images

আইন-আদালত

বছরের অর্ধেক সময়ই বন্ধ, মামলা জট কমবে কীভাবে?

আমিনুল ইসলাম মল্লিক

২৬ জুন ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম

সারা দেশের আদালতে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। এমন বাস্তবতায় মামলাজট কমাতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সে সম্পর্কে নানা পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। অথচ মামলার নিষ্পত্তিকারী সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম কোর্টই বন্ধ থাকছে বছরের অর্ধেক সময়।

আদালত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, মামলাজট বাড়ার প্রধান কারণ বিচারক সংকট। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়ার সময় এসেছে।

২০২৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার দেখে বিশ্লেষণে দেখা যায়—

জানুয়ারি মাসে বন্ধ ছিল ১০ দিন। সুপ্রিম কোর্ট ঘোষিত ছুটি ছিল এক ২ দিন। সরকার ঘোষিত শুক্র ও শনিবারের ছুটি ছিল আট দিন।

ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ দিন বন্ধ ছিল সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে সরকারি ছুটি এক দিন। সরকার ঘোষিত শুক্র ও শনিবারের ছুটি ছিল আট দিন।

মার্চে বন্ধ ছিল ১৫ দিন। সরকারি ছুটি ২ দিন। শুক্র ও শনিবারের ছুটি ছিল ৯ দিন। সুপ্রিম কোর্টের ছুটি ছিল ৫ দিন।

এপ্রিল মাসের মোট বন্ধ ছিল ২৪ দিন, সরকার ঘোষিত ছুটি ২দিন। শুক্র ও শনিবারের ছুটি ৯দিন। এ মাসে অবকাশকালীন ছুটি ছিল ১৩ দিন।

অবকাশকালীন ছুটির সময় হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকটি বেঞ্চে বিচারপতিরা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মামলা পরিচালনা করছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি বসেন এ সময়। তবে পুরো সপ্তাহজুড়ে নয়।

অবকাশকালীন আদালত কোনো মামলার রায় ঘোষণা করেন না। আদালত এ সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর শুনানি করেন। এ ছাড়া জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি, বিভিন্ন মামলার শুনানি স্থগিতকরণ, কিছু কিছু মামলার আসামিদের জামিন দিতে দেখা যায়।

মে মাসের মোট ছুটি ছিল ১০ দিন। এর মধ্যে সরকারি ছুটি দুদিন। বাকি ৮ দিন ছুটি ছিল শুক্র ও শনিবার।

জুন মাসে ছুটি ছিল ১৪ দিন। এর মধ্যে সরকারি ছুটি ১০ দিন। ৪ দিন ছিল সুপ্রিম কোর্ট ঘোষিত ছুটি।

জুলাই মাসের ১৪ দিন ছুটির মধ্যে শুক্র ও শনিবারের ছুটি ছিল ৯ দিন। এ মাসে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষিত ছুটি ছিল ৫ দিন।

আগস্ট মাসের ছুটি ৯ দিন। এর মধ্যে সরকারি ছুটি ১দিন এবং শুক্র ও শনিবারের ছুটি ৮ দিন।

পুরো সেপ্টেম্বর মাসই সুপ্রিম কোর্ট ছুটিতে ছিল। এর মধ্যে সরকারি ছুটি ২ দিন। শুক্র ও শনিবারের ১০ দিন। অবকাশকালীন ছুটি ১৮ দিন।

অক্টোবর মাসে মোট ছুটি ছিল ১৯ দিন। এসব ছুটি শুক্র ও শনি এবং সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত।

নভেম্বর মাসে ছুটি ছিল ৮ দিন। সবগুলোই শুক্র ও শনিবারের ছুটি।

ডিসেম্বর মাসে মোট ছুটি ছিল ১৯ দিন। এর মধ্যে সরকারি ছুটি ১ দিন। অবকাশকালীন ছুটি ৮ দিন। শুক্র ও শনিবারের ছুটি ১১ দিন।

সব মিলে গত বছর (২০২৩ সালে) মোট ১৮১ দিন ছুটি ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ।

এদিকে বিচারের অপেক্ষায় ৪০ লাখ মামলা। এত মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বছরে প্রায় ৬ মাস ছুটির বিষয়টি আইনজীবীরা দেখছেন নানাভাবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের আদালত ৪০ লাখ মামলার ভারে জর্জরিত। আমি বিশ্বাস করি পিপলস জুডিসিয়ারি ধারণাটি এমন একটি ধারণা যা সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এবং সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধিকারগুলো রক্ষা করে।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার মূল সমস্যা উল্লেখ করে তা থেকে উত্তরণের উপায় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের আদালত আজকে ৪০ লাখ মামলার ভারে জর্জরিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা রাউন্ড ব্রেকিং টেকনোলজিক্যাল ইনোভেশন সিস্টেমের উপর ফোকাস করছি এবং মামলা নিষ্পত্তির জটিলতাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি (ভ্যাকেশন) কমানো উচিত। এ জন্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল এক দশক আগে।

তিনি বলেন, বছরে প্রায় চার মাস সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক কাজ বন্ধ থাকলে মামলাজট বাড়বে, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, মামলাজট বাড়াতে দীর্ঘ অবকাশকালীন ছুটির পাশাপাশি আইনের দুর্বলতা, বিচারকদের দুর্বলতা, দক্ষ স্টাফদের অভাব, মামলা শুনানিতে অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আদালতে আইনজীবীদের বক্তব্য দেওয়া অন্যতম। খুব দ্রুত এসব সমস্যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবকাশকালীন ছুটি (ভ্যাকেশন) মামলাজট বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তবে হাইকোর্টের সাবেক একজন বিচারপতির মতে, ভ্যাকেশন না থাকলে বিচারপতিরা রায় লেখা ও গবেষণা কাজে সময় পাবেন না।

এআইএম