images

আইন-আদালত / সাক্ষাৎকার

‘জনগণ যাতে ন্যায়বিচার বঞ্চিত না হয় সেই প্রচেষ্টা থাকবে’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক

১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম

আইনজীবীদের সর্বোচ্চ ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে এবার ক্ষমতাসীন দলের প্যানেল থেকে সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট শাহ মনজুরুল হক। নানা নাটকীয়তার পর এই নির্বাচনের ফলাফলে তিনিসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থীরা। আর সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপিপন্থী প্যানেলের আইনজীবীরা।

আইন পেশায় প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ার হলেও সুপ্রিম কোর্ট বারে এবারই কোনো পদে অধিষ্ঠিত হলেন শাহ্ মনজুরুল হক। আইনজীবীদের উন্নয়নে কাজ করা, আদালতে ন্যায়বিচারের পরিবেশ নিশ্চিত করা, বারের নির্বাচনকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসাসহ নানা প্রসঙ্গে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা মেইলের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম মল্লিক

ঢাকা মেইল: আপনি ইতঃপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট বারের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না, নতুন দায়িত্ব নিলেন। সামলাবেন কীভাবে?

শাহ্ মনজুরুল হক: দেখুন, পূর্বে দায়িত্বে থাকার কোনো ইস্যু এখানে নেই। আমি এই কোর্টে ২৫ বছর ধরে প্র্যাকটিস করছি এবং ভালোভাবে প্র্যাকটিস করছি। আমি সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছি বিপুল ভোটে। আইনজীবীরা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। বিশ্বাস রেখেছেন। তাদের আস্থার জায়গা হিসেবে আমি নির্বাচিত হয়েছি। তাদের আশাগুলো পূরণের চেষ্টা করব।

আরও পড়ুন

এক-এগারোর সময় রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার জন্য লড়েছি

ঢাকা মেইল: বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ন্যায়বিচারের প্রশ্নে এক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী থাকবে?

শাহ্ মনজুরুল হক: দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। আমরা চেষ্টা করব, অন্তত আমার কমিটি চেষ্টা করবে বার এবং বেঞ্চের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে সেটা আরও বাড়াতে। জনগণ যাতে কোনোভাবেই ন্যায়-বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই প্রচেষ্টা চালাব।

ঢাকা মেইল: আপনি সরকার সমর্থিত আইনজীবীদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত। আসলে এক বছরে উন্নয়নমূলক কাজ করা কতটুকু সম্ভব?

শাহ্ মনজুরুল হক: এক বছরে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়, এটা সত্য। সেখানে দুই/তিন বছর লেগে যায়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, উন্নয়নমূলক কাজগুলো শুরু করতে হয়। যে শুরু করে দিয়ে যাবে তার ভূমিকাটাই অনন্য হয়ে থাকবে। পরবর্তী সময়ে যারা কমিটিতে আসবেন তারা সেটি কন্টিনিউ (নিয়মিত) করবেন। এটাই স্বাভাবিক। সেই সুফলটা সাধারণ আইনজীবীরা পাবেন। কিন্তু কেউ যদি এক বছর মনে করে কাজ শুরু না করলে তো কখনোই কাজ শুরু হবে না। ইতঃপূর্বেও যারা সম্পাদক হয়েছেন, তারা কিন্তু অনেক কাজ করেছেন। আমরাও করতে চাই।

ঢাকা মেইল: নির্বাচনের আগে আপনি আশ্বাস দিয়েছিলেন বড় একটি ভবন করে দেবেন। সেটা কবে নাগাদ শুরু হবে?

শাহ্ মনজুরুল হক: বিল্ডিং করাটা আমার নির্বাচনী ইশতিহারের প্রথম দফা। আমি মনে করি, বিল্ডিংয়ের কাজ আমরা শুরু করতে পারব এবং করব। জায়গা দেখে রেখেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থেকে এলে আমি দায়িত্বভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করব। বিশেষ করে মাননীয় আইনমন্ত্রী, তারপর আমাদের বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ যারা নেতারা রয়েছেন, সবার সাথে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। দ্রুত কাজ শুরু করব। সার্বিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি আধুনিক বিল্ডিং হবে।

Sah-monjur

ঢাকা মেইল: নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। সেক্রেটারি হিসেবে এগুলো নিয়ন্ত্রণে আপনার কোনো ভূমিকা থাকবে কি?

শাহ্ মনজুরুল হক: গত দুইবার বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এবার যে বিশৃঙ্খলাটা হয়েছে সেটার কিন্তু কোনো ভিত্তি নেই। এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এটা সবাই স্বীকার করে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরে ভোট গণনা হয়নি। ভোট গণনার আগেই একজন সেক্রেটারি প্রার্থী জোর করে ভয় দেখিয়ে তার পক্ষে ঘোষণা নিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনকে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে ঘোষণাটা নেওয়া হয়। এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই। চরম ভিত্তিহীন একটা দাবি করলেন উনি। বেআইনি দাবি করলেন। করার পর আমাদের নির্বাচন কমিশন উনাকে বললেন, প্রার্থী নেই বিধায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উনাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। এটারও কোনো ভিত্তি নেই। ইলেকশন কমিশনার যিনি ছিলেন আমাদের সাব কমিটির প্রধান, উনি বলেছেন আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘোষণা নিয়েছে, আমি দিয়েছি। কিন্তু এটার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ ইলেকশন হয়েছে, ভোট আছে। ভোট গণনার আগে এই ঘোষণার কোনো মূল্য নেই। পরবর্তী সময়ে ভোট গণনা হয়েছে। আপনাদের সামনেই। সাংবাদিকরা সবাই উপস্থিত ছিলেন। সেই অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা করা হয়েছে। সুতরাং এবারের নির্বাচনে ভোট হয়েছে সুষ্ঠুভাবে এবং সেইটা আমরা করতে পেরেছি। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। ভোট গণনাতেও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা।

আরও পড়ুন

দায়িত্ব গ্রহণে না করার সুযোগ নেই, তবে পুনর্নির্বাচন হলে খুশি হব: খোকন

ঢাকা মেইল: সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন চলাকালে এবার বহিরাগত অনেকেই এসেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

শাহ্ মনজুরুল হক: এটা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সুপ্রিম কোর্ট বারের যারা সদস্য তাদের ছাড়া কারও আসার কথা না। এবার বহিরাগতরা কীভাবে ঢুকল সেটা আপনারা দেখেছেন। সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে এবারের নির্বাচনের দিন তারা সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করেছে। সামনের নির্বাচনে এরকম সিচুয়েশন আসবে না। তারপরেও যদি এ ধরনের কোনো ইস্যু আসে, সেটা আমরা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করব।

এআইএম/জেবি