লাইফস্টাইল ডেস্ক
১৮ জুন ২০২৩, ০৬:৪৯ পিএম
বাবা দিবসের সন্ধিক্ষণে নিজের ছেলের প্রথম জন্মদিন। অনুভূতিটা কচুপাতার উপরে জ্বলজ্বল করতে থাকা পানির মতোই, হিরার মতো জ্বলছে। আর সারাদিন সারাক্ষণ চোখের সামনে ধরে রাখতে মন চায়। বাবা হয়ে আমি নিজেকে নতুনভাবে চিনেছি। বাবা হবার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আমি বুঝি আমার নিজের বাবাকে। হয়তো আমার বাবাও আমাকে এভাবেই ভালবেসেছেন, কিন্তু আমি টের পাইনি, বুঝতে পারিনি, বাবা বুঝতে দেননি।
আমার সন্তানের মায়ের কষ্ট দেখে অনুভূত হয়েছে আমার মায়ের কষ্ট। ঠিক এভাবেই আমার মা'ও আমাকে নিয়ে কষ্ট করেছেন। বাবা হয়ে দুনিয়াটা পাল্টে গেছে, নিজের দিকে তাকানোর সময় নেই এখন আর। এখন সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সব সহ্য করার ক্ষমতাও হবে যেন।
বাবা হচ্ছেন একটা জাহাজের মতোন, আমাদের যার যা বোঝা আছে তা বাবার উপর চাপিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত হয়ে যাই। আর বাবা আমাদের সকল চিন্তা একার মাথায় নিয়ে দিনরাত একাকার করে দেন। বাবা হয়তো মুখ ফুটে বলেন না, ভালোবাসি! হয়তো চোখ ফুলিয়ে কান্নাও করেন না। বাবারা চায়ের দোকানে শেষটুকু চায়ের সাথে সকল কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা ফেলে দিয়ে ঘরে চলে আসেন, আমাদের কাছে। বাবাকে নিয়ে আমাদের হাজারটা অভিযোগ, কিন্তু আমরা আমাদের সকল চাপ, ভার বাবার উপরে অনায়াসে চাপিয়ে দিতে পারি, আর তা সয়ে যান নীরবে নিভৃতে, মুখ ফুটে একটা বার বলেনও না যে তারও কষ্ট হচ্ছে! বাবাদের আসলে কষ্ট হয় না, বাবারা সর্বংসহা!
বাবাকে একটা কিছু চেয়ে বসি, আমাদের মনে হয় বাবা এড়িয়ে যাচ্ছেন, বাবা শোনেননি! কিন্তু আসলে বাবা ভয় পান! বাবা না দিতে পারার যন্ত্রণায় ডুকরে ডুকরে কাঁদেন।
বাবা হয়তো কখনো মুখের উপর আমাদের না করে দেন। বলে দেন, পারব না। কিন্তু কতটা কষ্টের পাথর বুকে চাপা দিয়ে এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপরে দাঁড়িয়ে যে বাবাকে বলতে হয় তা শুধু বাবাই জানেন! পারব না বলে দিয়ে বুকের মধ্যে এক অব্যক্ত বেদনা নিয়ে অস্থির সময় কাটান বাবা। কারণ বাবা জানেন যে তাকে তো পারতেই হবে।
আসলে আমাদের মুখে এক টুকরো হাসি ফোটানোর জন্যই তো বাবার সবটুকু চেষ্টা! নিজের সকল ইচ্ছা ভালবাসা আবেগ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র আমাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য নিজেকে সপে দেন বাবা।
বাবারা আমাদেরকে অভাবের বেদনাটা বুঝতে দেন না। কখনোই বুঝতে দেন না যে তার পকেটটা খালি, এটাও বুঝতে দেন না যে আমরা চিপস কিংবা চকলেটের আবদার করেছি, এটা আমাদের বিলাসিতা। বাবা হয়তো দাঁতে পোকা হবে কিংবা পেট খারাপ করবে বলে পার করে দেন কিন্তু তিনি মনেপ্রাণে চান যে অন্তত একটা চিপস হাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। তিনি নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে হলেও চান যে একটা চকলেট হাতে পেয়ে আমাদের মুখে ভুবন ভুলানো হাসি ফুটে উঠুক। যেই হাসিটুকু পুঁজি করে বাবারা বেঁচে থাকেন। কোনো উৎসবের সময় বাবা আমাদের কেনাকাটায় কম পড়বে বলে নিজে কিছুই নিতে চান না। বলে দেন, আমারতো আছে! আসলে বাবার সত্যিই আছে।
বাবার আছে, আমাদেরকে দিয়ে এক অনন্য তৃপ্তির সুখ! ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এক অসামান্য প্রাপ্তি! আমাদের অসুখ হলে মায়েরা হাউমাউ করে কাঁদেন, কেঁদে পৃথিবী কাঁপিয়ে দেন। কিন্তু বাবা কাঁদেন না। বাবা বুকের উপরে পাথর চাপিয়ে লড়াই করেন। বাবার চোখে কান্না দেখিনা বলে আমরা হয়তো আফসোস করি কিন্তু বাবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আমরা দেখি না। বাবারা সেটা আমাদের দেখতে দেন না।
বাবা হচ্ছে আমাদের মাথার উপরে ইস্পাত কঠিন এক ছাদের মতো। আমাদের গায়ে একটা কাঁটার আঘাত লাগার আগে বাবার বুকে শত গুলি যাবে তবুও বাবা আমাদের অক্ষত থাকার জন্য কতটা নির্ভীক বাবা! যতদিন আছেন ততদিন আমরা হয়তো টেরই পাই না যে আমাদেরকে বুকে আগলে রেখে কত দুঃখ বেদনা কত ছুরি চাকুর আঘাত সহ্য করেছেন বাবা। হারিয়ে গেলে বুঝি কী যে ছিল আমাদের।
বাবাকে এত কথা বলার অনেক কারণ আছে, বাবা আমাদের জন্য কতটা কষ্ট করেন কতটা যুদ্ধ করেন তা আমরা নিজের চোখে দেখতে পাই না কিন্তু আমরা ধারণাও করতে পারি না সেই কষ্টের কথা।
একটাবার ভেবে দেখি শুধু, বাবা আমাদের খাওয়ানোর জন্য ভালো রাখার জন্য যত কষ্ট করেন তার প্রতিদান কি আমাদের দেওয়া উচিত না? বাবাকে কি প্রতিদান দেওয়া সম্ভব? বাবা কি আমাদের কাছে কিছু চান? নিশ্চয়ই চান না, আমরা একটা ভালো কিছু করলে, ক্লাসে ফার্স্ট হলে বাবার বুকটা গর্বে ভরে ওঠে, বাবা তো শুধু সেই স্বপ্ন লালন করেই এত কষ্ট করে যাচ্ছেন। এবার কি ভাবা যায়? বাবার কষ্টের মূল্য দিতে কী কী করতে হবে? কী করা উচিত?
এনএম