images

লাইফস্টাইল

বাবার এক দীর্ঘশ্বাসে আমার চোখে জল চলে এসেছিল

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৮ জুন ২০২৩, ০২:০৩ পিএম

আমি ভাবতাম, সবার বাবা ছেলেদের শাসন করে। কিন্তু আমার বাবা শাসন তো দূরের কথা কখনো গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতেন না। সবসময় শুধু আদর আর ভালোবাসাই দিয়েছেন। তখন অবশ্য বাবার শাসনটা অনেক মিস করতাম।

একদিন মা আমাকে খুব মেরেছিলেন। তখন বাবা বাসায় ছিলেন না। বাবা বাসায় আসার পর আমাকে কান্না করতে দেখে তার মাথা গরম হয়ে যায়। অমনি মাকে একটি চড় মেরেছিলেন। আর বলেছিলেন, ‘ছেলেকে কেউ এভাবে মারে?!’ সেদিন রাগ করে বাবা-মা কেউ কিছু খেলেন না। অথচ আমাকে ঠিকই খাইয়ে ছিলেন। বাবা-মা বুঝি এমনই হয়!

প্রতিটি ছেলে-মেয়ে প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে। আমারও প্রথম শিক্ষা বাবার কাছ থেকে। তার আদর্শে বড় করেছে আমায়। শুধু একটি কথাই বারবার বলতেন, ‘বাবা, কখনো কারো উপকার করতে না পারো, ক্ষতি করো না’। বাবার কথাটা মনের মাঝে গেঁথে নিয়েছি। কখনো কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করিনি।

আমার যত রাগ ছিল সব বাবা সহ্য করে নিতেন। আজও মনে পড়ে সেই কথা। নবম শ্রেণীতে উঠলাম। বন্ধুরা সবাই স্কুল হোস্টেলে থাকবে। আমিও বায়না ধরলাম হোস্টেলে থাকব। কিন্তু বাবা না করলেন। খুব রাগ হয়েছিল বাবার ওপর। ভাবলাম হোস্টেলে না দিলে পড়ালেখাই করব না। রাগ করে দুইদিন না খেয়ে ছিলাম।

সেদিন রাতে বাবা মায়ের সাথে কথা বলছিলেন। আমি পাশেই শুয়ে আছি, তারা ভেবেছিলেন আমি ঘুমিয়ে। কিন্তু আমি তাদের সব কথা শুনেছি। মা, বাবাকে বললেন, ‘ছেলের শখ স্কুল হোস্টেলে থাকার, তুমি ওকে হোস্টেলে দিয়ে দাও, শখটা পূরণ হোক’। আর বাবা একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আম্মুকে বললেন, ‘ছেলে হোস্টেলে থাকলে আমি ঘরে কীভাবে থাকব? ছেলেকে না দেখলে আমার ভালো লাগে না। ছেলেটা যে আমার কলিজার টুকরা।’

সেদিন বাবার একটি দীর্ঘশ্বাসে আমার চোখে জল চলে এসেছিল। কোনো বাবা ছেলেকে এতটা ভালোবাসতে পারে। আমার বাবা কে না দেখলে বুঝতাম না হয়তো।

এসএসসি শেষ করলাম। রেজাল্ট শোনার পর বাবাকে যতটা খুশি দেখলাম তারচেয়ে বেশি হতাশা দেখলাম বাবার চোখে মুখে। তখন বুঝিনি কেন এই হতাশা।

তখন আমি তো শহরে যাব, আর কলেজে ভর্তি হব। এটা ভেবেই আনন্দে আত্মহারা। বাবার হতাশার কারণটা পরে ঠিকই বুঝতে পারলাম। আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য দূরে চলে যাব। এজন্য বাবার হতাশার শেষ নেই। কিন্তু বাবার স্বপ্ন আমি পড়ালেখা করে অনেক বড় হব। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দূরের কলেজে ভর্তি করালেন।

যেদিন বাড়ি ছেড়ে কলেজে নতুন একটি অচেনা জায়গায় পা বাড়ালাম, সেদিন বুকটা হাহাকার করছিল। মনে হচ্ছিল আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা বাড়িতে রেখে যাচ্ছি। মূল্যবান জিনিসটা যে আমার বাবা।

গাড়িতে করে শহরের নতুন কলেজে যাচ্ছি। বাবা আমার সাথে আসতে চাইলেন কিন্তু বড় একটা সমস্যার কারণে আর পারলেন না। মাত্র তিন ঘণ্টার রাস্তা, অথচ এই তিন ঘণ্টায় প্রায় ত্রিশ বার কল দিলেন। ‘কতটুকু আসলাম, আর কতক্ষণ, সাবধানে যাবি, গিয়ে আবার ফোন দিবি’— আমাকে নিয়ে চিন্তার কোনো শেষ নেই।

একটু একটু করে আরও বড় হতে লাগলাম। পড়ালেখায় ব্যস্ত সময় পার করতে লাগলাম। দূরের শহর হয়ে গেল আমার স্থায়ী ঠিকানা। মাসে একবার বাবার কাছে যেতাম। তবে প্রতিদিন মুঠোফোনে বাবা আর মায়ের সাথে কথা হতো। কিন্তু তাদের দেখার জন্য মনটা হাহাকার করতো। তা কখনো বুঝতে দিতাম না। অনেক ভালোবাসি তোমায় বাবা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ

এনএম