আব্দুল কাইয়ুম
২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম
দেশের ইসলামি রাজনীতিতে আলোচিত নাম মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির। কওমি মাদরাসাভিত্তিক আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর এই আলেম আওয়ামী লীগ আমলে একাধিকবার কারাভোগ করেছেন। জুলাই বিপ্লবপরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশজুড়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই নেতা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট, মোর্চা বা নির্বাচনি সমঝোতার যে আলোচনা চলছে, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল নিয়ে নির্বাচনি যে মোর্চা গঠিত হয়েছে সেখানে আছে মাওলানা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও। তবে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নেও তার নাম উঠে আসছে বারবার। বিএনপি তার জন্য আসন ফাঁকা রেখেছে বলেও গুঞ্জন আছে। আগামী নির্বাচন, দলের অবস্থান, নিজের প্রার্থিতা, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ, সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জসহ নানা প্রসঙ্গে ঢাকা মেইলের মুখোমুখি হয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক: একে সালমান।
ঢাকা মেইল: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি জাতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি দলগুলো একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলাম ও আপনার দলের অবস্থান কী হবে?
মাওলানা মামুনুল হক: হেফাজতে ইসলাম দেশের আলেম সমাজের অরাজনৈতিক ঐক্যবদ্ধ একটি প্লাটফর্ম। কাজেই স্বাভাবিকভাবে হেফাজতে ইসলামের রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডা নেই। এই সংগঠনে অরাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি রাজনৈতিক দায়িত্বশীলরাও আছেন। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা রাজনৈতিক ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম আছে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রত্যেকে যার যার দলীয় প্লাটফর্ম থেকেই রাজনীতি করেন। আমি মূলত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধিত্ব করি। রাজনীতিতে আমাদের আগাগোড়াই প্রত্যাশা ছিল ৫ আগস্টের পর বিগত ফ্যাসিবাদী আমলের যারা ভুক্তভোগী এবং নির্যাতিত, সে রাজনৈতিক পক্ষগুলো, বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের অংশীজনদের মধ্যে একটা বৃহত্তর কোনো সমন্বয় এবং সমঝোতা থাকবে। সেজন্য আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছি। আমাদের সে প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে।
ঢাকা মেইল: একদিকে জামায়াতসহ আট দলের সঙ্গে আপনার দলের অবস্থান অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আপনারা ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হবেন নাকি বিএনপির সঙ্গে মিলে নির্বাচনে যাবেন?
মাওলানা মামুনুল হক: আমরা যেহেতু ইসলামি রাজনীতি করি এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হলো আমাদের রাজনীতির মূল দর্শন; সেই হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা যারা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করে, আমরা একটা জায়গায় অভিন্ন চিন্তা এবং আদর্শের ধারক। সেই অভিন্ন চিন্তার জায়গা থেকে সবসময়ই আমাদের একটা অভিপ্রায় হলো, আমরা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকামী সব রাজনৈতিক সংগঠন একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে নিয়ে নির্বাচনটাকে ফেস করব। কাজেই, সেই জায়গা থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিল এবং এখনো আছে। আরেকটি বিষয় হলো, এখন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু বিএনপি তার রাজনৈতিক একটা সেটেলমেন্টে ইতোমধ্যে চলে গেছে; বিপরীতে ইসলামি এবং আরও অন্যান্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে একটা নির্বাচনি সমঝোতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে; আমরাও আমাদের সেই বৃহত্তর চিন্তার জায়গা থেকে চাই, বাংলাদেশের সকল ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকামী দল বা ইসলামিক রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনকে ফেস করুক। আমাদের আপাতত চিন্তাটা সেদিকেই বেশি।
ঢাকা মেইল: বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি বা জোট নিয়ে আপনাদের কোনো আলোচনা হয়েছে কি? অনেক গুঞ্জন আছে। বিষয়টি পরিষ্কার করবেন কি?
মাওলানা মামুনুল হক: না, বিএনপির সঙ্গে কোনোভাবেই আমাদের আসন ভাগাভাগি বা জোট গঠনের কোনো ইতিবাচক আলোচনা হয়নি। জোট গঠন বা আসন ভাগাভাগির গুঞ্জন আসার বিষয়টি হলো- এটা বিএনপির একটা আগ্রহ ছিল বা বিএনপির এখনো আগ্রহ আছে যে, আমরা কিছু আসন সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির জোটে যোগদান করি। কিন্তু আমি যেমনটা বললাম, আমাদের এখানে কিছু আসনে সমঝোতার চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক যে আদর্শ আছে, সে আদর্শ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির শক্তিমত্তা প্রতিষ্ঠাকরণ, এটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। সেই কারণে আমরা সেটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।
ঢাকা মেইল: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপনাদের একটা আদর্শগত বিরোধ ছিল। কিন্তু এবার আপনারা অন্যান্য ইসলামি দলগুলো জামায়াতের বেশ কাছাকাছি। এটা শেষ পর্যন্ত অটুট থাকবে তো?
