images

আইন-আদালত

‘জগলুলের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের বিয়ে অবৈধ’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৭ জুন ২০২৩, ০৪:৫১ পিএম

প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (৭ জুন) এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

এই রায়ের ফলে স্ত্রী হিসেবে আঞ্জু কাপুরকে দেওয়া জগলুল ওয়াহিদের বাড়ির উইলের আইনগত ভিত্তি থাকল না।

ঢাকা মেইলকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। তিনি বলেন, ওই বাড়িতে এখন বসবাস করা জগলুল ওয়াহিদের কন্যারা মুসলিম আইন অনুযায়ী তাদের সম্পত্তির অধিকার পাবেন।

মনজিল বলেন, আমরা জেনেছি আঞ্জু কাপুর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গৃহকর্তার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। একপর্যায়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত আদেশ দেন।

আদেশের পর মেয়েরা তাদের বাবা মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় প্রবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা হাইকোর্টে শুনানি হয় এবং হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিক ও হিন্দু নারী আঞ্জু কাপুরের সঙ্গে জগলুল ওয়াহিদের বিয়ে ও বাড়ির উইল করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চারজন সিনিয়র আইনজীবী (অ্যামিকাস কিউরির) অভিমত শোনেন হাইকোর্ট। অবশেষে আইনজীবীদের অভিমত বিবেচনায় নিয়ে এবং এর আগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট।

প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় পাইলট ছিলেন। জগলুল ওয়াহিদের ভাইবোনদের মধ্যে একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ।

মনজিল জানান, এ সংক্রান্ত সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ২ মেয়েকে বাড়িতে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণে ওসি গুলশানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই মামলায় মুসফিকা মোস্তফার পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ পক্ষভুক্তির আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

জগলুর হায়দার ও আঞ্জু কাপুরের বিয়ে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর বিধান অনুযায়ী অবৈধ ও বেআইনি। যেহেতু আঞ্জু কাপুরের সাথে বিয়ে অবৈধ এবং তিনি বিদেশি, সুতরাং তার সাথে সৃজনকৃত উইলের আইনগত ভিত্তি নেই।

অন্যদিকে আদালত অপর এক আদেশে মৃত জগলুল হায়দারের তিন ভাইয়ের পক্ষভুক্তির আবেদন নিষ্পত্তি করে তাদের দাবির ব্যাপারে বলেছেন, সম্পত্তির বণ্টন প্রচলিত আইনের বিধান অনুসারে হবে।

আদালত ইতিপূর্বে দেওয়া ওই বাড়িতে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ প্রত্যাহার করে ওসি গুলশানকে মনিটরিং করতে বলেছেন যাতে মেয়েদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।

শুনানিতে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর ২ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে বর-কনে উভয় পক্ষকেই হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন বা খ্রিস্টান হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বর মুসলিম হওয়ায় এ আইনের অধীন বিয়েটা অবৈধ। এছাড়া মরহুম জগলুল ওয়াহিদ আঞ্জু কাপুরকে গুলশানের বাড়িটি উইল করাটা ও বাতিল হবে কারণ একজন বিদেশিকে বাংলাদেশের সম্পত্তি উইল করা যায় না। তিনি আদালতকে জানান, ইতিমধ্যে উইল প্রবেট করার জন্য আদালতে যে মামলা করা হয়েছিল তাও ডিসমিস হয়েছে।

রুলের শুনানিতে আদালত যে ৪ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করেন তারা হলেন- সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এফ হাসান আরিফ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. নূরুল আমিন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম কামালুল আলম ও কামরুল হক সিদ্দিকি।

এআইএম/এইউ