জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২০ মে ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানিতে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নেতারা সংঘবদ্ধ চক্রের অবিচারের শিকার (সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিস) হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানিতে তার আইনজীবী এমন কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে আজসহ দুই দিন শুনানি করে আসামিপক্ষ।
নানা আইনি যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘এ টি এম আজহারুল ইসলামসহ মতিউর রহমান নিজামী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী- তাঁরা সকলেই সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিসের (সংঘবদ্ধ চক্রের অবিচারের) শিকার হয়েছেন। কাদের মোল্লাসহ সকলেই একটি সংঘবদ্ধ অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছেন।'
এই সিন্ডিকেটে কারা ছিলেন, কীভাবে ছিলেন তার একাংশ সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার লেখা বই থেকে উদ্ধৃত করে সর্বোচ্চ আদালতে পড়ে শোনান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
একপর্যায়ে এই আইনজীবী বলেন, 'আমরা মনে করি এই রায়ের মাধ্যমে আপিল বিভাগ যদি এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেন, তাহলে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের (বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ড) যে নমুনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে কলঙ্ক থেকে আমাদের বিচার বিভাগ আংশিক হলেও মুক্ত হবে। আর আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন বলেই আজহারুল ইসলাম বেঁচে আছেন। সময় তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আপনাদের সামনে সুবিচার করার সুযোগ এসেছে। এখনই সময় তার ন্যায় বিচার পাবার।'
আপিল শুনানি শেষে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস প্রদান করবেন। আমরা এটাও মনে করি, যে নজিরবিহীন নির্যাতন এবং নিপীড়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি পার করেছে, এই রায়ের মধ্যদিয়ে তাদের সকলের মধ্যেই নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হবে।’
এদিকে, এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, 'একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার জন্য আইন প্রণয়ন এবং ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল সৎ। কিন্তু আইন এবং ট্রাইব্যুনালের ব্যবহার সঠিক হয়েছে কিনা তা বর্তমান আপিল বিভাগ নির্ধারণ করবেন।
তিনি বলেন, এছাড়া এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না তা আমরা আপিল বিভাগের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। আপিল বিভাগ পর্যালোচনা করে যেটা দেখবেন, সে সিদ্ধান্ত দেবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আর ২০২৪ সালের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচারগুলো হয়েছে, আমরা সব সময় বলে আসছি, এই বিচার সঠিক হয়নি। আসামিরা ন্যায়বিচার পায়নি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিলের রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২৭ মে দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালতে এটিএম আজহারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আজহারুল ইসলামের রিভিউ মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেন (লিভ গ্রান্ট করে) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে অনুযায়ী বিষয়টি আপিল শুনানি শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগের রায় রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
এআইএম/জেবি