মাওলানা মামুনুল হক: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্যের বড় কিছু জায়গা আছে। সেই বিষয়গুলো, সেই মতপার্থক্যগুলো নিরসনে আপাতত আমরা কোনো উদ্যোগ নিইনি। আদর্শের দিকগুলো বর্তমানে আমরা কোনো আলোচনায় নিয়ে আসছি না। এই মুহূর্তে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সমঝোতার সম্ভাবনাও নেই। এখন যেটা আলোচনার মধ্যে আছে সেটা হলো, ন্যূনতম যে ঐকমত্যের জায়গা সেটাকে মূল ভিত্তি করে নির্বাচনকে মোকাবেলা করা। মূল যে বিষয়টা সেটা হলো, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা। এই ক্ষেত্রে যারা যারা পজিটিভ চিন্তা করবে তারাই একমত হবো আমরা। অন্যান্য চিন্তা-দর্শনের ক্ষেত্রে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন। এই মূল এক পয়েন্টে আমরা সবাই চাচ্ছি যে, ভোটকে আমরা সবাই একসাথে মোকাবেলা করবো। সেই চিন্তা থেকেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি আলোচনা চলছে।
ঢাকা মেইল: আপনি দলের প্রধান। আপনার ক্ষেত্রে কোনো আসন নিশ্চিত হয়েছে কি না যে, এই আসনে আমি নির্বাচন করব? অন্যান্য দলগুলোর সাথে এমন কোনো আলোচনা হয়েছে কি?
মাওলানা মামুনুল হক: আমি আমার ব্যক্তিগত নির্বাচনের বিষয়টাকে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এখনো খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। যদি জাতীয় রাজনীতির প্রয়োজনে আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়, এটা শেষ মুহূর্তে আমি চূড়ান্ত করবো। সেই ক্ষেত্রে একাধিক আসন থেকে নির্বাচন করার একটা সম্ভাবনা আছে। আমি সেক্ষেত্রে ঢাকা-১৩ আসন অথবা ঢাকা-৭ আসন অথবা বাগেরহাট-১ আসন বেছে নেব। এই তিনটি আসনই আমার দৃষ্টিতে রেখেছি। এই তিনটি আসন থেকেই আমার নির্বাচন করার মতো সামর্থ্য আছে। আমি একাধিক আসনেও নির্বাচন করতে পারি।
ঢাকা মেইল: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর থেকে আওয়ামী লীগের যে কার্যক্রম সেটার বিরুদ্ধে আপনারা এখনো পর্যন্ত শক্ত অবস্থানে আছেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে সেটা কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে বলে মনে হয় কি?
মাওলানা মামুনুল হক: এটা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার আন্তর্জাতিক একটা ষড়যন্ত্র আছে, আমরা সেটা জানি। আমরা মনে করি, জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যে গুম-খুন, মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ আওয়ামী লীগ করেছে, শুধু আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবেই করেছে তা নয় বা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে করেছে সেটাও নয়; আওয়ামী লীগের ‘টপ টু বটম’ শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সব দায়িত্বশীল এবং নেতৃবৃন্দ প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়েছিল। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের সময় সবাই, প্রতিটি ইউনিট ঘোষণা দিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছিল এবং এগুলো আন্তর্জাতিকভাবেই প্রমাণিত। কাজেই সেই ক্ষেত্রে এমন গণহত্যাকারী খুনি একটা সঙ্গবদ্ধ চক্র। তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, কোনো একটি দেশ তাদের সহজেই বিচার প্রক্রিয়া ছাড়া রাজনীতিতে এক্সেস দিতে পারে না। যদি দেওয়া হয় সেটা হবে মানবতার প্রতি ধৃষ্টতা। কাজেই এজন্য আমরা মনে করি, আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যে বিচার প্রক্রিয়া চলছে, সেই বিচার সম্পন্ন হোক। সেখানে আমার ধারণা, যদি সুষ্ঠু বিচার হয়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে একেবারে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ নেতৃবৃন্দের মধ্যে খুব অল্প মানুষই স্বচ্ছ বিচার থেকে রেহাই পাবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে তাদের দল পুনর্গঠন করতে হবে। সেটা আওয়ামী লীগ নামে হবে কি হবে না বা সেটা কীভাবে হবে সেটা তো এই বিচার প্রক্রিয়ার পরের বিষয়।
ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগকে এখনো পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ করেনি। শুধু তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এর পেছনে কোনো রহস্য আছে কি?
