আমিনুল ইসলাম মল্লিক
০১ মে ২০২৩, ০৪:২৭ পিএম
আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ১৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা শ্রম দেওয়ার বিধান চালু হয়েছিল আজকের এই দিনে। তবে কর্মঘণ্টা কমানো হলেও নানা সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন শ্রমিক। অনেক সময় মালিকরাও আইনের তোয়াক্কা করেন না। এ কারণে মামলাও হয়, যার সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। তবে মামলা হলেও সেগুলো নিষ্পত্তি করতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর।
বিচারক শূন্যতা, আদালতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি, সমন জারিতে দেরি, জবাব দাখিলে আইনজীবীদের বারবার সময় নেওয়াসহ নানা কারণে শ্রম আদালতে বছরের পর বছর ধরে এসব মামলা ঝুলে থাকে। যার ফলে ঝুলে যাচ্ছে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারও।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য- মামলার তুলনায় আদালত ও বিচারকের সংখ্যা খুবই কম। ফলে একেকটা আদালতের বিচারকের দায়িত্বে প্রায় ৫ হাজার মামলা পড়ে। এ কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে সময়ও লাগে বেশি।
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারলে শ্রম আদালতে ঝুলে থাকা এসব মামলার সংখ্যা কমবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিচারকের সীমাবদ্ধতা ও এই সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শ্রম আদালতের সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান। ঢাকা মেইলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম মল্লিক।
ঢাকা মেইল: কোন শ্রেণির শ্রমিক শ্রম আদালতে বেশি মামলা করতে আসেন?
ড. শাহজাহান: প্রান্তিক শ্রেণির শ্রমিক, করপোরেট হাউজ থেকে চাকরিচ্যুত কিংবা বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিক এখানে মামলা বেশি করে থাকেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন অফিসের ক্লার্ক, অফিস সহকারীও রয়েছে।
ঢাকা মেইল: একজন শ্রমিক মামলার খরচ কীভাবে যোগান?
ড. শাহজাহান: আমরা জানি শ্রমিকরা গরিব। সামান্য কিছু অর্থ উপার্জনের আশায় তারা ঘাম ঝরিয়ে শ্রম দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে কিছু অর্থ পান। তারা ঝামেলায় পড়লে মামলা করতে আসেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, গরিব অসহায় শ্রমিকদের মামলা করতে অর্থের যোগান দেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা।
ঢাকা মেইল: আপনার বিচারিক জীবনে শ্রমিকদের মামলা নিষ্পত্তি করতে কোন চ্যালেঞ্জগুলো বেশি আসতো?
ড. শাহজাহান: এক কথায় বলব- সঠিক সময়ে বিচার নিষ্পত্তি করতে পারিনি। কারণ সারাদেশে শ্রম আদালতের সংখ্যা কম। বিচারক কম। লোকবল কম। ঢাকায় কমপক্ষে ২০টি শ্রম আদালত থাকা দরকার। সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হচ্ছে একেকটা কোর্টে ৩ থেকে ৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। একজন বিচারকের পক্ষে এত মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না। এ জন্য ঢাকাতেই শ্রম আদালত বাড়ানো দরকার অন্তত ২০টি।
ঢাকা মেইল: মামলা নিষ্পত্তিতে কী ধরনের পরামর্শ দেবেন?
ড. শাহজাহান: রাজধানী ঢাকায় বেশি মানুষের বসবাস, শ্রমিকও বেশি। এ জন্য এখানে কমপক্ষে ২০টি আদালত স্থাপন করা দরকার। আর বড় জেলাগুলোতে একটি শ্রম আদালত থাকা দরকার। মিল কারখানা বেশি হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কের মধ্যে কোনো অবনতি হলে তখন মামলা হচ্ছে। এজন্য মামলা নিষ্পত্তি করতে আদালত বাড়াতে হবে। বিভাগীয় শহরে একটি করে অ্যাপিলেয়েট ট্রাইব্যুনাল থাকা দরকার। এছাড়া সারাদেশের জন্য এখন শ্রম আদালত আছে ১০টি। তবে আরও তিনটি আদালত করার কথা আছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর আর কুমিল্লায়।
উল্লেখ্য, অসহায়-দরিদ্র শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দিতে ২০১৩ সালে ঢাকার শ্রম আদালত ও ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে পৃথক শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে গত মার্চ পর্যন্ত বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে তাদের। সবমিলিয়ে চলতি বছর সারাদেশে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের মাধ্যমে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ২৭ হাজার ৭৩৮ জন শ্রমিক।
এআইএম/আইএইচ