নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম
আওয়ামী লীগ শাসনামলে র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ১৪ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ পিছিয়েছে।
অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নতুন দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন সকাল ১০টার পর গ্রেফতার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ঢাকা সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পৃথক যুক্তি উপস্থাপন করে তাদের মক্কেলদের দায়মুক্তি বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।
আদালতে হাজির করা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাবারক হোসেন।
অন্যদিকে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে এম হাসান ইমাম এবং আর বাকি তিনজনের পক্ষে আইনজীবী সুজাদ মিয়া শুনানিতে অংশ নেন।
এদিকে আসামিপক্ষের অব্যাহতির আবেদনের বিপরীতে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরুর আর্জি জানান।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম র্যাবের টিএফআই সেলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
আজ আদালতে হাজির করা ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
এই মামলার পলাতক আসামিরা হলেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম। পলাতক আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য আদালত আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যা মামলায় সেনা কর্মকর্তা রেদোয়ানুল ইসলাম, রাফাত বিন আলম ও দুই কর্মকর্তাসহ চারজনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আজ শুনানি করবেন বলে জানা গেছে। এই মামলায় রেদোয়ানুল ইসলাম ও রাফাত বিন আলম গ্রেফতার রয়েছেন এবং তাদেরও আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
এফএ