images

আইন-আদালত

দেশের বাইরে তারেক রহমান ও জুবাইদার একটুও সম্পদ নেই: আইনজীবী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৬ মে ২০২৫, ১০:৩৯ পিএম

দেশের বাইরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের কোনো সম্পদ নেই। শুধু এই দুজনই নয়, দেশের বাইরে জিয়া পরিবারেরও কোনো সম্পত্তি নেই। আর দেশের ভেতরে যে সম্পত্তি রয়েছে তার পুরোটাই বৈধ। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদ তাদের নেই।

সোমবার (২৬ মে) দুর্নীতির অভিযোগে তিন বছরের সাজার বিরুদ্ধে ডা. জুবায়দা রহমানের আপিল শুনানির সময় আদালতে এসব কথা বলেন তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান।

একইসঙ্গে দুদকের মামলায় তিন বছরের সাজার বিরুদ্ধে ডা. জুবাইদা রহমান রহমান ও তারেক রহমানও খালাস পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই আইনজীবী। 

হাইকোর্ট এ মামলায় আগামী বুধবার (২৮ মে) রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছে।

শুনানি শেষে ডা. জুবাইদা রহমানের আইনজীবী বলেন, আজকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় আদালতের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

প্রথমত, তারেক রহমানের নামে যেসব সম্পত্তিগুলো দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তার নামে সেসব সম্পত্তি কিংবা তার একটি টাকাও ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের বাইরে নাই। ম্যাডাম খালেদা জিয়া অনেকবার বলেছেন- বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নাই। আজকে আমরা ওনার কথাই আদালতের কাছে তুলে ধরেছি। ডা. জুবাইদা রহমানের নামে যে সম্পত্তি রয়েছে তার একটাও তার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত না। তার একটাও সম্পত্তিও অসাধু উপায়ে অর্জিত না। আর একটি টাকা বা সম্পত্তি এই ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের বাইরে নাই। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের বাইরে জিয়া পরিবারের কোনো ঠিকানা নাই।

দ্বিতীয়ত হলো, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল হোসেন সড়কের যে বাড়িতে ওনাদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের দুই সন্তান ও ওনার স্ত্রীকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। সেই বাড়িটাকেও এই মামলায় দুদক বলছে যে, এটা তারেক রহমানের অর্জিত সম্পত্তি এবং এটা অবৈধ সম্পত্তি। অথচ নিয়মের মধ্যে থেকে সরকার ওই বাড়িটি তাদের বরাদ্দ দিয়েছিল। তাদের গুলশানে আরেকটি সম্পত্তি আছে। সেটাও ১৯৮২ সালে ৩৩ টাকার স্ট্যাম্প করে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকার ওনাদের মালিকানা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সরকারি সম্পত্তি সরকার জিয়াউর রহমানের পরিবারকে দিয়েছে। গুলাশানের সম্পত্তি এবং ক্যান্টনমেন্টের মইনুল হোসেন সড়কের বাড়ি-এই দুটি সম্পত্তি ওনি (তারেক রহমান) নাকি অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন। এমন অভিযোগ এনে তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ওই সম্পত্তিকে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিচারের নামে এ রকম প্রহসন আমি আমার ওকালতি জীবনে কখনও দেখিনি।

তিনি বলেন, এই মামলায় সবচেয়ে বৈপরীত্য বিষয় হলো- বছরের পর বছর গরিব মানুষ কোর্ট-কাচারির বারান্দায় ঘুরতে থাকে অথচ বিচার পায় না। কিন্ত এই মামলায় যেদিন চার্জ গঠন করা হয়, তার দুই মাসের মধ্যে ৪২ জন সাক্ষী নিয়ে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানকে দোষী সাবস্ত করে ওনাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। আমি আদালতকে বলেছি, এমন যদি হতো কোনো মামলায় দুই মাসের মধ্যে এদেশের সাধারণ মানুষ বিচার পেত, তাহলে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে, কোর্টের কাছে এ কথা বলে আমাদের আর আহাজারি করা লাগত না। দুই মাসে ৪২ জন সাক্ষী নিয়ে যদি বিচার শেষ করা যেত, তাহলে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে কোন মামলা পেন্ডিং থাকত না। সব মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যেত। আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষ সমান।

তিনি আরও বলেন, ডা. জুবাইদা রহমান যথাযথভাবে আপিল করেছেন এবং এই আদালতে তার শুনানি হয়েছে। আমাদের সামনে নজির আছে- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা, গিয়াস উদ্দিনের মামুনের সঙ্গে আরেকটি মামলা, খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে জিয়া চ্যারিটেবল এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলা- সেই মামলাগুলোতে তারেক রহমানের আপিল ছিল না। কিন্তু প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে আমরা আবেদন করে বলেছিলাম- আদালত যদি দেখে এই মামলা প্রমাণ হয় নাই, সেক্ষেত্রে যিনি আপিল করতে পারেননি, এই রায় যেন যিনি আবেদন করতে পারেনি তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়। সেটা যেন বিবেচনা করা হয়। আমাদের সে প্রার্থনা উচ্চ আদালত রেখেছিল। ইতোমধ্যে তিন-চারটি মামলায় তারেক জিয়াকে খালাস দিয়েছে।

এসএম শাহজাহান বলেন, আমরা আজকে আদালতের কাছে নিবেদন করেছি, জুবাইদা রহমানের আপিল শুনতে গিয়ে যদি দেখেন তারেক রহমানের কোনো সম্পত্তি অবৈধ উপায়ে অর্জিত না, অথবা জ্ঞাত আয় বর্হিভূত না, তাহলে যদি জুবাইদা রহমান খালাস পান, খালাসের সেই সুবিধা (এটা যদিও নন অ্যাপিলিং অ্যাকিউসড- অর্থাৎ সাজার বিরুদ্ধে আবেদনকারী নন) যেন তারেক রহমানকেও দিতে পারেন। 
তিনি আরও বলেন, আদালত ইতোপূর্বের এমন রায়ের যেসব নজির রয়েছে সেগুলো দাখিল করতে বলেছে। আমরা আগামীকাল সেগুলো আদালতে দাখিল করব। এ বিষয়ে আগামী বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী ন্যায় বিচার পাব। ডা. জুবাইদা রহমান খালাস পাবেন এবং ওনার স্বামী তারেক রহমানও তিনিও এই মামলা থেকে খালাস পাবেন।
 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান ইচ্ছাকৃতভাবে পলাতক হন নাই। তাদের জোরপূর্বক দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর পলাতক দেখিয়ে কারও বিচার করতে হলে ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৮৭, ৮৮ এবং ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্টমেন্টের সেকশন-৬ এর সাব সেকশন ১ এ, এই প্রসিডিউটরটা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা হয় নাই। এটা না করে ওনাদের অনুপস্থিতিতে তাদের (তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান) পলাতক দেখিয়ে বিচার করা হয়েছে। কিন্তু এদেশের ১৮ কোটি মানুষ জানে, ওনারা দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। ওই সময় ওনাদের জোর করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। 
এআইএম