্ধিতে অনেক সময়েই বিপথে চালিত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

কিছু ছেলের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে ‘আর্লি পিউবার্টি’ চলে আসে। সময়ের আগে বয়ঃসন্ধি চলে আসায়, তার শরীরিক গঠনে পরিবর্তন এলেও, মস্তিষ্ক অনেক সময়ে পরিণত হয় না। এক্ষেত্রে সেই ছেলেদের সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে অসুবিধে হয়। তারা অপেক্ষাকৃত বয়সে বড়দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ক্লাস পালানো, নেশা করা, অসামাজিক কাজ করা ইত্যাদির প্রতি তাদের প্রবণতা বাড়ে। 

বয়ঃসন্ধিকাল পার করা সন্তানের অভিভাবকদের করণীয় 

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, বয়ঃসন্ধিতে তাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে। এসময়ে তারা অবধারিত ভাবে চাইবে স্বাধীনচেতা হতে। ডা. আবীর মুখোপাধ্যায়ের মতে, বাবা মায়েদের সেই স্বাধীনতা সন্তানদের দেওয়া উচিত। তবে সন্তান যেন খেলা, আড্ডা দেওয়া, গেম খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাও ঠিক মতো করে সেদিকে নজর দিতে হবে। 

মা-বাবা ও সন্তানের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপোড়া থাকলে বয়ঃসন্ধিকাল পার করা সহজ হবে। 

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার 

এনএম