মো. মেহেদী হাসান হাসিব
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেন ইতোমধ্যে চলতে শুরু করেছে। একদিকে নির্বাচন কমিশন ভোটের আয়োজন সম্পন্ন করছে, অপরদিকে রাজনৈতিক দলগুলো লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী এবারের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত দলটিকে বাইরে রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এই অবস্থায় এবারের নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে সেটা নিয়ে কারও কারও মনে সংশয় আছে।
তবে দেশের শীর্ষ রাজনীতিক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, এবারের নির্বাচনটি অন্যবারের চেয়ে বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে। সেই ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। এছাড়াও নিজ দলের অবস্থান, আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা, সামগ্রিক রাজনীতি নিয়ে ঢাকা মেইলের মুখোমুখি হয়েছেন আলোচিত এই রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মো. মেহেদী হাসান হাসিব।
মাহমুদুর রহমান মান্না: এটা সত্য নয়। বিএনপির জোট থেকে আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি— এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের দলের পক্ষ থেকে আসেনি। আসলে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক ঘটনার পর সবার মধ্যেই একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার। তবে ‘নতুন বাংলাদেশ’টা কেমন হবে, সেটি নিয়ে ধারণার ভিন্নতা আছে। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই মানছে, কিন্তু সংস্কার কীভাবে হবে— তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। আমরা সবাই মিলে আলোচনা করছি। ১৫ বছর আমরা আন্দোলনে একসাথে ছিলাম, সেখানে বিএনপি ছিল, এনসিপি বা এবি পার্টি তখন ছিল না। গণঅধিকার পরিষদ পরে এসে যুক্ত হয়েছে, এখন তারা গণতন্ত্র মঞ্চে। তাদের সাথেও আমাদের সম্পর্ক আছে, কথাবার্তা হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্না: অংশগ্রহণ মানে যদি জনগণের অর্থে বলি তাহলে নিশ্চয়ই অংশগ্রহণ। এটাকে আবার কেউ কেউ ভিন্ন কোয়ালিফিকেশন দিতে পারে। কারণ যে সরকারটা ছিল তাদের দল অনেক বড় ছিল, তারা তো পালিয়ে গেছে, তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তারা নির্বাচনের মধ্যে নেই, এখন এটাকে কেউ কি অংশগ্রহণ বলবেন, নাকি বলবেন না। আর আমার বিবেচনা যদি বলি তাহলে ওরাসহ তাদের যারা দোসর ছিল, তারা সবাই পলাতক। এমন নয় যে, সবার নামে ওয়ারেন্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জানে কী অপরাধ করেছে, এজন্য আসছে না। তিনটি নির্বাচনের পরে এবার মানুষ ভোট দিতে যাবে। ওই অর্থে এই নির্বাচনকে আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক বলে আমি মনে করি।
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমরা একা কিছু করব না। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চে আছি, সেখানেই সব রাজনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা করি। আলোচনাটা খোলা রেখেছি। যেমন জামায়াতের সঙ্গে এখনো আলোচনা করিনি, কিন্তু অন্যদের সঙ্গে করছি। যদি মনে করি, যাদের সঙ্গে আলোচনা করছি তারা আমাদের চাওয়ার বাংলাদেশ গড়ার কাছাকাছি, তাহলে একসাথে কাজ করব। আমরা সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশের পক্ষে। কে কোন জোটে আছে সেটি বড় বিষয় নয়— মানুষ ও দেশের ভবিষ্যতই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমার মনে হয়, নির্বাচনের দিন হলে কিছুটা সুবিধা হবে— ব্যয়ও কমবে, শ্রমও বাঁচবে। একই দিনে মানুষ ভোট দিতে হাজির হবে, এতে সংগঠনের দিক থেকেও সুবিধা থাকবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমার বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জে— বগুড়া-২ আসন থেকেই আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু স্থানীয়ভাবে ভাবলে হবে না। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি কমানো দরকার। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত অনেকে ভাগ বসায়— এই চক্র বন্ধ করা জরুরি। আমি চাই একটি স্বচ্ছ ডেটাবেস তৈরি হোক— যেখানে থাকবে এলাকার দুঃস্থ, বেকার, বয়স্ক নাগরিকদের তথ্য। সরকার যখন অনুদান দেবে, সেটি সরাসরি টেলিট্রান্সফারের মাধ্যমে বিতরণ হবে— এতে দুর্নীতি কমবে। জমিজমাসংক্রান্ত মামলা নিয়েও ভাবছি— যদি ভূমিব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হয়, তাহলে একনজরে জমির মালিকানা যাচাই করা যাবে। এতে সময় বাঁচবে, হয়রানিও কমবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমাদের নীতি পরিষ্কার— দরিদ্র ও নিঃস্ব মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। আমরা ইনকামভিত্তিক ডেটাবেস তৈরি করব, কার আয় কত— সেই অনুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা নির্ধারণ করা হবে। ধনী বেশি দেবে, গরিব কম বা কিছুই দেবে না। এটার জন্য একটা বিমাব্যবস্থা চালুর চিন্তা করছি। মানিলন্ডারিং বন্ধ করতে পারলে জাতীয় বাজেট দিয়েই এই কাজগুলো সম্ভব। আমরা এখন স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কাজ করছি, খুব শিগগিরই বিস্তারিত প্রস্তাব দেব।
মাহমুদুর রহমান মান্না: এটা জোটের মধ্যে আলোচনার বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, আমি নিজ দলের প্রতীকে লড়তে চাই। তবে যদি জোট ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে একক প্রতীকে যেতে চায়, তাহলে সেটা নিয়েও ভাবা যেতে পারে। আগে তো জোট প্রতীকেই নির্বাচন হয়েছে— এখন কেন বাধ্যবাধকতা দিলো, বুঝি না। আমরা এ নিয়ে আপত্তি তুলব।
মাহমুদুর রহমান মান্না: ইসি একা কিছু করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। গত ১৪ বছর যা হয়েছে, সেটি বদলানো কঠিন। তবু রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে— যাতে অন্তত একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
মাহমুদুর রহমান মান্না: এখন পর্যন্ত সব গণভোটই সরকার করেছে। এবার যদি গণভোট হয়, সেটা সরকার নয়— কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো মিলেই করতে হবে। মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব শুধু কমিশনের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও। আমরা আলোচনায় বলেছি— গণভোটে মানুষ যেন বুঝে ভোট দেয়, সেটা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
এমএইচএইচ/জেবি