images

আইন-আদালত

হেফাজতে মৃত্যু: বরখাস্তকৃত ২ পুলিশকে জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১১ মে ২০২৩, ০৮:৩১ এএম

রাজধানীর পল্লবী থানায় পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনির মৃত্যুর দায়ে বরখাস্তকৃত যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল হাসানকে প্রদত্ত রায়ের জরিমানার ১ লাখ টাকা করে এবং সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পুলিশের সোর্স রাসেল, সুমনকে জরিমানার ২০ হাজার টাকা করে আগামী এক মাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আসামিদের রিভিশন আবেদন শুনানি করার জন্য আগামী ২ মাসের মধ্যে এই মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১০ মে) এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী এসএম রেজাউল করিম।

রাজধানীর পল্লবী থানায় পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনির মৃত্যুর দায়ে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া তিন পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর দুই আসামি পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) সুমন ও রাসেলের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত এই রায় দেন।

দণ্ডিত আসামিদের দুজন এখনো পলাতক। তারা হলেন এএসআই কামরুজ্জামান ও পুলিশের সোর্স রাসেল।

২০১৩ সালে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণীত হওয়ার পর এ বিষয়ে এটিই প্রথম রায়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক ও তার ভাই ইমতিয়াজকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগ্-বিতণ্ডা হয়। এরপর সুমনের ফোন পেয়ে পুলিশ এসে ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায় এবং থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করে। ইশতিয়াকের অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন ইশতিয়াক হোসেনের ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।

মামলায় পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান, এসআই জাহিদুর রহমান, আবদুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা ও কনস্টেবল নজরুল এবং সোর্স সুমন ও রাসেলকে আসামি করা হয়।

আদালত মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্তকালে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করেন। 

এরপর এ মামলায় ২৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়ে আগস্ট মাসে শেষ হয়।

চার বছরে বেশি সময় বিচারকাজ চলার পর ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

এআইএম/এএস