জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম
একটি মামলার রায়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আশরাফুল কামাল আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েছেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা তার ওপর ডিম ছুড়ে মারেন। পরে তিনি এজলাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান।
এই আইনজীবী ঢাকা মেইলকে বলেন, আইনজীবীরা ক্ষোভ থেকে এমন কাজ করেছেন। এই বিচারপতি রাজনীতি বেশি চর্চা করেন এবং পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণ করে বিষোদগার করেন। এজন্য এক পর্যায়ে আইনজীবীরা তাকে ডিম ছুড়ে মারেন। পরে বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে একটি মামলার রায় দেন এই কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে জিয়াউর রহমান প্রাসঙ্গিক না হলেও এই বিচারপতি জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে ‘অশালীন’ মন্তব্য করেন। এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল কয়েক দিন ধরেই।
আইনজীবীরা জানান, আজ এই বিচারপতি এজলাসে উঠলে কয়েকজন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন- আপনি এই চেয়ারে বসে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। আপনার এই চেয়ারে বসার অধিকার নেই। এক পর্যায়ে তারা বিচারকের দিকে ডিম ছুড়ে মারেন।
জিয়াকে নিয়ে কী বলেছিলেন বিচারপতি?
২০১৬ সালে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তার পর্যবেক্ষণের একাংশে বলেন, ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকবাকুম করে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন, তথা রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলেন। একবারও ভাবলেন না, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। সরকারি কর্মচারী হয়ে কীভাবে তিনি রুলস ভঙ্গ করেন। ভাবলেন না তার শপথের কথা। ভাবলেন না, তিনি দেশকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করার শপথ নিয়েছিলেন। ভাবলেন না, তিনি এবং তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করতে। ভাবলেন না, তিনি এবং তারা ব্যর্থ হয়েছেন জাতীয় চার নেতাকে রক্ষা করতে। জনগণ আশ্চর্য হয়ে দেখল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের দোসর হয়ে তাদের রক্তাক্ত হাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করল। যাকে এক কথায় বলা যায় বন্দুক ঠেকিয়ে জনগণের প্রতিষ্ঠান দখল।’
বিচারপতি বলেন, ‘আমরা জানি ডাকাতরা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের যে নেতৃত্ব দেয় তাকে ডাকাত সর্দার বলে। ডাকাতি করার সময়ে ডাকাতরা বাড়িটি বা ঘরটি কিছু সময়ের জন্য অস্ত্রের মুখে দখল করে এবং মূল্যবান দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করে। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গংরা দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র এবং অবৈধ কলমের খোচায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে ভেঙে ডাকাতদের মতো অবৈধভাবে জোরপূর্বক জনগণের ক্ষমতা ডাকাতি করে দখল করেন। যে বিচার বিভাগ এবং এর বিচারকদের ওপর আইনগত দায়িত্ব ছিল সাংবিধানের সামান্যতম বিচ্যুতিকে রক্ষা করা, সংরক্ষণ করা এবং নিরাপত্তা প্রদান করা; সেই বিচার বিভাগ এবং এর তৎকালীন বিচারকরা সংবিধানকে এক কথায় হত্যা করলেন, জনগণের রায় ডাকাতি করে ‘জনগণের নির্বাচিত সংসদকে বাতিল করলেন।’
‘অপরদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিয়ম একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও আর্মি রুলস ভঙ্গ করে জনগণের রায়ে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে হত্যা করে দেশের সংবিধানকে হত্যা করে অস্ত্রের মুখে অন্যায়ভাবে অসৎভাবে হত্যাকারীদের দোসর হয়ে জনগণকে চরম অবজ্ঞা করে ক্ষমতা দখল করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী তথা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামস এবং জামায়াতে ইসলামীকে এদেশে পুনর্বাসন করেন। তাদের রাজনীতি করার অধিকার দেন। তাদের নাগরিকত্ব দেন (যে নাগরিকত্বকে আমাদের তথাকথিত জামায়াতি এবং স্বাধীনতা বিরোধী মানসিকতার বিচারকরা বৈধ বলেন)। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সংসদ সদস্য করেন এবং তাদের মন্ত্রী বানিয়ে, তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে এবং দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের সঙ্গে বেইমানি করেন। এর পরেও কি বাংলাদেশের জনগণ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারে?’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতা ও তার পরিবারের এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের শুধু দোসরই হননি, বরং তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছেন রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য ইত্যাদি বানিয়ে। তিনি আরও জঘন্য যে কাজটি করেন তা হলো, তিনি জনগণের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের হত্যার বিচার বন্ধ করে দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করেন। অর্থাৎ তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকে এই দায়মুক্তি আইন দ্বারা সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেন তিনিও জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারী এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদেরই একজন।’
এআইএম/জেবি