images

আইন-আদালত / সাক্ষাৎকার

বিসিএস ক্যাডার হয়েও ওকালতি পেশা বেছে নেন তিনি!

আমিনুল ইসলাম মল্লিক

০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম

images

প্রবাদ আছে সরকারি চাকরি যেন সোনার হরিণ। বাস্তবতাও তাই। শত প্রতিকূলতা ঝড়-ঝাপটা যতই আসুক না কেন সুন্দর জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দেয় সরকারি চাকরি। এজন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত পরিশ্রম করে উত্তীর্ণ হন বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায়।

পিএসসির ৯ম ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপত্র পান সহকারী জজ হিসেবে, কিন্তু নিয়োগপত্র পকেটে রেখেও চাকরিতে যোগ দেননি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ। কিন্তু কেন? তাহলে কী পেশার স্বাধীনতা ও নিজের পছন্দের চাকরিতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন?

সাদামাটা ও স্বাধীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি নেওয়া এই আইনজীবী ধাপে ধাপে শেষ করেছেন আইন জগতের অনেক অধ্যায়। বিশেষ করে সংবিধান। সিভিল ক্রিমিনাল রিটসহ নানা আইনি জটিলতা সমাধানে তার ভূমিকা সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে আলোচিত।

সিনিয়র-জুনিয়রসহ সব আইনজীবীর কাছেই তিনি অতুলনীয়। কারণ হচ্ছে তিনি সুপ্রিম কোর্টের অনেক আলোচিত-সমালোচিত মামলায় অংশ নিয়েছেন। সফলতার সঙ্গে সেগুলো পরিচালনা করেছেন। অনেক মামলাতেই আদেশ পেয়েছেন নিজের পক্ষে।

জজ নিয়োগ পেয়েও তিনি কেন আইনজীবী হলেন, চট্টগ্রামে না পড়ে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেন, আর কোন বয়সে উকিল হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ইত্যাদি বিষয়ে ঢাকা মেইলের কাছে স্মৃতি চারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মো. অজিউল্লাহ।

তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মেইলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম মল্লিক

ঢাকা মেইল: উকিল হতে হবে এমন স্বপ্ন কিভাবে এলো?

মো. অজি উল্লাহ: ছোট বেলায় আমি আমার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে পড়ালেখা করেছি। ওই সময় আশ-পাশে দেখতাম দুই একটি সাইনবোর্ড। সেগুলো হচ্ছে আইনজীবীর সাইনবোর্ড। এসব সাইনবোর্ডের নিচে লেখা থাকতো এলএলবি অথবা এলএলএম।
 
তখন মনে হতো এইসব ডিগ্রি মনে হয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পড়ালেখার মাপকাঠি। মনে মনে চিন্তা করি সব পড়ালেখা শেষ করে এলএলবি পড়ব। ব্যস, সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগাতে থাকি। তবে পড়ালেখা শেষ করে নয়, ইন্টার পড়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই আইনে। স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি এই প্রতিষ্ঠান থেকেই।

ঢাকা মেইল: জজ না হয়ে উকিল হলেন কেন?

মো. অজি উল্লাহ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। ৯ম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাই সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের। কিন্তু চাকরি জীবন পরাধীন, অন্যের কথা মতো চলতে ফিরতে হয়। স্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকে না। নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক ও পারিপার্শিক অবস্থায় চলতে নানা প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়। এজন্য চাকরি না করে স্বাধীন পেশা ওকালতিতে আসি।

ঢাকা মেইল: ওকালতিতে আসার পেছনে কাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন?

মো. অজি উল্লাহ: আমাদের এলাকার উচ্চ শিক্ষিত একজন ভদ্রলোকের পরামর্শ নিয়েছিলাম। তিনি সরকারের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উনি আমাকে বলেছিলেন চাকরি কেন করবা? স্বাধীন পেশার কথা চিন্তা করো। ভালো করবা। কারণ জজ হলে নির্ধারিত বেতন ও একটি গণ্ডির মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারবা না। ইনকামও কম হবে। আর ইনকাম কম হলে মনে করো খরচও করতে পারবা না। এজন্য স্বাধীন পেশা ওকালতি গুরুত্বপূর্ণ।

তার অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন চাকরি না করে। স্বাধীন পেশায় চলে যাও। শুধু উনিই নন, সে সময় আমাদের এলাকার অনেকেই ভালো মানের আইনজীবী ছিলেন। তারা জেলা জজ আদালতে ওকালিত করতেন। তাদের একজন আমাকে বললেন স্বাধীন পেশা ও বেশি অর্থ কামাতে আইনজীবী হওয়ার বিকল্প নেই। বেশি বেশি আয় উপার্জন করতে পারবেন। মানুষের পেছনে ভালো করে খরচ করতে পারবেন। তখন মনে হলো এটাই সেরা। আমি স্বাধীনভাবে চলতে চাই। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আর মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে অর্থের বিকল্প নেই। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আইনজীবী হবো। সেই থেকে ওকালিত পেশা চালিয়ে যাচ্ছি।

ঢাকা মেইল: আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন কত সালে? 

মো. অজি  উল্লাহ: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২-৮৩ সেশনে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই ১৯৮৯ সালের ৩ এপ্রিল।

ঢাকা মেইল: কত বছর পর সুপ্রিম কোর্টে ওকালতি করার পারমিশন পান?

মো. অজি উল্লাহ: দীর্ঘ ৪ বছর ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করার পর ১৯৯৩ সালের ২৭ জুন আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ওকালতি করার পারমিশন পাই।

ঢাকা মেইল: ওকালতিতে কত বছর কাটালেন, আরও কতদিন এই পেশায় থাকতে চান? 

মো. অজি উল্লাহ: আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবত ওকালতি করছি। এই মুহূর্তে আমি আপিল বিভাগের দুই তারকা আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছি। আমি আজীবন আইন প্রফেশনে থেকে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের উপকার করে যেতে চাই।

উল্লেখ্য, এই আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করার পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়েছেন আইনজীবী সমাজের। নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে। তার জন্মভূমি ফেনীতে তিনি গড়ে তুলেছেন মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।

এআইএম/এএস