images

লাইফস্টাইল

সংগ্রামী ৩ মায়ের ‘বাবা’ হয়ে ওঠার গল্প

নিশীতা মিতু

০৮ মে ২০২২, ০৩:০০ পিএম

সন্তানের জন্য নিজের সব সুখ আহ্লাদ ত্যাগ করতে সদা প্রস্তুত থাকেন মা। যেকোনো পরিস্থিতিতে সন্তানকে পরম মমতায় আগলে রাখেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক নারীই সন্তানদের জন্য হয়ে যান বাবা। একাই মানুষ করেন সন্তানদের। এমনই তিন জন মায়ের গল্প ঢাকা মেইলকে বলেছেন তাদের সন্তান। 

সিন্ধু নীগারের পুরো জগতজুড়ে এক মায়ের বাস। মা কীভাবে বাবা হয়ে উঠলেন সে গল্প করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখের আগ পর্যন্ত আম্মু ছিল আমার শত বায়নার জায়গা। কী পরবো, কী খাব থেকে শুরু কীসে আমাকে মানাবে কিংবা মন খারাপের কারণ-সবকিছুর সঙ্গী ছিলেন তিনি। 

কিন্তু সেদিনের পর জীবনের সবকিছুর সারথী আম্মু। কী করতে হবে, কোথায় করতে হবে, কী বলতে হবে, কোথায় বলতে হবে- সবকিছুই আম্মু শিখিয়েছেন। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমি নতুন করে শিখলাম সব। বাবা ছাড়া মেয়েদের এই সমাজে নানা বিধিনিষেধ মানতে হয়। সব বাধা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি আম্মুর জন্যই। কারণ তিনিই হয়ে উঠেছিলেন আমার ঢাল।  

এভাবেই এক পা দু পা করে এসএসসি আর এইচএসসি শেষে নতুন যুদ্ধে নাম লিখালাম আম্মু আর আমি। ভার্সিটির ভর্তি যুদ্ধ। পাশও করে গেলাম আল্লাহর রহমতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। এই স্বপ্ন পূরণে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন যে মানুষটি তিনি হলেন আম্মু। তিনি আমার আব্বু হয়ে উঠে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করিয়েছেন। আমার সমাবর্তনে আমার পাশে ছিলেন গর্ব নিয়ে।’

সন্তানদের জন্য মাকে কষ্টের ওপর পাথর চাপা দিতে হয়। চোখের জল মুছে নামতে হয় জীবন সংগ্রামী। এমনই একজন সংগ্রামী নারী শারমিন রিমার মা। চোখের সামনে মা কে বাবা হয়ে উঠতে দেখেছেন তিনি। রিমা বলেন, ‘মধ্যবিত্তের সংসারে ৪ ভাইবোন নিয়ে খুব সুখের পরিবার ছিল আমাদের। ছোটবোনের জন্মের ১৫ দিন পর হাতভর্তি মিষ্টি আর ফল নিয়ে বাবা এলেন ঢাকা থেকে বোনকে দেখতে। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা না ফেরার দেশে চলে যান, যা আমরা জানতেও পারিনি। কাকারা গিয়ে বাবাকে দাফন করে আসেন আজিমপুরে। 

সপ্তাহখানেক পর মা জানলেন বাবা নাই। এদিকে, সংসারে রোজকার বাজার শেষের পথে। ১ মাস বয়সী বাচ্চা কোলে নিয়ে মা শুরু করেন জীবনযুদ্ধ। মাকে দেখলাম চোখ মুছে বাবা হয়ে যেতে। ২২ বছর ধরে আমাদের বাবা-মা দুজন হয়েই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মাচ।

থাকার একটা ঘর ছিল না আমাদের। ঝুপড়ি ঘরে থেকে ৪ ভাইবোনকেই মা পড়াশোনা করিয়েছেন। বড় আপু অনার্স পাশ করার পর বিয়ে দিলেন। ভাইয়া ডিপ্লোমা পাস করে এখন চাকরি করছেন। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ শেষ করে চাকরি খুঁজছি। আর ছোট বোন ইডেন কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে। আমাদের শিক্ষা বা কর্মজীবন সবটার কৃতিত্ব তাই বাবা হয়ে ওঠা মায়ের।’ 

মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সুমাইয়া ইসলাম সিনথীয়া বলেন, ‘জীবনে চলার পথে যেই সমস্ত ভুল করেছি দক্ষ কারিগরের মতো শুধরে দিয়ে কাছে টেনেছেন মা। আব্বুকেসহ পুরো পরিবারকে মিথ্যা বলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে যদি না আমাকে ভলান্টিয়ারিং কাজ করার উৎসাহ না দিতেন তাহলে হয়তো আজ এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। 

মা আছেন বলেই বাবা না থাকার অভাবটা লুকিয়ে রাখতে পারি। মা সুন্দর, অপরূপা। আমার চোখে তিনি শ্রেষ্ঠ মা। অনেক ভালোবাসি আম্মুকে। আব্বু তো মাঝ রাস্তায় হাত ছেড়ে চলে গেছেন। আম্মু যেন কখনো না যান। তার জন্যই আমি আজকে সিনথীয়া।’

এনএম/এজেড