মাওলানা মামুনুল হক: রহস্য থাকাটাই স্বাভাবিক। এটা একটা আন্তর্জাতিক চক্র। বিশেষ করে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজনৈতিক কৌশল। দীর্ঘদিন তারা সরাসরি আওয়ামী লীগকে আমাদের দেশে মদদ দিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। কূটনৈতিক সভ্যতা বিবর্জিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ভারতই জিয়ে রেখেছে এবং এই হত্যাকাণ্ড গুম খুন ইত্যাদির মধ্যে সরাসরি ভারত সহযোগিতা করেছে। যার কারণে এখন আওয়ামী লীগের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত এই অপরাধগুলো দায় কোনোভাবে ভারত এড়াতে পারে না। সেজন্য ভারত এই বিষয়টাকে বারবার চাপ সৃষ্টি করার একটা কৌশল নিয়েছে।
ঢাকা মেইল: দেশে আওয়ামী লীগের একটা ভোটব্যাংক আছে। যে ভোটব্যাংক থেকে অনেকেই ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবে। বিভিন্নভাবে পুনর্বাসন করেও সে ভোট টানার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মাওলানা মামুনুল হক: এটা অবশ্যই একটা অশুভ লক্ষণ। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের ভোটারদের মধ্যে অনেক ভালো মানুষ আছে। সে ভোটব্যাংকে অনেক নিরপরাধ মানুষ আছে। যারা হত্যাকাণ্ডের সাথে, গুম-খুনের সাথে জড়িত ছিল না। তবে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে, তৃণমূলের নেতৃত্বের মধ্যে এমন লোক খুব কম। ভোটারদের মধ্যে প্রচুর লোক আছে। কাজেই সেই ভোটারদের সহানুভূতি অর্জন করা এটা যেকোনো দলই করতে পারে বা যেকোনো প্রার্থী এটা করবে। সেটাকে আমি খুব মন্দভাবে দেখি না। বাকি এই অজুহাতে যদি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ কেউ দেয়, তাহলে আমি মনে করি সে জুলাই বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগ ফিরে আসার চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন স্থানে নাশকতার সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সামনে তাদের এই তৎপরতা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচন বানচালের চেষ্টাও করতে পারে। এই বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
মাওলানা মামুনুল হক: এমন তো একটা চেষ্টা হবেই। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শক্তিশালী একটা সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ এবং তার দোসর কোনোভাবেই এটা চাইবে না। তবে আমার ধারণা, তারা তেমন কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, তাদের প্রধান সেই নৈতিক শক্তিই নেই। তারা নৈতিকভাবে দুর্বল। তাদের মধ্যে সেই মনোবল নেই যে, দেশের এত বড় একটা আয়োজনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সেই সামর্থ্য এখন আওয়ামী লীগের নেই। তাই যথাসময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আমি এমনটাই বিশ্বাস করি।
ঢাকা মেইল: আপনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অনেক প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনটি কতটা স্বচ্ছ ও অবাধ হবে বলে মনে করেন?
মাওলানা মামুনুল হক: নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্দীপনা এবং আগ্রহ আছে। তবে নির্বাচনটি খুব স্বচ্ছ হবে এবং স্বচ্ছ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা আসবে না, আমি এমনটা মনে করছি না। বরং এই জায়গাটায় আমি শঙ্কিত যে, নির্বাচনকে এবার প্রভাবিত করার মতো পেশীশক্তি প্রদর্শন করতে সন্ত্রাস ও কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে। এ দুটোই এবারে নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। আমার আশঙ্কা নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে। সেই ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে সরকার এখনো পর্যন্ত সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেনি। সেদিক থেকে একটা আশঙ্কা আছে।
ঢাকা মেইল: নির্বাচন নিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে, অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন কি?
মাওলানা মামুনুল হক: সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ এখানেই। সরকার প্রশাসনকে সম্পূর্ণরূপে কাঙ্ক্ষিত মানে তৈরি করতে পারেনি। জুলাই বিপ্লবের পরে যে প্রত্যাশা ছিল, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনে সরকার নিয়োগ দেবে এবং বিগত আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে একটা রদবদল আনবে; সেই জায়গাটায় কিছুটা রদবদল করেছে, কিন্তু সেটা যথেষ্ট মনে হয় না। নতুন নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে বিগত ফ্যাসিবাদ আমলে যেভাবে পুলিশকে দলীয়করণ করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে সরকার পুলিশ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেনি বলে আমি মনে করি। এজন্য নির্বাচনে সরকারের ভূমিকা নিয়েও আমি সন্দিহান।
একেএস/জেবি