images

আইন-আদালত

ডেঙ্গু নিয়ে হুঁশ ফেরেনি উচ্চ আদালতের আদেশেও

আমিনুল ইসলাম মল্লিক

১০ জুলাই ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

দেশব্যাপী ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে ডেঙ্গু। ঢাকায় ডেঙ্গু ব্যাপক মাত্রায় দেখা গেলেও ঢাকার বাইরে এত রোগী আগে কখনও দেখা যায়নি। চট্টগ্রামে করোনা মহামারির মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। সবমিলে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ডেঙ্গু। অথচ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে কয়েক বছর আগেই সতর্ক করা হয়েছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে। কিন্তু কাজে আসেনি।

২০২০ সালের ১১ মার্চ এমন সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন আদালত। এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ডেঙ্গুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল যেন মশক নিধন সঠিকভাবে করা হয়। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বুঝে আদালত দুই সিটির আইনজীবীকেও সতর্ক করেছিলেন।

ওই সময় ছিল করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যদি কোনোভাবে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন মানুষের শেষ জায়গাটিও থাকবে না— এমনটাই বলেছিলেন আদালত। বলা হয়েছিল, মশা নিধনে মনোযোগী হন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করার দরকার তাই করেন। জরুরি ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ নেন।

বিমানবন্দরে মশক নিধনে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে বিমানবন্দরে মশা মারতে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশা মারতে সিভিল এভিয়েশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ সব পক্ষকে বসে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিটটি করেছিলেন অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।

ওই সময় আদালত সিটি কর্পোরেশনকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে কিন্তু মশা কেন মারতে পারছেন না। বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন তানভীর আহমেদ। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ রুল দেন হাইকোর্ট। রুলে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী, দর্শনার্থীসহ অন্যদের মশার উপদ্রব থেকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

এরমধ্যে বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর-প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেসব খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ফেব্রুয়ারিতে ফের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশনা দিতে সম্পূরক আবেদন করেন রিটকারি আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

ডেঙ্গু বা যেকোনো মশা নিধনে রিটের সর্বশেষ অবস্থান কি

ডেঙ্গু বা সাধারণ মশা নিধনে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি হবে দুই-একদিনের মধ্যে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতিও নিয়েছেন রিটকারি আইনজীবী।

জানতে চাইলে আইনজীবী তানভীর আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকার মশক নিধনে আমাদের মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট অনেকবার তাগাদা দিয়েছেন। সতর্ক করেছেন। আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। যার কারণে আমরা মশা নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি। হাসপাতালে শত শত লোক ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।

এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করছে। চলতি জুলাইয়ের প্রথম আট দিনে এই রোগের প্রকোপ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। চলতি মাসের এই কয়েক দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। 

আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এজন্য তারা জরুরিভিত্তিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।

এআইএম