images

আইন-আদালত

হাসিনার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে। মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ। শুনানির শুরুতেই চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকের দিনটি দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। 

তিনি জানান, এই মামলার বিচার শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি ন্যায়বিচার ও ইতিহাসের দায় পরিশোধের সুযোগ।

রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহাম্মদ মোহিতুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য শুরুর আগে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

বিচারকার্য সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে। আদালতের এই উদ্যোগকে অনেকেই স্বচ্ছতা ও জনসচেতনতার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

মামলায় আসামির তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামলার অন্যতম আসামি মামুন ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালে দায় স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি জানান, আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের দায় তিনি স্বীকার করছেন এবং আদালতকে সহযোগিতা করতে চান।

এর আগে, ১০ জুলাই এই মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। ওইদিন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীদের দায়িত্বরত রাখা হয় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে, যারা বর্তমানে পলাতক। মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। অভিযোগ গঠনের সময় মামুন উপস্থিত ছিলেন এবং আদালতের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী ও নাগরিক আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সহিংস ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ উসকানিমূলক বক্তব্য এবং নির্দেশেই এসব হামলা চালানো হয়। এতে দেড় হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষ নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ২৫ হাজার। মামলায় মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

আদালত বলেছে, আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম চলবে। গত ১৭ জুন ট্রাইব্যুনাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। তারা সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় ‘ফরেন ট্রায়াল’ বা অনুপস্থিতিতে বিচার চলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয় গত ১ জুলাই। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। সেদিন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। তবে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দেয়।

মামলার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে আজই। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তার সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। আমি অপরাধ স্বীকার করছি এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে চাই। আদালত তার বক্তব্য আমলে নিয়ে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেছে।

এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি বিচার। এর আগে আদালত অবমাননার মামলায় ২ জুলাই তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া গুম, খুন, নির্যাতন ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা চলমান রয়েছে, যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ যথাক্রমে ২৪ আগস্ট ও ১২ আগস্ট নির্ধারিত আছে।

চলমান মামলার প্রেক্ষিতে বিচারক ও প্রসিকিউশন বলছেন, এই বিচারকাজ শুধু অপরাধীর শাস্তি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ইতিহাসকে তুলে ধরার একটি প্রয়াস। জনসাধারণের সামনে সরাসরি সম্প্রচারিত এই বিচারকাজ একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিফলন হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

এইউ